odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Thursday, 4th December 2025, ৪th December ২০২৫

রেমিট্যান্স যোদ্ধা লাখো যুবকের দারিদ্র্য-থেকে-স্বচ্ছলতার করুণ গল্প; দেশে মূল্যায়নহীন, পরিবারে ভুল বোঝা প্রবাসীরা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১ December ২০২৫ ১৮:৪০

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১ December ২০২৫ ১৮:৪০

বিশেষ প্রতিবেদন :

দারিদ্র্য এবং বেকারত্বের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে এদেশের লাখো যুবক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমান। কখনও বৈধ পথে, কখনও বা অবৈধ উপায়ে বন-জঙ্গল, মরুভূমি পেরিয়ে, এমনকি জাহাজের ড্রামে লুকিয়ে জীবনের বাজী ধরেন।

এই কঠিন যাত্রায় অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুও ঘটে। তবুও তাদের চোখে থাকে একটাই স্বপ্ন: দিন বদলানোর স্বপ্ন।
এই আত্মত্যাগের ফলে সত্যিই দিন বদল হয়। তাদের পরিবারে ক্রমে সচ্ছলতা ফিরে আসে, ঘরে হাসির ঝলক দেখা যায়। কিন্তু যিনি এই সুখ নিয়ে এলেন, সেই প্রবাসীর জীবন কিন্তু বদলায় না।

 কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে অবহেলা
আপনজনহীন প্রবাসে তাদের জীবন কাটে একাকীত্বে। বেশিরভাগ সময় ঈদের ছুটি মেলে না, পরিবারের সাথে ইফতার করার সুযোগ হয় না। ডিউটির ফাঁকে কোনমতে ইফতারী সেরে নেন তারা। অসুস্থ হলে সেবা করার মতো কেউ থাকে না। তবুও মাস শেষ হলেই তারা নিয়মিত পরিবারের জন্য কষ্টার্জিত টাকা পাঠান। কিন্তু তারা যে কী অসীম যন্ত্রণা সহ্য করে এই অর্থ পাঠাচ্ছেন, তা যেন বাবা-মা, ভাই-বোন বা অন্য আপনজনেরা বেশিরভাগ সময়ই অনুভব করতে পারেন না।


প্রবাসী ভাইয়ের পাঠানো সেই কষ্টার্জিত টাকায় ভাই-বোনেরা দামী ফোন হাতে নিয়ে অহংকার করে বেড়ায়। অন্যদিকে, বাবা সেই টাকা দিয়ে জমি নিজের নামে কিনে পরে সকল ভাই-বোনের নামে লিখে দেন, যা ইসলাম ধর্মমতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

টাকা পাঠানোর যন্ত্রে পরিণত
একসময় প্রবাসী যেন পরিবারের কাছে কেবল 'টাকা পাঠানোর মেশিনে' পরিণত হন। যদি কোনো কারণে সময়মতো টাকা পাঠাতে না পারেন, তবে যেন তার দোষের সীমা থাকে না। তার সমস্ত কষ্ট, ত্যাগ ও পরিশ্রমের প্রতিদানকে সবাই অস্বীকার করে বসে।


পরিবারের কথা ভেবে প্রবাসী যখন স্ত্রীকে দেশে রেখে যান, তখন স্ত্রীকে নানা সামাজিক সমস্যায় পড়তে হয়। আবার বর্তমান মোবাইলের যুগে অনেক প্রবাসী স্ত্রী পরকীয়ার কারণে সংসার ভেঙে দিয়ে ভেগেও যান। প্রবাসে থেকেও তাদের মানসিক চাপ বাড়তে থাকে।

দেশের অর্থনীতিতে মূল ভিত্তি, তবুও মূল্যায়নহীন
এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই হলো আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি ও চালিকাশক্তি। অথচ, আশ্চর্যজনকভাবে কোথাও যেন তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না।

বিমানবন্দরেও তাদের নানাভাবে নাজেহাল হতে হয়। সারাজীবন দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠিয়ে প্রবাসে জীবন কাটিয়ে আসার পর দেশে এসে অনেক প্রবাসী রিক্ত হস্তে ঘোরেন, পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরাগভাজন হন।


প্রবাসীরা হাজার মাইল দূরে থাকলেও তাদের মন সবসময় পড়ে থাকে এই দেশেই। তারা বাংলাদেশকে তাদের হৃদয়ে ধারণ করে, আর এদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে নীরবে সংগ্রাম করে চলে। সরকারের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের উচিত তাদের এই অসামান্য ত্যাগকে স্বীকৃতি ও যথাযথ সম্মান জানানো।

Shahidia  Begum 

Content creator





আপনার মূল্যবান মতামত দিন: