ঢাকা | শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

আপনারাও রোজাদার ভাইদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, আমাদের ধর্মেও এ ধরনের নির্দেশনা রয়েছে :বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৮

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৮

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারাও রোজাদার ভাইদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, আমাদের ধর্মেও এ ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। আপনাদের পক্ষ থেকে রোজাদার ভাইদের জন্য যতটুকু করার তা করার চেষ্টা করবেন।”

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান চাহিদার তুলনায় বেশি থাকায় রমজানে এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি ব্যবসায়ীদের বলেন, “ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, পরিবহন খরচ এবং বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারেও তার প্রভাব পড়ে। কিন্তু এবারের রমজানে এ ধরনের কোনো সঙ্কট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

bdnews24
 

নিত্যপণ্যের মজুদ চাহিদার চেয়ে বেশি আছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আসন্ন রোজার মাসে কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নেই।

আসন্ন রোজা ও ঈদুল ফিতরের সময় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে রোববার সচিবালয়ে ব্যবসায়ীসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ দেশজ উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানির ওপর নির্ভর করে। রমজানে নিত্যপণ্যের যে চাহিদা দেশে আছে, তার চেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে।

“পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় এবার কোনো ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হবে না, মূল্যও বাড়বে না।”

উৎপাদক, আমদানিকারক, পরিবেশক, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে চাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, খেঁজুরের বাজার স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে বলে মন্ত্রী আশা করছেন।

রোজার মাসে ইফতারের আয়োজনের জন্য বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ওই সময় প্রতি বছরই দাম বাড়ে। ওই সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে মোটা অংকের মুনাফা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সভায় জানানো হয়, দেশে পুরো বছরে সাড়ে ১৭ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের চাহিদা থাকে। এর মধ্যে রোজার মাসেই লাগে আড়াই লাখ টন।

গত বছর দেশে ভোজ্য তেলের উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন। আমদানি করা হয় ২৯ লাখ দুই হাজার মেট্রিক টন তেল। আর গত আট মাসে ১৪ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে বলে জানানো হয় সভায়।

সারা বছর দেশে চিনির চাহিদা রয়েছে ১৯ লাখ মেট্রিক টন; এর মধ্যে রোজায় তিন লাখ মেট্রিক লাগে। এই চাহিদা মেটাতে গত বছর ১৭ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছিল।

এর বিপীরতে গত আট মাসে ৩ লাখ ৬৫ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৬২ টন।

রমজান মাসে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ছোলার প্রয়োজন হয়। আরা সারা বছর ছোলার চাহিদা রয়েছে এক লাখ মেট্রিক টন। গত আট মাসে এক লাখ ৯৮ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ টন। প্রতি মাসে গড়ে যে চাহিদা থাকে, রোজা ও কোরবানির সময় তার চেয়ে দেড় থেকে দুই লাখ টন বাড়তি পেঁয়াজ লাগে। 

সভায় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার কথা বলা হলেও ঠিক কি পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে মজুদ আছে তা জানানো হয়নি।

তোফায়েল বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘বন্ধুসুলভ’ সম্পর্ক রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তার ভাষায়, জোর করে কখনও কিছু অর্জন করা যায় না।

তিনি জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বাজার তদারক করা হয়। দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল, বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধির প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

“ফলে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে যাতে এ বছর রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি না হয়।”

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান চাহিদার তুলনায় বেশি থাকায় রমজানে এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি ব্যবসায়ীদের বলেন, “ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, পরিবহন খরচ এবং বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারেও তার প্রভাব পড়ে। কিন্তু এবারের রমজানে এ ধরনের কোনো সঙ্কট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

চাঁদ দেখা সাপক্ষে আগামী ১৭ মে থেকে বাংলাদেশে রোজা শুরু হতে পারে।

বৈঠকে ব্যবসায়ীরা লাইটারেজ জাহাজ সঙ্কটের কথা তুলে ধরে পণ্য পরিবহনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব জাহাজ ব্যবহার করতে দেওয়াসহ কয়েকটি দাবি তুল ধরেন। মন্ত্রীও ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ টেরিফ কমিশনের চেয়ারম্যান জহিরউদ্দিন আহমেদ, টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সালেহ মো. গোলাম আম্বিয়া, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মফিকুল ইসলাম লস্কর, আমদানি ও রপ্তানি অধিদপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রক এ আর এম নজমুস ছাকিল, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

রড ও সিমেন্টর মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্ধারণে বাংলাদেশ স্টিল অ্যাসোসিয়েশন ও সিমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নাছির উদ্দিন, রিহাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন ছাড়াও বাংলাদেশ স্টিল অ্যাসোসিয়েশন, সিমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

তবে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে সেখানে কিছু বলা হয়নি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: