ঢাকা | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ব্রণ সমস্যায় স্বেচ্ছায় মুখে জোঁক!

Admin 1 | প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০১৭ ১৯:৫৫

Admin 1
প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০১৭ ১৯:৫৫

জোঁকের কথা চিন্তা করলেই ভয়ে গা ছমছম করে অনেকের। রক্ত চোষা জীব হিসেবে বেশ দুর্নাম আছে এদের। এরা এমনভাবে মানুষের শরীরে বসে রক্ত শুষে নেয় যে, মানুষ তা অনুভবই করতে পারে না। রক্ত শোষা শেষ হলে ক্ষত স্থানে জ্বালা ধরলে মানুষ বুঝতে পারে তার শরীর থেকে রক্ত ঝড়ছে। এই ভীতিকর জীবটি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে চর্মরোগের চিকিৎসায়। অনেকেই চর্মরোগের চিকিৎসায় জোঁকের ব্যবহার শুনে ভয়ে শিউরে উঠবেন। কিন্তু সত্যি সত্যি জোঁক ব্যবহার করে চর্মরোগের চিকিৎসা দিচ্ছে ভারতের ছত্তিশগড়েরর জিআই রোডের একদল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। সেখানকার হাসপাতালে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই চিকিৎসা।

leech in face india

বর্তমান সময়ে ব্রণ সমস্যা নিয়ে তরুণ-তরুণীরা বড় দুশ্চিতায় পড়েন। নানা ধরনের প্রসাধনী ও ওষুধ খেয়েও ব্রণ দূর করতে পারেন না। ফলে দুশ্চিন্তায় ‍নির্ঘুম রাত কাটে তাদের । রাত জাগার ফলে ব্রণ সমস্যা আরো বাড়তে থাকে। উঠতি বয়সের এই ব্রণ সমস্যার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে জোঁক ব্যবহার করে। চিকিৎসকরা বলছেন, 'জোঁক মানব দেহ থেকে দূষিত রক্ত শুষে নিয়ে বিশুদ্ধ রক্তের প্রবাহ বাড়ায়। এতে অনেক ধরনের চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।'

 

ভারতের ছত্তিশগড়ের একটি হাসপাতালে জোঁক ব্যবহার করে চিকিৎসা দেন ডাক্তার উত্তম কুমার নির্মলকর। তিনি জানান, জোঁকের লালায় হিপেরিন, কেলিন এব‌ং বেডলিন নামের রাসায়নিক থাকে। এগুলি ব্রণের মতো চর্মরোগ সারাতে সাহায্য করে। যাঁরা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ব্রণের উপরে ছেড়ে দেওয়া হয় জোঁক। জোঁক দূষিত রক্ত শুষে নিতে শুরু করে। পরিণামে সংশ্লিষ্ট অংশে শুদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে। ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ধরে চলে এই রক্তশোধন প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে মোটামুটি চার সপ্তাহের অর্থাৎ প্রায় এক মাসের চিকিৎসায় ব্রণ সম্পূর্ণ নির্মূল হয়। চিকিৎসা চলাকালীন মুলেঠি, যষ্টিমধু, মুখক্রান্তি, ঘৃতকুমারী, চন্দনের মতো ভেষজ উপাদান রোগীর মুখে প্রয়োগ করা হয়। এতে রোগীর ত্বক আরো কোমল ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

 

শুধু ব্রণ নয়, জোঁকের সাহায্যে এই হাসাপাতালে সারানো হচ্ছে টাকের সমস্যাও। এর জন্য প্রথমে জোঁকগুলিকে হলুদ গোলা জলে ছেড়ে রাখা হয়। এতে জোঁকের রক্তশোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর পর রোগীর মাথার চুল কামিয়ে ফেলে টাকপড়া অংশে ছেড়ে দেওয়া হয় জোঁক। সেই অংশের দূষিত রক্ত জোঁক শুষে নেয় এবং চুল ওঠার উপযোগী নিউট্রিশন সঞ্চারিত হয়। ফলে নতুন করে চুল গজায়।

 

এই অভিনব পদ্ধতির চিকিৎসা নিতে রোগীরা বেশ ভীড় করছেন ভারতের ছত্তিশগড়ের ওই হাসপাতালে। জোঁক দেখে ভয় করছে না? এমন প্রশ্নে উত্তরে রোগীরা জানালেন, চিকিৎসা চলার সময় তাদের চোখ বন্ধ থাকে। আর জোঁক যে কখন তাদের গায়ে বসানো হয় এবং কখন রক্ত শুষে নেয় তা তারা একবারেই অনুভব করতে পারেন না। রোগাীরা জানালেন তারা এই পদ্ধতিতে বেশ উপকার পাচ্ছেন। একজন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যেয়ে তার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্নীয়-স্বজনসহ পরিচিত যারা চর্মরোগে ভুগছেন তাদেরকে ডেকে নিয়ে যান ওই হাসপাতালে। ফলে চিকিৎসকরাও বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন।

 

চিকিৎসক উত্তমকুমার নির্মলকর বলেন, ‘আসলে জোঁকের মুখে এক ধরনের এনজাইম থাকে। তার সাহায্যে কোনও প্রাণীর রক্ত শোষণের সময়ে সংশ্লিষ্ট অংশটি অবশ করে দেয় তারা। তাদের শিকার তাই কিছু টেরই পায় না’ ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: