ঢাকা | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

উড়ন্ত চীনা বিমানে ভেঙে গেল সামনের কাঁচ, ঝুলছিলেন পাইলট

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৫ মে ২০১৮ ২২:১৮

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০১৮ ২২:১৮

"আমি দেখলাম সামনের কাঁচটিতে ফাটল ধরেছে। তখন জোরে একটা শব্দ হয়। তারপর দেখি আমার কো-পাইলট অর্ধেকটা বাইরে চলে গেছে।"

সৌভাগ্যবশত, কো-পাইলটের সিটবেল্ট বাঁধা ছিলো। তখন তাকে টেনে টুনে ককপিটের ভেতরে নিয়ে আসা হয়।

জরুরী অবতরণের পর বিমানটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।                              জরুরী অবতরণের পর বিমানটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

চীনের যাত্রীবাহী একটি বিমান ৩২ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই তার সামনের কাঁচটি ভেঙে গেলে সেটিকে জরুরি ভিত্তিতে অবতরণ করানো হয়।

উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে গেলে বাইরের বাতাসের চাপ বিমানের ভেতরে পাইলটের একজন সহকারীর শরীরের প্রায় অর্ধেকটা বাইরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।

পাইলট লিউ চুয়ানজিয়ান স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "মাঝ আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় ককপিটের ভেতরে হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে শব্দ হতে থাকে।"

 

এরপর বিমানের ভেতরে তাপমাত্রা ও বাতাসের চাপ দ্রুত কমে যেতে শুরু করে। সেসময় বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও নিচে পড়তে থাকে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এক সময় সহকারী পাইলট বিমানের বাইরের দিকে ঝুলতে থাকে।

"ককপিটের ভেতরে যা কিছু ছিলো তার সবই বাতাসে ভাসতে থাকে। আমি রেডিওতে কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না। বিমানটি এতো জোরে কাঁপতে লাগলো যে আমি কোন মিটারও পড়তে পারছিলাম না," বলেন তিনি।

সিচুয়ান এয়ারলাইন্সের এই বিমানটি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের চংকিং থেকে যাচ্ছিল তিব্বতের লাশা অভিমুখে।

বিমানটি তখন মাঝ আকাশে, ৩২,০০০ ফুট উপরে। যাত্রীদেরকে তখন সকালের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছিল। হঠাৎ করেই সেসময় বিমানটি ২৪,০০০ ফুট উপরে নেমে আসে।

"আমরা জানতাম না কি হয়েছে। কিন্তু আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। অক্সিজেনের মাস্ক নিচে নেমে আসে। কয়েক সেকেন্ডের জন্যে মনে হচ্ছিল যে বিমানটি হঠাৎ করেই নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সেটা স্থির হয়ে যায়," একজন যাত্রী চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাকে একথা বলেছেন।

বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, সহকারী পাইলট তার হাতে চোট পেয়েছেন। তার মুখের বিভিন্ন জায়গায় কেটে গেছে। বিমানটি হুট করে নিচে নামতে থাকায় আরো একজন ক্রু সদস্য তার কোমরে চোট পেয়েছেন।

বিমানটি নিচে নেমে আসতে থাকলে অক্সিজেন মাস্ক ঝুলতে থাকে যাত্রীদের মাথার উপরে।               বিমানটি নিচে নেমে আসতে থাকলে অক্সিজেন মাস্ক ঝুলতে থাকে যাত্রীদের মাথার উপরে।

এরপর পাইলট ১১৯জন যাত্রীকে নিয়ে বিমানটিকে দক্ষতার সাথে চেংডু শহরের বিমান বন্দরের রানওয়েতে নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। যাত্রীদের অনেককে পরে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তাদের মধ্যে অনেকেই পরে অন্য একটি বিমানে করে লাশার দিকে উড়ে গেছেন বলে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে।

 

এই ঘটনার পর সোশাল মিডিয়াতে লোকজন পাইলট মি. লিউর প্রশংসা করছেন। #ChinaHeroPilot হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং করছে চীনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম সিনা ওয়েইবোতে। ১৬ কোটি মানুষ ততোক্ষণে এই খবরটি পড়েছে এবং প্রায় কুড়ি লাখ মানুষ তাতে মন্তব্য করেছে।

অনেকেই পাইলটকে পুরষ্কার দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন, বিমানের ভেতরে নিরাপত্তা বাড়াতে।

একজন লিখেছেন, "এরকম একটা ঘটনা কিভাবে ঘটতে পারলো? অনুসন্ধান করুন এবং এর জন্যে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এই ঘটনাটিকে একটি উদাহরণ হিসেবে নিয়ে এরকম ব্যবস্থা করুন যাতে এরকম আর না ঘটতে পারে।"

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে উড়ন্ত একটি বিমানের জানালা ভেঙে গেলে ভেতরের একজন যাত্রী বাইরে দিকে চলে যেতে থাকে। তখন তাকে টেনে ধরে রাখা হয়। পরে তার মৃত্যু হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের সামনের কাঁচ ভেঙে যাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বজ্রপাত কিম্বা কোন পাখির সাথে আঘাত লেগেও এরকম হতে পারে। তবে পুরো উইন্ডস্ক্রিন উড়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।

bbc



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: