
বাংলাদেশে অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে র্যাব-পুলিশের অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ঢাকাসহ দেশটির বিভিন্ন জায়গায় আরও অন্তত ১৪জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এই অভিযানে নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে এখন ১১৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
গ্রেফতারের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। সারাদেশে প্রায় দশ হাজার সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করার কথা পুলিশ বলছে।
তবে অভিযানে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তা থামছে না।
অপরাধ বিজ্ঞানীদের অনেকে মনে করেন, 'বন্দুকযুদ্ধ', 'ক্রসফায়ার' বা 'এনকাউন্টার' এ ধরণের ব্যবস্থায় সাময়িকভাবে লাভ হচ্ছে বলে মনে হতে পারে।
কিন্তু অপরাধ দমনে স্থায়ীভাবে সেভাবে প্রভাব ফেলবে না।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচনে আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে এই অভিযান চালাচ্ছে বলে তাঁর ধারণা।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং সরকারের অনেকে বলছেন যে, এই অভিযানে ব্যাপক জনসমর্থন তারা পাচ্ছেন।
তবে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন অপরাধ বিজ্ঞানী সুব্রত ব্যাণার্জি মনে করেন, "এ ধরণের অভিযান সমাজের ক্ষুদ্র পর্যায়ে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে এবং সমাজের সেই অংশ সাময়িকভাবে সমর্থন করতে পারে।"
কিন্তু সমাজের বৃহত্তর অংশ নেতিবাচক ভাবেই দেখবে বলে তাঁর ধারণা।
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করছেন একটু অন্যভাবে।
তাঁর মতে, "সমাজে যখন অপরাধ ব্যাপকহারে বেড়ে যায় এবং এর কোন প্রতিকার হয় না। তখন সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিকভাবেই অপরাধীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোন পদক্ষেপে খুশি হয়।"
"এমন পরিস্থিতির কারণেই এখন মাদক বিরোধী অভিযানে হতাহতের ঘটনায় সমাজের একটা অংশ সমর্থন করছে বলে মনে হচ্ছে। সমাজের এই দিক বিবেচনা করলেও দিনের শেষে কথিত বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা সরকারের জন্য নেতিবাচক হবে।"
অন্যদিকে, যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সন্দেহভাজনদের নিহত হওয়ার ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে তাদের উপর গুলির পর পাল্টা গুলি চালানোর তাদের যুক্তি দিচ্ছে।
আর প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদনসহ আইনগত ভিত্তি থাকার কথাও তারা বলছে।
তবে অপরাধ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, কথিত বন্দুকযুদ্ধ এবং নিহত হওয়ার ঘটনা লম্বা সময় ধরে অব্যাহত থাকলে, তখন মানবাধিকার প্রশ্নে সরকারকে নেতিবাচক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।
সহযোগী অধ্যাপক সুব্রত ব্যাণার্জি বলেছেন, "অপরাধ বিজ্ঞান বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে কোনভাবে সমর্থন করেনা। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় আসবেই। এছাড়া এই অভিযানে যারা নিহত হয়েছে, তাদের পরিচয় যতটুকু সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। তাতে পাতি ব্যবসায়ীরাই নিহত হচ্ছে বা ধরা পড়ছে। রাঘব-বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।"
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মনে করেন, "লম্বা সময় ধরে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটলে তখন অভিযানে পরিচালনাকারীদের অনেকের রাজনৈতিকসহ অনেকরকম উদ্দেশ্য কাজ করে। সেদিকে এগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারে।"
তিনি মনে করেন, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের অভিযানে টেকসই কোন সমাধান হয়নি।এই দেশগুলো বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল।
bbc
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: