ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে এমন এক বিতর্কিত হিন্দু সন্ন্যাসী যোগী আদিত্যনাথকে - যিনি তার মুসলিম-বিরোধী কথাবার্তার জন্য সুপরিচিত। 'সুযোগ পেলে প্রত্যেক মসজিদে গৌরী গণেশের মূর্তি বসানোর' কথাও একবার বলেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে বিপুল বিজয় পায় ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি। তা ছাড়াও এ নির্বাচনকে আরো দেখা হচ্ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি সমর্থনসূচক এক গণরায় হিসেবে।
যোগী আদিত্যনাথ শনিবার সন্ধ্যায় লখনৌতে ভারতীয় জনতা পার্টির বিধায়ক দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।
কট্টর হিন্দুত্ববাদী অবস্থান এবং মুসলমান বিরোধী মন্তব্যের জন্য ভারতের রাজনীতিতে পরিচিত এই হিন্দু সন্ন্যাসী। উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর থেকে পাঁচবার পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। এখনও তিনি সংসদ সদস্য।
গত শনিবার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হলেও গত এক সপ্তাহ ধরেই ভারতের রাজনীতিতে চর্চা চলছিল যে কে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। দলিত ও ব্রাহ্মণ নেতাদের নাম আলোচিত হচ্ছিল এতদিন, কিন্তু হঠাৎ করেই এই হিন্দু সন্ন্যাসীকে নেতা নির্বাচিত করা হয় আজ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বি জে পি-র সভাপতি অমিত শাহ দিল্লিতে ডেকে এনে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেন যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে।
সংবাদদাতাদের উদ্ধৃত করে বিবিসি বলছে,এই নিয়োগ রাজ্যের মুসলিমদের উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে। গোরখপুরের এক মন্দিরের প্রধান, যোগী আদিত্যনাথের সন্ন্যাসপূর্ব জীবনের নাম অজয় সিং বিস্ত।
প্রায় কুড়ি বছর আগে যুবক এই সন্ন্যাসী গোরখপুর অঞ্চলের রাজনীতিতে প্রথম পা রাখেন এক ছাত্র বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে। তার জনপ্রিয়তা হিন্দু যুব সমাজের মধ্যে যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে, ততই যোগী আদিত্যনাথ তার কট্টর অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করতে শুরু করেন। বারে বারেই তিনি এমন সব মুসলমান-বিরোধী ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী মন্তব্য করে সংবাদ শিরোনামে এসেছেন।
সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনী প্রচারের সময়েও যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন যে রাজ্যের সমাজবাদী পার্টির সরকার উন্নয়ন করেছে শুধু কবরস্থানগুলোর। কিন্তু বি জে পি সরকার এলে অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গেই রামমন্দিরও প্রতিষ্ঠা করবে। গতবছর জুন মাসেও তিনি ওই রামমন্দিরের প্রসঙ্গে বলেছিলেন, "যেখানে অযোধ্যার বিতর্কিত স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার থেকে কেউ আটকাতে পারে নি, তো মন্দির তৈরী করা কে আটকাবে।"
২০১৬ সালের অক্টোবরে যোগী আদিত্যনাথের আরেকটি বিতর্কিত মন্তব্য ছিল বকরি ঈদকে কেন্দ্র করে। তিনি বলেছিলেন, "মূর্তি বিসর্জন দেওয়ার সময়ে সবার মনে হয় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, কিন্তু বকরি ঈদের দিন যে হাজার হাজার নিরীহ পশু কেটে ফেলা হয় কাশীতে, ওই সব পশুদের রক্ত যখন সরাসরি গঙ্গায় গিয়ে পড়ে, তখন দূষণ হয় না?"
বিবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: