ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

গাজিপুর সিটিকর্পোরেশন নির্বাচন বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া ভালোই চলছে

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০১৮ ১৫:৫০

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০১৮ ১৫:৫০


নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর ঘণ্টা তিনেক পর ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয়-১ কেন্দ্রের (৩৭২ নম্বর কেন্দ্র) প্রিজাইডিং অফিসার মো. আমজাদ হোসেন  বলেন, “কেন্দ্রে কিছু লোক জোর করে প্রবেশ করায় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে।”

পাশের কেন্দ্র খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয়-২ (৩৭৩ নম্বর কেন্দ্র) এ অনিয়মের কারণে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাসুদুল হক।

তিনি বলেন, “দুটি কেন্দ্রে সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি ভালো হলে আবার শুরু হবে।”

এদিকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম জয়দেবপুর মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী এবং বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই মাদ্রাসায় কেন্দ্র আছে মোট চারটি। বেলা ১১টার দিকে সেখানে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কোনো পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি।

বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হান্নান মিয়া হান্নুর পোলিং এজেন্ট রাকিবুল হাসান প্রান্ত অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থীর লোকজন তাদের বের করে দিয়েছে।

“সকালে ধানের শীষের এজেন্টরা ছিল। পরে সকাল সোয়া ৯টার দিকে নৌকার লোকজন এসে বলে তোমাদের থাকার দরকার নেই। চলে যাও। পরে আমরা চলে আসি।”

রাকিবুল হাসান প্রান্ত ১৬৯ নম্বর কেন্দ্রের চার নম্বর বুথের দায়িত্বে ছিলেন। ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মল্লিক বাবুকে কেন্দ্রের ভেতর ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সেলফিও তোলেন।

এই মাদ্রাসার একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এটিএম মহিবুল ইসলাম  দাবি করেন, “সব প্রার্থীরই পোলিং এজেন্ট আছে।”

কয়েকটি বুথে পোলিং এজেন্ট না দেখার বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, “তারা এখন কোথায় গেছে বলতে পারব না।”

৫ নম্বর বুথে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট বাবু তার পোলিং এজেন্ট কার্ড রেখেই কেন্দ্র ত্যাগ করেন। অন্য পোলিং এজেন্টরা বলতে পারছেন না তিনি কোথায় গেছেন।

বিএনপির সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হান্নান মিয়া হান্নু বলেন, “আমাকেসহ পোলিং এজেন্টদের পুলিশ ধাওয়া দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বহিরাগতরা এখানে অবস্থান করছে।”

অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওই কেন্দ্রের সামনে দায়িত্বরত পুলিশের মোবাইল টিমের ইনচার্জ মেহেদী হাসান বলেন, “তারা ভোটার ছিল না। বহিরাগত বাচ্চাকাচ্চা ছিল, এজন্য আমরা ধাওয়া দিয়েছি।”

বাগবাড়ি হাক্কানিয়া সালেহীয়া আলীম মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. সালা উদ্দিন জানান, দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তার কেন্দ্রে বেলা পৌনে ১১ টা থেকে ৪৫ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়।

“কাউন্সিলর দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে কেন্দ্রে ভোট বন্ধ রাখতে হয়। এক প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা চালায়। আমরা তার আগেই পুলিশের সহায়তায় তাদের রুখে দিই। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সাড়ে ১১টায় ভোটগ্রহণ আবার শুরু হয়েছে।”

এদিকে মোগরখাল জামেয়া আরাবিয়া নূরিয়া আলহাজ্জ মকবুল আহমেদ মাদ্রাসা (কেন্দ্র নম্বর ১১৪) কেন্দ্রে নারী ভোটারদের শুধু সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যালট সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভোটার।

বেলা ১১ টার পর এ কেন্দ্রের ৬ নম্বর ভোট কক্ষে ভোট দিয়ে মিসেস শীলা হিসেবে পরিচয়দানকারী এক ভোটার  বলেন, “আমাকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সালমা আক্তার শুধু নারী কাউন্সিলরের ব্যালট দিয়েছেন; মেয়র ও সাধারণ কাউন্সিলরের ব্যালট দেননি। একটি ভোট দিয়ে আমি বের হয়ে এসেছি।”

একই রকম অভিযোগ করেন শাহনাজ আকতার নামের আরেক ভোটার। এই মাদ্রাসার দুটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের দাবিতে ভোটাররা মিছিলও শুরু করে।

জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “একটু সমস্যা হয়েছিল। কোনো সমস্যার কারণে হয়ত এমনটা হয়েছে। হয়ত বুঝতে পারেনি। আবার শুরু করছি; এখন সবাই সব ব্যালট পাবে।”

মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র নম্বর ১১২) পুরুষ কেন্দ্রে মেয়র পদে সিল মারা ব্যালট সরবরাহ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একজন ভোটার বলেছেন, তাকে নৌকা প্রতীকে সিল মারা ব্যালট দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কাউন্সিলরের জন্য আলাদা ব্যালট সরবরাহ করা হয়েছে।

এ কেন্দ্রের একটি বুথে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রার্থীর এজেন্ট মিলে এ কাজ করেছে অভিযোগ করেন ওই ভোটার।

লাইনে অপেক্ষমাণ ভোটার ইমান আলী ও মজিদ সরকার জানান, বেলা ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ব্যালট সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। ফলে তাদের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার ড. হাসিনুল কবীর কামালী বলেন, “আমাদের ব্যালট রয়েছে। পোলিং অফিসাররা দেয় না বা ব্যালট নাই- এমন কথা ঠিক না। ১০০ করে ব্যালট ইস্যু করা হয়; হয়ত বিলম্বের কারণে অভিযোগ করছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত সবাইকে ব্যালট দেওয়া হবে; ভোটও দিতে পারবে।”

তবে সিল মারা ব্যালটের বিষয়ে তিনি কোনো উত্তর দেননি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: