ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘স্যার স্যার এদিকে আসেন। একটা পাওয়া গেছে, ডেট নাই।’

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০১৮ ২৩:০৫

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০১৮ ২৩:০৫

 সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৩৮টি মামলা দেয় শাহবাগ এলাকার ট্রাফিক পুলিশ। আর ডিএমপির পুরো রমনা বিভাগে মামলা হয়েছে তিনশরও বেশি। এসব মামলার অধিকাংশ ছিল– চালকের লাইসেন্স না থাকা, লাইসেন্স থাকলেও মেয়াদ না থাকা বা গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না থাকার মামলা।


মামলা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্টেদের এভাবেই ডেকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছিল স্কুল- কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। যেসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বা চালকের লাইসেন্স নেই বা নবায়ন করা হয়নি তাদেরকে ধরে নিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করছে তারা। আর শিক্ষার্থীদের ধরিয়ে দেওয়া চালক ও গাড়িরগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) দিনভর শহবাগ মোড়ে এমনটিই চলতে দেখা গেছে।




সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা ১১টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলনে নামে ছাত্রছাত্রীরা। রাস্তার মাঝে বসে স্লোগান ও বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি একদল শিক্ষার্থী ব্যস্ত ছিল চলমান যানবাহনের কাগজ পরীক্ষায়। তারা যাচাই করছিল রাস্তায় নামা গাড়িগুলোর বৈধ কাগজপত্র আছে কি-না। আবার কাগজ থাকলেও সেগুলো নবায়ন করা কি-না। যখনই কোনও গাড়ির বা চালকের কাগজে সমস্যা পেয়েছে তখনই সেই গাড়িটি আটক করে নিয়ে গিয়েছে ট্রাফিক পুলিশের কাছে। কাগজ ঠিক না থাকলে ট্রাফিক পুলিশকে বলছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে। শাহবাগে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও সারাদিন ব্যস্থ ছিলেন গাড়ি আটক ও মামলা দেওয়ার কাজে। তবে বেলা সাড়ে ৩টার পর তাদেরকে আর শাহবাগ এলাকায় দেখা যায়নি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, আমরা গাড়ি ধরে আনছি কিন্তু মামলা দেওয়ার জন্য বিকালে কোনও ট্রাফিক পুলিশকে পাইনি। তারা ইচ্ছে করে এই এলাকা থেকে চলে গেছে।

মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজের ছাত্র শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা সকাল থেকেই গাড়ির কাগজ চেক করছিলাম। পুলিশও আমাদের ধরে নিয়ে আসা গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। কিন্তু বিকালে আর পুলিশকে পাওয়া যায়নি। শাহবাগে বিকাল সাড়ে ৩টার পর কোনও ট্রাফিক পুলিশ ছিল না। আমরা বিকালে অনেকগুলো গাড়ি আটক করেছিলাম। এর মধ্যে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের গাড়িও ছিল। কিন্তু আমরা আটক করলেও বিকালে কোনও পুলিশ না থাকায় মামলা হয়নি। আমরা কোনও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যকে খুঁজে পাইনি।’

শিক্ষার্থীরা জানান, সারাদিনে আমরা অনেকগুলো গাড়ি ধরে পুলিশকে দিয়েছি। আমরা চাই বৈধ কাগজ নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চলুক। যারা অবৈধ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই। অবৈধ গাড়ি বা চালক রাস্তায় চলাচল করলে নিরাপদ সড়ক আমরা কখনই পাবো না। তাই জনগণের মাঝে সচেতনা সৃষ্টি ও আমাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে গাড়ির কাগজ চেক করে অবৈধদের পুলিশে দিয়েছি। আমরা চাই ভবিষ্যতেও পুলিশ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কাজ করবে।

ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ শাহবাগ জোনের টিআই (ট্রাফিক ইন্সপেক্টর) সারোয়ার জানান, ছাত্ররা আন্দোলনের নামার পর যান চলাচল বন্ধ ছিল। এর মধ্যে যেসব গাড়ির বৈধ কাগজ ছিল না তাদের আটক করেছে ছাত্ররা। আমরা এদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৩৮টি মামলা দিয়েছি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিএমপি রমনা বিভাগে তিনশরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিসি মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত সাড়ে তিনশ’র বেশি মামলা হয়েছে। রাতে সঠিক সংখ্যাটা জানানো যাবে।’

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় গত চার দিন ধরে লাগাতার রাজপথ আটকে বিক্ষোভ করছে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। বৃহস্পতিবারও সারাদিন রাস্তা আটকে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: