ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

'দু'দিন না খেয়ে থাকবো কিন্তু ছাত্রদের মাইর খাইতে পারবো না' বাংলাদেশে রোজগার বন্ধ পরিবহন শ্রমিকদের, একজন বলছেন,

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০১৮ ১৯:০২

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০১৮ ১৯:০২

  

ঢাকার রাস্তায় যানবাহন (ফাইল ছবি)। গত পাঁচদিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক শ্রমিকরাঢাকার রাস্তায় যানবাহন (ফাইল ছবি)। গত পাঁচদিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক শ্রমিকরা

বাংলাদেশে গত উনত্রিশে জুলাই দুইটি বাসের প্রতিযোগিতায় বিমানবন্দর সড়কে দুই জন শিক্ষার্থী নিহত হবার পর থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ষষ্ট দিনের মতো আজো চলছে।

এর মধ্যে কোনো ধরণের ঘোষণা ছাড়াই গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকায় বাস চালানো প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা।

মালিকেরা বলছেন পরিবহন শ্রমিকেরা পরিস্থিতিতে বাস চালাতে আগ্রহী না।

কিন্তু ঢাকার গণ পরিবহনগুলোতে যে শ্রমিকেরা দিন হিসেবে বেতন পান, গত পাঁচদিন ধরে রোজগার বন্ধ থাকায় কিভাবে চলছে, তাদের জীবনযাপন?

জানা গেছে ঢাকার গণ পরিবহনগুলোতে বেতন হয় দৈনিক মজুরির হিসেবে। সাধারণত বাসচালক ও হেল্পার বা চালকের সহকারী যেকোনো রুটে ট্রিপ প্রতি তিনশত টাকা পায়। এর মধ্যে চালক পান ১৮০ টাকা, এবং চালকের সহকারী পান ১২০টাকা।

অর্থাৎ যে বাসটি মিরপুর থেকে সদরঘাট যাবে, সেটি একবার মিরপুর থেকে সদরঘাট, এবং সদরঘাট থেকে মিরপুর ফিরে আসলে চালক ও সহকারী মিলে ৩০০ টাকা পাবে।

 

মিরপুর ১২ নম্বর থেকে সদরঘাটে যায় বিহঙ্গ পরিবহন। গত চার বছর ধরে এ রুটে বাস চালান মো: জসিম উদ্দিন সাগর।

তার সঙ্গে কথা হয় মিরপুর ১২ নম্বরের কাছে দুয়ারী পাড়া মসজিদ সংলগ্ন বস্তির ঘরে। সেখানে পাশাপাশি কয়েকটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে বাস করেন বেশ কয়েকজন ড্রাইভার ও হেল্পার।

মিঃ সাগর বলছেন, বাস বন্ধ থাকায় পাঁচদিন ধরে রোজগার বন্ধ, ধারকর্য করে চলতে হচ্ছে। তারপরেও নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বেশি শঙ্কিত।

"আমরা গাড়ি চালাইতে চাই, কিন্তু জীবন অনেক দামি। দুইদিন পাঁচদিন না খেয়ে থাকতে রাজি আছি, কিন্তু রাস্তায় ছাত্রদের মাইর খাইতে পারবো না। আর ড্রাইভাররা পাড়াপাড়ি করে কেন, যাত্রী পাওয়ার জন্য। আগে যেখানে তিন-চারটা কোম্পানি ছিল, এখন সেখানে একই রুটে ১০/১৫টা কোম্পানির বাস চলে।"

তিনি দাবি করেছেন, আর দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে খুবই বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন তিনি ও তার পরিবার।

বিহঙ্গ পরিবহনের সুপারভাইজার বশিরউদ্দিন এবং তার স্ত্রী বিউটি বেগম
বিহঙ্গ পরিবহনের সুপারভাইজার বশিরউদ্দিন এবং তার স্ত্রী বিউটি বেগম

তার প্রতিবেশী একজন বাসচালকের মা রেনু বেগম। ঘরের দরজায় হতাশ বসে থেকে তিনি বলছিলেন, সংসারে ইতিমধ্যেই টানাটানি শুরু হয়ে গেছে, আর অবধারিতভাবে অশান্তিও শুরু হয়ে গেছে বাসায়।

"পোলায় আমার সকাল বেলা বউ এর সাথে ঝগড়াঝাঁটি কইরা বাইর হইছে, পয়সা পাতি নাই, বাজার চলে না। আমার একটা নাতি হইছে কয়দিন আগে, কিন্তু তারও ঠিকমত যত্ন হইতেছে না। রোজ মারামারি, ঝগড়া-বিবাদ চলতেছে।"

ড্রাইভার এবং হেল্পারদের দাবি, তারা নিয়ম মেনেই রাস্তায় গাড়ি চালাতে চান। কিন্তু ট্রাফিক জ্যামের কারণে আগে যেখানে দিনে চার থেকে পাঁচটি ট্রিপ দেয়া যেত, সেখানে এখন তিনটির বেশি ট্রিপ দেয়া যায় না। ফলে একজন চালক নিজের আয় বাড়ানোর জন্য তাড়াহুড়া করেন।

এই বস্তিতে দশ ফুট বাই বারো ফুট আয়তনের একটি কামড়ার ভাড়া সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা।

সঙ্গে গ্যাস আর বিদ্যুতের আলাদা বিল।

ফলে শ্রমিকেরা বলছেন, বর্তমান রোজগার দিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্টকর তাদের।

তবে, গণ পরিবহনগুলোতে লাইসেন্স ছাড়া অনেক ড্রাইভার বাস চালান বলে স্বীকার করলেন অনেকেই।

তাদের যুক্তি হলো---প্রতি রুটে বাসের সংখ্যা বেশি হবার পরেও অনেক সময় ড্রাইভার সংকট হয়, সেকারণে লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ দেন অনেক মালিক। যারা অনেক সময় একটু কম বেতনেও কাজ করতে রাজি হন - বলছিলেন মিরপুর এক নম্বর থেকে আজিমপুর রুটে চলা মেট্রো সার্ভিস পরিবহনের একজন বাস চালক মামুন হাওলাদার।

ছাত্র বিক্ষোভের জেরে বন্ধ হয়ে গেছে বাস চলাচল
ছাত্র বিক্ষোভের জেরে বন্ধ হয়ে গেছে বাস চলাচল

"লাইসেন্স ছাড়া অনেক সময় গাড়ি চলে। কারণ দেখা যায় অনেক সময় ড্রাইভার অসুস্থ, বা নাই। মালিকেরা তাদের পায় না যখন, তখন গাড়ি বসিয়ে না রেখে লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভারের হাতে দেয়। অনেকে আছে লাইসেন্স হারায় গেছে, করে নাই। কেউ আছে ডেট চলে গেছে রিনিউ করে নাই। মালিক পরিচিত তাই চাকরি পায়, এমন অনেক সিনিয়র ড্রাইভার আছে।"

এদিকে, বাসের সুপারভাইজারদেরও বেতন হয় দৈনিক হিসেবে। ফলে রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে তাদের পরিবারেরও।

বিহঙ্গ পরিবহনের একজন সুপারভাইজারের স্ত্রী বিউটি বেগম বলছেন, রোজগার বন্ধ থাকার কারণে গত কয়েকদিন ধরে সংসারে অভাবের পাশাপাশি মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। মেয়ের কলেজের বেতন আর বাড়িভাড়া আটকে গেছে। কিন্তু পয়সা চাইলেই স্বামী ঝাড়ি দেয়।

 
bbc


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: