
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নে গত ৮ আগষ্ট বুধবার রাতে আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নুরু বাউল গ্রুপ ও নাছির মেম্বার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশসহ অর্ধশত আহত হয়।
গুরুতর আহত তকবির মোল্লা (২৮) নামে এক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অস্থায় ১২ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গতকাল ১৯ আগষ্ট রোববার তিনি মারা যান।
সে উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের মোল্লাকান্দি বালুরচর গ্রামের আলী আহাম্মদ মোল্লার পুত্র। তকবির মোল্লার মৃত্যুতে ফের সংঘর্ষ ও বাড়ীঘর ভাংচুরের আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা। এনিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনাও বিরাজ করছে।
জানা যায়, গত ৮ আগষ্ট বুধবার রাতে আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নুরু বাউল গ্রুপ ও নাছির মেম্বার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। টানা দুই ঘন্টা চলে এই সংঘর্ষ। সংঘর্ষে পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত লোক আহত হয়।
এর মধ্যে টেটা বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় তকবির মোল্লা (২৮)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে দু-গ্রুপের লোকজন পুলিশের উপর হামলা চালায় এবং পুলিশের গাড়ী ভাংচুর করে। পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ী ভাংচুরের ঘটনায় সিরাজদিখান থানা পুলিশ দু-গ্রুক্ষের ৫৮জন এজাহার নামীয় আসামীসহ দুইশ’জন অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করে।
পরে দু-গ্রুপের ১৫জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাছির মেম্বার গ্রুপের মোঃ আওলাদ হোসেন বাদী হয়ে নুরু বাউল গ্রুপের বিরুদ্ধে ১০৪ জন এজাহার নামীয় আসামী ও ২০/৩০ অজ্ঞাতনামা আসামী করে সিরাজদিখান থানায় মামলা দায়ের করে।
পরে নুরু বাউল গ্রুপের মোঃ একরাম বাদী হয়ে নাছির মেম্বার গ্রুপের বিরুদ্ধে ৬০ জন এজাহার নামীয়সহ ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে পালটাপাল্টি মামলা দায়ের করে।
অপরদিকে ফতুল্লা উপজেলার বক্তবলী ইউনিয়ন, সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়ন ও দক্ষিন কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত আকবরনগর গ্রামে গত ৯ আগষ্ট বৃহস্পতিবার বিকেলে আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছামেদ আলী গ্রুপ ও রহিম হাজী গ্রুপের মধ্যে টেটা বল্লম সংঘর্ষে টেটা বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় ব্যবসায়ী জয়নাল মন্ডল।
গুরুতর আহত অবস্থায় জয়নাল মন্ডলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে ঘটনার দিন রাতেই তিনি মারা যান।
সরেজমিন গিয়ে বালুরচর বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বাজারের ইজারা নিয়ে নুরু বাউল ও নাছির মেম্বার গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ।
গত ৮ আগষ্ট রাতে টেটা বল্লম সংঘর্ষের পূর্বে নুরু বাউল ও তার লোকজন বাজারের ইজারা নিয়ে পরিচালনা করতো এবং ব্যবসায়ী ও দোকানী এবং গরুর হাটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খাজনার টাকা আদায় করতো।
গতকাল ১৮ই আগষ্ট শনিবার নাছির মেম্বার গ্রুপের লোকজন ও বালূচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আলেক চান মুন্সী ও তার লোকজন সিরাজদিখান থানা পুলিশের উপস্থিতিতে বালুরচর বাজারে গরুর হাটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাসিল কেটে টাকা কালেশন করেছেন।
বালুরচর বাজারের গরুর হাটের হাসিল কেটে টাকা কালেকশন করার দ্বায়ীত্ব পালন করেছেন সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এস. এম সোহরাব হোসেন এবং যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবুল।
ঐতিহ্যবাহী বালুরচর বাজারের গরুর হাটের হাসিলের টাকা কালেকশন একদিনে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা হয়। এই টাকা ভাগাভাগি নিয়েই যত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তকবির মোল্লা টেটা বল্লম সংঘর্ষের সাথে জড়িত ছিলেন। টেটা বিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আজকে উনি মারা গেছেন। তার পক্ষের লোক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় অন্যান্য ধারাসহ ৩০২ ধারা সংযুক্ত হবে এবং মামলার এজাহার ভুক্ত জড়িত আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: