ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

দিয়াবাড়ি খালের অস্ত্র রহস্য হয়েই থাকলো

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০১৯ ১০:৪৫

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০১৯ ১০:৪৫

স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের যে ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, আড়াই বছর হতে চললেও তার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই।

২০১৬ সালের ওই ঘটনার পর ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, ‘যারা’ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে জড়িত, তারাই অস্ত্রগুলো সেখানে রেখেছে বলে তারা ধারণা করছেন।

কিন্তু ওই ‘ষড়যন্ত্রের’ সঙ্গে কারা জড়িত, তা উদঘাটনের তেমন কোনো চেষ্টা এরপর আর দেখা যায়নি। অস্ত্রগুলো কোথা থেকে এসেছে এবং কেন আনা হয়েছে- এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে মেলেনি।

‘দেশি-বিদেশি’ ষড়যন্ত্রের গুরুতর সন্দেহের কথা বলা হলেও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় কোনো মামলা করা হয়নি। তুরাগ থানায় যে জিডি সে সময় করা হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই তদন্ত করার কথা বলছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যণ্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।

গত আড়াই বছরে তদন্তে কী জানা গেল- এই প্রশ্নে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, খুব একটা অগ্রগতি তাদের তদন্তে হয়নি।

“আমাদের ধারণা, কোনো একটি গোষ্ঠীর অস্ত্র ওগুলো। মজুদ রাখা নিরাপদ না ভেবে হয়ত তখন ওখানে ফেলে যায়। আমরা তদন্ত করছি। আশা রাখি বের করতে পারব।”

২০১৬ সালের ১৮, ১৯ ও ২৫ জুন তিন দফায় উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ি খালে পানির নিচে থাকা ১৩টি ট্র্যাভেল ব্যাগ থেকে পিস্তল, এসএমজির ম্যাগাজিন, গুলি, বেয়নেট, বিস্ফোরক জেল, ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন ধরনের ‘ইলেকট্রনিক ডিভাইস’ উদ্ধার করা হয়।

সারা দেশে একের পর জঙ্গি হামলা ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ওই ঘটনা সে সময় সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “এটি কোনো সাধারণ সন্ত্রাসীর কাজ নয়। এগুলো মজুদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত।”

পাশাপাশি উদ্ধার অস্ত্রগুলো ‘নতুন ও অব্যবহৃত’ জানিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের দিকেও আঙুল তোলেন পুলিশ কমিশনার।

তিনি বলেন, ‘নারী-শিশু হত্যায়’ জড়িত চক্রটিই ওই অস্ত্র মজুদ করেছিল বলে তাদের সন্দেহ।

অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে’ দিয়াবাড়ি খালে ওই ‘অস্ত্র ফেলার’ অভিযোগ তুলে বলা হয়, ঘটনাটি সরকারের ‘অশুভ মহাপরিকল্পনার’ অংশ।

তৃতীয় দফা অস্ত্র উদ্ধারের এক সপ্তাহের মাথায় গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেয়। এরপর দিয়াবাড়ি খালে পাওয়া অস্ত্রের কথা গণমাধ্যমে অনেকটাই হারিয়ে যায়।

পুলিশের করা জিডির বিবরণে জানা যায়, ১৮ জুন সাতটি ব্যাগের ভেতর থেকে ৯৭টি পিস্তল, ৪৬২টি ম্যাগাজিন, এক হাজার ৬০টি গুলি, ১০টি বেয়নেট, ১৮০টি ক্লিনিং রড এবং ১০৪টি স্প্রিংযুক্ত বাক্স উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার পিস্তলের মধ্যে ৯৫টি ছিল সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু বোরের, আর দুটি নাইন মিলিমিটার বোরের। গুলির মধ্যে ২২০টি সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু বোর পিস্তলের এবং ৮৪০টি নাইন এমএম পিস্তলের।

ম্যাগাজিনের মধ্যে ২৬৩টি এসএমজির হলেও কোনো সাব মেশিনগান সেখানে পাওয়া যায়নি। বাকি ম্যাগাজিনগুলো ছিল পিস্তলের।

পরদিন ওই খাল থেকে আরও তিনটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। ভেতরে পাওয়া যায় এসএমজির আরও ৩২টি ম্যাগাজিন এবং আটটি ক্লিনিং রড।

আর ২৫ জুন তিনটি ব্যাগ থেকে সাত প্যাকেট বিস্ফোরক জেল, পাঁচটি ওয়াকিটকি, দুটি বড় আকারের ট্রান্সমিটার, দুটি ফিডার কেবল, প্লাস্টিকের ২২টি কৌটায় বিভিন্ন ধরনের আইসি, ট্রানজিস্টার, ক্যাপাসিটার ও সার্কিট, ৪০টি পলিথিনের ব্যাগে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম,রুপালি ও সবুজ রঙের ৩২৫টি স্প্রিংযুক্ত বাক্স উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়েছিল, তুরাগ থানা থেকে দক্ষিণখান থানায় বদলি হওয়া কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম ১৮ জুন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে খালের পাশে বেড়াতে গেলে আকস্মিকভাবে ওই অস্ত্র-গোলাবারুদের সন্ধান পাওয়া যায়।

খালের পাড়ে নম্বরপ্লেটবিহীন একটি কালো এসইউভি এবং আশপাশে চার-পাঁচজন লোক দেখে শহিদুলের সন্দেহ হয়। খালে কেউ লাশ ফেলছে মনে করে তিনি দ্রুত ওই এলাকা থেকে দূরে সরে যান এবং ফোন করে তুরাগ থানায় খবর দেন।

পরে তুরাগ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে খালের পানিতে ট্রাভেল ব্যাগ দেখতে পায়। তবে ওই গাড়ি বা অন্য কাউকে পুলিশ সেখানে পায়নি। খালের পানিতে আরও অস্ত্র আছে কি না তা দেখতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হলে পরদিন আরও তিনটি ব্যাগ পাওয়া যায়। ছয় দিন পর ওই জায়গা থেকে কিছুটা দূরে লেকট্রনিক ডিভাইস বোঝাই আরও তিনটি ব্যাগ পাওয়া যায়।

সে সময় ছিলেন মাহবুবে খুদা। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম আদালতে অনুমতি নিয়ে রাজারবাগ অস্ত্রগারে রাখা আছে।

এতগুলো অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়নি কেন জানতে চাইলে তুরাগ থানার বর্তমান ওসি নুরুল মুত্তাকিন বলেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় কোনো আগ্নেয়াস্ত্র বা মাদক উদ্ধার হলে প্রথমে জিডিই হয়। পরে তদন্তে যদি জানা যায় আগ্নেয়াস্ত্র বা মাদক কোথায় যাচ্ছিল, তখন সেই জিডি মামলায় পরিণত হয়।

“যেহেতু পরিত্যক্ত অবস্থায় আগ্নেয়াস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়েছিল, তাই জিডি হয়েছে। কারো হেফাজত থেকে বা যদি জানা যেত যে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো ওমুকের কাছে যাচ্ছে তাহলে মামলা হত।”



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: