ঢাকা | রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্বনবীর মিরাজ জাগ্রত না নিদ্রিতাবস্থায়

Akbar | প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৪২

Akbar
প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৪২

ডেস্ক: বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে যেসকল অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল তন্মধ্যে মিরাজের ঘটনা অন্যতম। যা পবিত্র কোরআনুল কারীম এবং অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

কোরআন-হাদিসে মিরাজের ঘটনা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকায় মুসলমানরা একে বিশ্বাসের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছে। কিন্তু তা জাগ্রত না নিদ্রিতাবস্থায় হয়েছে তা নিয়ে অনেকে বিতর্ক করেন।

নবীপ্রেমিক মুসলমানরা মনে করেন, নবী (সা.) বলেছেন, মিরাজ সশরীরে হয়েছে তা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নেই। স্বপ্নযোগে মিরাজের কথা বললে কাফেরাও মেনে নিত। কারণ স্বপ্নে বা ঘুমন্তাবস্থায় পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে ঘোরা বিচিত্র কিছুই নয়।

যেহেতু মিরাজ সংঘটিত হওয়ার পরদিনই এ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বোঝা গেল এটি সশরীরেই হয়েছিল।

আর কালামে পাকে এসেছে ‘সুবহানাল্লাজি, পবিত্রতা সেই আল্লাহর আস্রা বি আবদিহি লাইলাম, রাতের কিছু অংশে তার বান্দাকে মিনাল মাসজিদিল হারামি, ইলাল মাসজিদিল আক্বসা, মসজিদে হারাম বা মক্কার মসজিদ থেকে মসজিদে আক্বসা বা বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদ পর্যন্ত।

আরবি ভাষাবিদদের কাছে ‘আব্দুন’ শব্দ সশরীরে জাগ্রত ব্যক্তিকে বোঝায়।

আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহ.) ঘটনার বর্ণনা এভাবে বর্ণনা করেন, একদা রাত্রিবেলা রাসুল (সা.)হজরত উম্মে হানী (রা.) ঘরে নিভৃতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। রাসূল (সা.) তখন তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন । এমন সময় বিস্ময়করভাবে ঘরের ছাদ ফেটে যায় এবং ছাদপথে ফিরিশতা জিবরাঈল (আ.) অন্তকুঠরিতে প্রবেশ করেন। জিবরাঈল (আ.) এর সঙ্গে অন্য ফেরেশতারাও ছিলেন। জিবরাঈল রাসুল (সা.) কে ঘুম থেকে জাগিয়ে হারাম শরিফে নিয়ে আসেন।

রাসুল এখানে এসে হাতিমে কাবায় ঘুমিয়ে যান, জিবরাঈল ও মিকাঈল (আ.) পুণরায় রাসুলকে জাগিয়ে দেন এবং ‘জমযম’ কূপের পাশে তাকে নিয়ে আসেন। সেখানে রাসুলের (সা.) বক্ষবিদারণ করে পবিত্র জমযম পানি দ্বারা তার বক্ষ মোবারক ধৌত করা হয়। অতপর একটি আরোহনের যন্ত্র বোরাক আনা হয়।

রাসুল (সা.) সে যানবাহনে আরোহন করেন। রহমতে আলমের কুদরতি বাহন বোরাক বায়ূগতিতে চলছে। যাত্রাপথে রাসুল (সা.) ইয়াসরীব নগরীতে উপস্থিত হন। জিবরাঈল (আ.) রাসুলকে পরিচয় করিয়ে দেন এটা ‘ইয়াসরিব’ উপত্যকা। আপনার হিজরতের স্থান। রাসুল (সা.) সেখানে অবতরণ করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। বোরাক চলতে থাকে দ্রুতগতিতে।

‘তুর’ পর্বতের পাদদেশে সানাই প্রান্তরে উপস্থিত হয়। জিবরাঈল রাসুলকে পরিচয় করিয়ে দেন এটা তুর পর্বত। এখানে আল্লাহপাক হজরত মুসা (আ.) নবীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এখানেই মুসা (আ.) নবুওয়াত লাভ করেছিলেন। রাসুল সেখানে অবতরণ করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। এভাবে দ্রুত গতিতে চলছে বোরাক। ক্রমেই ঈসা (আ.) এর জন্মস্থান ‘বায়তু লাহাম’ ফিলিস্তিনে উপস্থিত হন। জিবরাঈল (আ.) নবীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর জন্মস্থান। রাসূল সেখানে দু’রাকাত নামাজ পড়েন। এভাবে বিভিন্ন পয়গাম্বরদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমুহ অতিক্রম করে করে ‘বায়তুল মোকাদ্দাসে’ পৌছেন।

বায়তুল মোকাদ্দাসে পৌঁছে পূর্ববর্তী সকল নবী রাসুলদের নিয়ে মসজিদে দু’ রাকাত নামাজ পড়েন এবং তিনি নামাজের ইমামতি করেন।

বায়তুল মোকাদ্দাসে ইমামতির পর জিবরাঈল (আ.)- কে নিয়ে বোরাকের মাধ্যমে উর্ধ্বকাশে যাত্রা শুরু হয়। মুহুর্তের মধ্যেই প্রথম আসমানের প্রবেশ দ্বারে এসে উপস্থিত হন তারা। সেখানে প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) এর সঙ্গে সালাম কুশল বিনিময় করেন। এভাবে সাত আসমানে অবস্থানকারী অন্যান্য নবীদের সঙ্গে সাক্ষাত করে সালাম বিনিময় করেন, এ সময় প্রত্যেক নবীরাই বিশ্বনবীকে অভ্যর্থনা জানান।

সপ্তম আকাশের পর রাসুল (সা.) ‘সিদরাদুল মুনতাহা’ পর্যন্ত পৌছেন। তখন রাসুলে আকরাম (সা.) এমন উর্ধ্বে গমন করেন, এমনকি ‘লাওহে মাহফুজে’র ’ কলম চালনার আওয়াজ শুনতে পান। তখন জিবরাঈল (আ.) বলেন,আমার যাত্রাপথ এখানেই শেষ।

এরপর আপনার সঙ্গ দেয়ার সাধ্য আর আমার নেই। অতপর রাসুল (সা.) আল্লাহর এত কাছে চলে যান যে, আল্লাহপাক তাঁর বন্ধুকে নিবিড় সান্নিধ্য দান করেন এবং এখানেই আল্লাহর দিদার লাভ করেন। একটি পর্দার আড়াল টেনে আল্লাহ তাঁর আত্মরুপ দর্শন করান তাঁর হাবীব ‘মোহাম্মদ মোস্তফা’ (সা.) –কে।

সেখানে বিশ্বনবীকে মহান আল্লাহপাক আপ্যায়ন করান। সেখানেই রাসুল (সা.) মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে একান্ত আলাপের সৌভাগ্য লাভ করেন। এখান থেকে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের পরিবর্তে উম্মতে মোহাম্মদির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার নিয়ে আসেন। (সুত্র: সীরাতে মোস্তফা: ইদ্রীস কান্দলবী রহ.)

পবিত্র এ মিরাজ রজব মাসেই সংঘটিত হয়েছিল। রজব বরকতময় একটি মাস। রজব ও শাবান মাসদ্বয়ক রাসুল (সা.) রমজানের প্রস্তুতি মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রজব মাসকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বেশি বেশি নফল আমল, নফল রোজা, নফল নামাজসহ অন্যান্য নেককর্মগুলোর প্রতি মনোনিবেশের করা বেশি দরকার।

তবে মেরাজ উপলক্ষে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোন আমল নেই। রাসুল (সা.) রজব মাসে, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ও শাবানা ওবাল্লিগনা রামাজান’ এই দোয়া বেশি বেশি পাঠ করতেন।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: