
ডেস্ক, ১ মে(অধিকারপত্র):মোবাইল ফোন অপারেটর ‘গ্রামীণফোনে’র মোবাইলে কথা বলায় কল রেট বাড়িয়েছে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন)। এসএমপির (সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার) বিধিনিষেধের কারণে এ কল রেট বাড়ানো হয়েছে।
তবে অন্য অপারেটরদের কল রেট অপরিবর্তিত থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যে মুহূর্তে গ্রাহকরা মোবাইল ফোনের কল রেট কমানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল সে মুহূর্তে গ্রামীণফোনের কল রেট বাড়ানোর কারণে অপারেটরটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে গ্রাহকরা গ্রামীণফোন ছেড়ে অন্য অপারেটরের দিকে চলে যাবে।
নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে গ্রামীণফোনের সর্বনিম্ন কল রেটের সঙ্গে গ্রাহককে আরও ৫ পয়সা বেশি দিতে হবে। গ্রাহকরা আগে গ্রামীণফোন ব্যবহার করে সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সায় কথা বলতে পারতেন। নতুন কল রেট কার্যকর হওয়ার পর তা হবে ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে নতুন প্যাকেজ চালু করতে এখন থেকে গ্রামীণফোনকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির অনুমতি নিতে হবে। আগে এই বিধিনিষেধ ছিল না।
বিটিআরসি মঙ্গলবার এক বৈঠকে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। কল রেট বাড়ানোর বিষয়টি এবং কবে থেকে তা কার্যকর হবে তা দেশের বৃহত্তম অপারেটরটিকে চিঠির মাধ্যমে জানাবে কমিশন।
কল রেটের পাশাপাশি গ্রামীণফোনের ইন্টারকানেকশন বা আন্তঃসংযোগ চার্জও বাড়ানো হয়েছে। আগে এই চার্জ ছিল ১০ পয়সা। এখন এই চার্জ হচ্ছে ১৫ পয়সা। তবে গ্রামীণফোনে অন্য অপারেটর থেকে আসা কলের ক্ষেত্রে আন্তঃসংযোগ চার্জ আগেরটাই বহাল থাকছে। ১৭ এপ্রিল বিটিআরসিতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভায় এসএমপির কারণে গ্রামীণফোনের কল রেট বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া অপারেটরটির সেবার মান নিয়ে বাড়তি কড়া নজর রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যদি সেবার মান সন্তোষজনক না হয় তাহলে নতুন গ্রাহক বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। কমিশনের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হকসহ সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গ্রামীণফোনের ওপর আরোপ করতে ২০টি বিধিনিষেধের একটি তালিকা করা হয়। এর মধ্যে চারটি শর্ত অপারেটরটির ওপর কার্যকর করার কথা বলা হয়। শর্তগুলো হল- এমএনপিতে আসা গ্রাহক আটকে রাখার সীমা কমানো, কর্পোরেট সেবার ক্ষেত্রে এক্সক্লুসিভিটি বা একক অধিকার না রাখতে দেয়া, কল ড্রপের হার কমিয়ে দেয়া, নিজেদের সেবার প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রাখা।
এরপর বিষয়টি নিয়ে গ্রামীণফোন উচ্চ আদালতে গেলে তারা স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়াকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চায় বিটিআরসির কাছে। আইনি প্রক্রিয়া মোকাবেলার পাশাপাশি আগেরবার পুরোপুরি বিধি অনুসরণ না করায় নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করতে হয় কমিশনকে।
এর আগে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহিরুল হক সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির পাওনা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা আদায়ে আইন অনুযায়ী যা যা করা দরকার সবই করা হবে। তিনি বলেন, গ্রামীণফোন যত চেষ্টা আর যত মিথ্যা প্রচারণা চালাক না কেন, টাকা মাফ করার কোনো ক্ষমতা নেই বিটিআরসির।
টাকা আদায়ে প্রয়োজনে গ্রামীণের নেটওয়ার্ক সুইচ বন্ধ ও লাইসেন্স স্থগিত করা হবে। গ্রামীণের এনওসি বাতিল করা হবে। গ্রামীণফোনকে টাকা পরিশোধের জন্য ১০ দিনের সময় দেয়া হয়েছিল। সে সময় পার হয়ে গেছে।
আগামী বোর্ড সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিটিআরসি অফিসিয়াল সূত্রে জানা গেছে, তাদের নিয়োগকৃত অডিট ফার্মের হিসাব অনুযায়ী গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের ৪,০৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
চেয়ারম্যান বলেন, অডিট অনুযায়ী গ্রামীণফোনের কাছে প্রায় এক যুগ ধরে এই টাকা পাওনা হয়েছে। প্রতিনিয়তই সুদসহ এই টাকা বাড়ছে। এখন ১৩ হাজার কোটি টাকার ওপর প্রতিদিন ১৫% লেট ফি হিসাবে টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই টাকা পাওনা বিষয়ে অডিট কোম্পানি যথেষ্ট সময় দিয়েছে। এককভাবে অডিট হয়নি। তারা বারবার কোর্টে গিয়ে সময় নিয়েছে। কোর্ট সময় দিলে মানতে হবে। তবে টাকা তাদের দিতেই হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: