
সাংবাদিক নিজেই একজন সংবাদের বৃত্তান্ত: নড়াইলের বিভিন্ন সংগঠনের কাছে হয়েছেন মৃল্যায়িত
বুলুদাস নড়াইল সদর প্রতিনিধি: ইচ্ছার সাথে যখন চেষ্টাটা হয়ে যায় সম্পৃক্ত,স্বপ্নটা তখন একান্তে বন্দি। নড়াইলে সাংবাদিক উজ্জ্বল রায় নিজেই যেন একজন সংবাদের বৃত্তান্ত কে চেনে যেমন গ্রামের শত বয়সি বৃদ্ধ আর নড়াইল শহরের শিশু-কিশোর, যুবক, রাজনৈতিক নেতা কর্মী,সাধারন মানুষ, অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী, সাংবাদিক সহ যোদ্ধাদের তিনি এক আস্থার মানুষ। একটি মাত্র ফোন। এমনি সাংবাদিকতা জীবন নিয়ে ২৯ বছর উন্নয়ন ভাবনাতে কাজ করে যাচ্ছেন সবার প্রিয় ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব নড়াইলের সাংবাদিক উজ্জ্বল রায়। তিনি সাংবাদিক জীবনে বিভিন্ন সংগঠনের কাছে হয়েছেন ম‚ল্যায়িত। অন্যদিকে তিনি যেমন সাংবাদিককতাতে দক্ষ তেমনি উজ্জ্বল রায়, নড়াইলের সিনিয়র সাংবাদিক এস এম হালিম মনটুর কাছে উৎসাহিত হয়ে এবং তাকে সাংবাদিকদায় ওস্তাদ এর সম্মান দিয়ে ৯০ সালের দিকে সাংবাদিকতা পথে যাত্রা শুরু করেন। সাংবাদিক উজ্জ্বল রায় নিজের কথা বলতে গিয়ে এই প্রতিবেদক কে বলেন আমি সৌভাগ্যবান একজন, কর্ম জীবনে সবার ভালবাসা,সামাজিক ভাবে সম্মানিত,পারিবারিক জীবনে সুখি, আমাকে এক কথায় সুখোময় মানুষ হিসাবে রেখেছেন। এই কাজ প্রিয় মানুষটি শুভেচ্ছা জানাই সংসার জীবনে ১ টি ছেলে সন্তানের বাবা বড় সন্তান পড়া লেখা করছে। বন্ধুবর মানুষটি উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নড়াইলের নানা সমস্যা-সম্ভাবনা ও উন্নয়ন নিয়ে নানামুখী সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। সব ধরনের ভয়-ভীতি ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় কলম ধরেছে উজ্জ্বল রায়। সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলার মতো সাহস দেখিয়েছে। উজ্জ্বল রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিবরিতি প্রদান করেছেন দৈনিক যুগান্তরের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম শাহী, দৈনিক খবর পত্রিকার নড়াইল জেলা প্রতিনিধি শেখ ফসিয়ার, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক নবদিগন্ত পত্রিকার নড়াইল জেলা প্রতিনিধি মোঃ হিমেল মোল্যা, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক সমাজের কাগজ পত্রিকার নড়াইল জেলা প্রতিনিধি বুলু দাস, দৈনিক একুশে নিউজ’র জাহাংগীর সেখসহ নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সহ সভাপতি পৌর কমিশনার মাহাবুর রহমান, সহ সাধারণ সম্পাদক আকতার মোল্যাসহ ক্লাবের সকল সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
নড়াইল পুলিশ সুপার এর সভাপতিত্বে মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত
উজ্জ্বল রায় নড়াইল প্রতিনিধি: রবিবার (২৩ জুন) ২৭৪: নড়াইলে পুলিশদের সার্বিক উন্নতিকল্পে এক মাসিক কল্যাণ সভার আয়োজন করা হয়। রবিবার (২৩ জুন) সকাল ১১টায় নড়াইল জেলা পুলিশ এর পক্ষ থেকে নড়াইল পুলিশ লাইন অডিটোরিয়াম হলে এ কল্যাণ সভার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়, জানান, নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ শরফুদ্দীন, সহকারি পুলিশ সুপার, এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন (পিপিএম), নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আশিকুর রহমান, ডিআইও-১ এস এম ইকবাল হোসেনসহ, এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়, সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যাসহ ক্লাবের সকল সদস্যবৃন্দ। নড়াইলের সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন পুলিশের কাজে বাঁধা আসবেই। তাই বলে কাউকে থেমে থাকলে চলবে না। সকলকে সব বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় তবে তাকে সার্বিকভাবে সহায়তা করা হবে বলেও পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। এছাড়াও নড়াইল পুলিশের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা যে সমস্ত কল্যাণকর আবেদন করে থাকেন সেগুলিও খুব গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা হবে। মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত নড়াইল গড়ার প্রত্যয়ে সকলকে একযোগে কাজ করার আহŸান জানিয়ে পুলিশ সুপার তাঁর বক্তব্য সমাপ্ত করেন। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■ছবি সংযু
নড়াইলে পুলিশের সাপ্তাহিক মাস্টার প্যারেডে সালাম গ্রহণ ও পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার
উজ্জ্বল রায় নড়াইল প্রতিনিধি: রবিবার (২৩ জুন) ২৭৪: নড়াইলে পুলিশের সাপ্তাহিক মাস্টার প্যারেডে সালাম গ্রহণ করলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম।(বার) এ সময় তিনি নিজেই প্যারেড পরিদর্শন করলেন। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়, জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ শরফুদ্দীন, এর পরিচালনায় রবিবার (২৩ জুন) সকাল ৯টায় জেলা পুলিশ লাইন মাঠে এ প্যারেড অনুষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সালাম গ্রহণ ও পরিদর্শন । এ সময় নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম (পিপিএম) এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন (পিপিএম), নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আশিকুর রহমান, ডিআইও-১ এস এম ইকবাল হোসেনসহ, নড়াইলের সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়, সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যাসহ ক্লাবের সকল সদস্যবৃন্দ। নড়াইলে কর্মরত পুলিশের সকল ইউনিটের কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুপার সালাম গ্রহণ ও পরিদর্শন শেষে ফোর্সদের উদ্দেশ্যে বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু এ কথা পুঁথিতে নয় কাজেই প্রমাণ করতে হবে। ভালো কাজে পুরস্কার, খারাপ কাজে তিরস্কার- এ মর্মবাণী পুলিশের প্রতিটি কার্যক্রমে বহাল থাকবে। সেই সাথে যারা উক্ত অনুষ্ঠানে ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে অংশগ্রহণ করেন তাদেরকে পুরস্কৃত করেন। এছাড়াও যারা মাদকের সাথে জড়িত তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। সকলকে মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাস, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ রোধে একযোগে কাজ করার উদাত্ত আহŸান জানান। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সকলকে কঠোর নজরদারি রাখার জন্যও নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, পুলিশ ক্ষমতার বলে কাউকে কোনো প্রকার হয়রানি না করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে বলেও হুশিয়ারি প্রদান করেন। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি
নড়াইলে আমাদের স্কুলের দলনেতা কৌশিক এখন সকলের নেতা মাশরাফিবিন মর্তুজা
উজ্জ্বল রায় নড়াইল প্রতিনিধি: রবিবার (২৩ জুন) ২৭৪: নড়াইলের মাশরাফি ও রাহির স্কুলবেলা মাশরাফির সঙ্গে শরীফ শাহরিয়ার জিকো মাশরাফি বিন মর্তুজাকে আমরা কৌশিক নামেই ডাকতাম। প্রাইমারি থেকে একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি এসএসসি পর্যন্ত। মাশরাফির বাড়ি আর নানাবাড়ি আমাদের বাড়ি থেক বড়জোর তিন মিনিটের পথ। স্কুলে যাওয়া আর খেলা ধুলাসবই একসঙ্গে। লম্বা ছিপ ছিপে গড়ন আর মাথায় কোঁকড়া চুলের ছেলেটা লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী না থাকলেও মেধায় কারো চেয়ে কম ছিল না। ক্লাসে রেজাল্টও খারাপ করত না। ক্লাস সিক্সে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর দুই বন্ধু পড়লাম দুই সেকশনে, আমি ‘ক’ শাখায় আর কৌশিক ‘খ’ শাখায়। ওই সময়ে দুই শাখা আলাদা টিম করে টিফিনের সময় স্কুলের পাশে ঈদগাহ মাঠে টেনিস বল দিয়ে মেতে থাকতাম ক্রিকেট খেলায়। দুই দলের দলনেতা ছিলাম আমরা দুজন। সে সময় চাঁদা তুলে কালো কাঠের শিল্ড তৈরি করে পুরস্কার দেওয়া হতো বিজয়ী দলের হাতে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই স্যারদের হাতে মার খাওয়া শুরু। ওই সময় আমাদের স্কুলের দুইজন লুত্ফর স্যার ছিলেন। ছোট লুত্ফর স্যার অঙ্ক ক্লাস নিতেন। স্যার ক্লাসে পাঁচটি অঙ্ক দিয়ে বলতেন, ৫০ বার করে তাঁকে দেখাতে হবে। অনেকে ফাঁকি দিয়ে এক-দুই পাতা করে নিয়ে স্যারকে দেখিয়ে আনত। অনেক সময়ই স্যার সম্প‚র্ণ না দেখে প্রথম পৃষ্ঠায় সাইন করে দিতেন, মাঝেমধ্যে দু-একজনের খাতা সম্প‚র্ণ দেখতেন। একবার কৗশিক ধরা খেয়ে গেল। স্যার দেখলেন, ও এক অঙ্ক মাত্র দুইবার করেছে। স্যার ওকে বেশ মারলেন বেত দিয়ে। আমার বাড়িতে লোকজন থাকত না, তাই টিফিনে আমরা কয়েক বন্ধু আমাদের বাড়িতে চলে আসতাম। আমাদের ঘরের সঙ্গেই একটি বড় পেয়ারাগাছ ছিল, কৌশিক সবার আগে তরতর করে গাছে উঠে যেত। আমরা নিচের ডালে থাকলেও কৌশিক একেবারে ওপরের আর কোনার দিকে চিকন ডালে গিয়ে পেয়ারা পেড়ে খেত। আমাদেরও দিত। টিফিনের সময় পার হয়ে গেলেও গাছ থেকে না নেমেই বলেছে, তোরা স্কুলে যা, আমি নদীতে যাচ্ছি গোসল করতে। তখন আমরা ক্লাস এইটে পড়ি। ফাইনাল পরীক্ষা কয়েক দিন বাদেই। আমাদেরই বন্ধু পলাশ আর রুমন এসে জানাল, কাল গোবরা স্কুল মাঠে টেপ টেনিস প্রতিযোগিতা। গোবরার হয়ে আমাদের খেপ খেলতে হবে। পরদিন খেলা, আবার স্কুলেও যেতে হবে। কী করা যায়—এটা ঠিক করতে বিকেলে খেলা শেষে মিটিং হলো। সিদ্ধান্ত হলো, সকালে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে হবে, পরে স্কুল পালিয়ে খেলতে যাব। যথারীতি পরদিন কৌশিক স্কুলে এলো। স্কুলের এক পাশে আমার বাড়ি আর কৌশিকের বাড়ি অন্য পথে। স্কুলে ঢোকার আগে দুই বন্ধুর দেখা। স্কুলের সামনের রাস্তার পাশে বটগাছতলায় আজমির ভাইয়ের দোকান। কৌশিক, আমি, রুমন, পলাশ, সাজু, রাজুসহ অন্যরা স্কুলের ব্যাগ আজমির ভাইয়ের দোকানে রেখে ভ্যানে উঠে রওনা দিলাম গোবরায়। খেলা শেষে স্কুলে আসতে বিকেল প্রায় ৫টা বেজে গেছে। এদিকে কৌশিকের খোঁজে ওর মা আর মামা স্কুলের গেটে হাজির। আমাদের স্কুলে না পেয়ে আজমির ভাইয়ের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আমরা খেলতে গেছি। ভ্যানে স্কুলের গেটে পৌঁছার আগেই দেখি মাশরাফির মা বলাকা খালা লাঠি নিয়ে দৌড়ে আসছেন। মাশরাফি এটা দেখে চলন্ত ভ্যান থেকে নেমে দৌড়। একদিন আমরা ক্লাসের বাইরে স্কুলের ভেতরের মাঠে শহীদ মিনারের পাশে হৈ-হুলোড় করছি সবাই মিলে। লুত্ফর স্যার আমাদের ওই অবস্থায় দাবড়ে নিয়ে যান নতুন ভবনের তিন তলায়, তারপর রুমের দরজা আটকে ইচ্ছামতো মারলেন হাতের ডাস্টার দিয়ে। সেদিন কৌশিকসহ আমরা প্রায় সবাই স্যারের মার খেয়েছিলাম। স্কুলে আসার পর থেকেই আমরা শুধু খেলা নিয়ে বেশি ভাবতাম। এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসের ফাঁকে কিংবা ক্লাসে স্যার আসতে দেরি করলেই শুরু হতো ক্রিকেট নিয়ে আলাপ। কৌশিকের কাছে ব্যাগের মধ্যে টেনিস বল থাকত। ক্লাসের ভেতরেই ভাঙা বেঞ্চের পায়া দিয়ে ব্যাট বানিয়ে খেলা শুরু হয়ে যেত। আমাদের স্কুলের মাঠের সঙ্গেই লাগানো চিত্রাবাণী সিনেমা হল। নতুন সিনেমা এলে স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে চলে যেত ছেলেরা। তখন আমরা নাইনে পড়ি, আমাদের ক্লাসটিচার ছিলেন বিপুল পাঠক স্যার। স্কুলে প্রথম দুটি ক্লাস করেই কৌশিক চলে যায় সিনেমা দেখতে, সঙ্গে বন্ধু রাজু, প্রলয়সহ চার-পাঁচজন। পরদিন প্রথম ক্লাসে স্যারের কাছে কারা যেন নালিশ করেছিল। স্যার কৌশিককে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন—কাল কি স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলে? মিথ্যা জবাব না দিয়ে সে সত্য বলে মাথা নাড়ল, আর স্যারও মারলেন দলনেতা কৌশিককে। ক্লাস নাইনে ওঠার পর ও মানবিক বিভাগে চলে যায়, আমি বিজ্ঞান বিভাগে। আমাদের ক্লাস ভিন্ন হলেও কমন সাবজেক্টগুলোয় একসঙ্গে বসতাম। স্কুলে প্রতিদিনই নিয়ম করে আসত, এসেই আলাপ জুড়ে দিত কোথায় কোন খেলা হচ্ছে। ফুটবল আর ক্রিকেট, দুটির প্রতিই ওর টান। কৌশিকের চমত্কার বন্ধুসুলভ আচরণ আমাকে সব সময়ই টানত। স্কুলের মাঝের বেঞ্চে বসত কৌশিক, মাঝেমধ্যে আমিই প্রথম বেঞ্চ থেকে ওর কাছে গিয়ে বসতাম। দুই ক্লাসের গ্যাপে আমাদের কয়েকজনকে ডেকে কৌশিক বিভিন্ন এলাকার খেলা ও খেলোয়াড়দের গল্প শোনাত আর শোনাত ওকে ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম কে কী কিনে দিল—এইসব। ও তখন ক্রিকেটে পুরোপুরি ঝুঁকে পড়েছে। আমরা তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। দোতলায় আমাদের ক্লাসরুমটা একেবারে স্কুলের মাঠের কোনায়। মাশরাফি বসত মাঠের দিকের বেঞ্চে। ক্লাসে ইংরেজি পড়াতে এসেছেন বিপুল স্যার। স্যার অত্যন্ত গম্ভীর ও কড়া। তাঁর পড়া মুখস্থ না করে স্কুলে গেলে মার খেতে হতো। স্যার ক্লাসে ইংরেজি পড়াচ্ছেন আর মাশরাফি মাঠে ক্রিকেট খেলা দেখছে। তখন আমাদের মাঠে নিয়মিত বড়দের ম্যাচ হতো। মাশরাফি এক মনে খেলা দেখছে, আর উত্তেজনায় ছটফট করছে। স্যার ক্লাসে অমনোযোগী মাশরাফিকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘এই মাশরাফি বল তো, আমি কী পড়ালাম।’ ও তড়িঘড়ি করে বলল, ‘স্যার স্যার ছক্কা’—এই জবাবে ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠল। পরে স্যারের ধমকে আমরা আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম। আমার মনে আছে, আমরা প্রথম ক্লাস করে রোল কল হয়ে যাওয়ার পর বাথরুমের কথা বলে বের হতাম। তারপর বাথরুমের পাশের দেয়াল টপকে স্কুল পালাতাম। ছুটে চলে যেতাম কৌশিকের নানাবাড়ির পাশের বাগানে। সেখানে একটি গাছকে স্টাম্প বানিয়ে প্রতিদিন ক্রিকেট খেলতাম, আবার টিফিন পিরিয়ডে ক্লাসে ঢুকতাম, না হলে স্কুলের টিফিন খাওয়া যাবে না। স্কুলের বার্ষিক ভোজ কিংবা ঈদে মিলাদুন্নবী যেকোনো অনুষ্ঠানে আমাদের মধ্যে সে-ই সব কাজে এগিয়ে থাকত। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় আমরা যখন স্কুলের নানা বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছি, আমাদের নেতা ছিল কৌশিক। একবার স্কুলের বার্ষিক ভোজে খবর পাওয়া গেল, স্যাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে দই দেবেন না। এ কথা শোনার পর কৌশিককে বলা হলো এটা কেমন খাওয়া হবে। পরে সে আমাদের বলল, ‘চল স্যারের কাছে যাই।’ প্রধান শিক্ষক আলী আহম্মদ স্যারের কাছে দাবি উত্থাপন করা হলো। স্যার অনেক চেঁচামেচির পর দই খাওয়াতে রাজি হলেন। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি
নড়াইলে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসা আর অবহেলায় পাঁচ বন্ধুর স্বপ্ন ভঙ্গ!!
উজ্জ্বল রায় নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় ১২শ’ হাঁসের মৃত্যুতে পাঁচ বন্ধুর স্বপ্ন ভঙ্গ: হাঁসের খামার গড়ে তুলে নড়াইল পৌর শহরের মহিষখোলা-আলাদাতপুর এলাকার পাঁচজন বেকার বন্ধু একযোগে বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। খামারের দুই হাজার হাসের মধ্যে এক হাজার দুইশত হাসের আকষ্মিক মৃত্যুতে সে স্বপ্ন যেন দু:স্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। মা বাবার কাছ থেকে ধার নেওয়া ও ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা খামারের লোকসানের ঘাঁনি কিভাবে টানবেন তা ও নিয়েও রীতিমতো দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন এই পাঁচ বেকার বন্ধু। ভ‚ক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় খামারে কয়েকদিন ধরে হাসের মৃত্যু হয়েছে। জানাগেছে, নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর এলাকার গোলাম মোস্তফা (২৫) চারবছর ধরে ওমানে ছিলেন। বাড়ি আসার পর তিনি বেকার হয়ে পড়েন। বেকারত্ম ঘোচাতে তার বাল্য বেকার বন্ধুদের সাথে আলোচনা শুরু করেন। মোস্তফাসহ তার অপর চার বন্ধু মঞ্জুরুল হক, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ইমরান শেখ, মিন্টু শেখ মিলে আলোচনায় বসেন বেকারত্ম ঘোচানোর নতুন মিশন নিয়ে। সবাই মিলে সিন্ধান্ত নেন বড় আকারে একটি হাসের খামার গড়ে তুলবেন। সেই মোতাবেক মোস্তফার পতিত জমিতে হাসের খামারের কাজ শুরু করেন। বন্ধু মঞ্জুরুল হক, শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে খামারের নাম দিয়েছি। ‘ফ্রেন্ডস ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন’। হাসের খামারে সফলতার হলে আরো বেশ কিছু কর্মকান্ড করার স্বপ্ন নিয়েই আমরা কাজ শুরু করি। হাসের খামার পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর গত ৬ মে নেত্রকোনা জেলা হতে দুই হাজার হাসের বাচ্চা আনা হয়। যথারীতি হাসের বাচ্চার যতœ ও খাওয়ানোর পর বেশ বড় হয়ে ওঠে। বাচ্চার বয়স ২৬দিন হওয়ার পর ২/১টি বাচ্চা অসুস্থ্য দেখা দিলে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মারুফ হোসেনের নিকট যাই। তিনি একটি অসুস্থ্য বাচ্চা পোষ্টমর্টেম করে ওষুধ লিখে প্রেসক্রিপশন করে দেন। সেই মোতাবেক ওষুধ খাওয়ানোর পর পুরো খামার জুড়ে মড়ক শুরু হয়। হাসগুলি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে আসতে আসতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে লাগলো। পুনরায় ডাক্তার সাহেবের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওষুধ পাল্টিয়ে দেন। পরের ওষুধ খাওয়ানোর পর কিছু হাস সুস্থ্য হতে লাগলো। হাস খামারী ইমরান শেখ ও মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, ‘চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার জন্য খামারের এক হাজার দুইশত হাস মারা গেছে। এ ঘটনার পর ওই চিকিৎসককে ফোন দিলে আর ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি আমাদের খামার হতে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের দুরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার হলেও তিনি কখনোই আমাদের খামার দেখতে আসেননি। আমাদের এতো বড় ক্ষতিতে এখন যেন আকাশ ভেঙ্গে মাথার ওপর পড়েছে। আমরা বেকাররা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য খামার গড়ে তুললেও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কেউ কোন খোঁজখবর নেয়নি। আমাদের অন্তত ৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই ক্ষতির জন্য জেলা প্রাণী সম্পদক কর্মকর্তাই দায়ি।’ এ ব্যাপারে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মারুফ হোসেন দাবি করেন, নতুন খামার গড়ে তুললেও তাদের প্রশিক্ষণের অভাব থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমার কাছে আসার পর একটি হাস ময়নাতদন্ত করে ওষুধ দেওয়া হয়। পরে মোবাইলের মাধ্যমে ওষুধ পাল্টিয়ে দেই। এরপর ছুটিতে বাড়িতে চলে যাই। বাড়িতে থাকার কারনে ফোন হয়তো ধরা সম্ভব হয়নি। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে আসলেও ওই খামারের কেউ আর যোগাযোগ করেনি।’ নড়াইল পৌসভার ৩নং ওয়ার্ডের (মহিষখোলালা) কাউন্সিলর কাজী জহিরুল হক এ প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ৫ বেকার যুবক হাসের খামারটি করায় আমার পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করেছি। মাঝে মধ্যে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। কিন্তু হাসের মড়ক লাগলে প্রাণি সম্পদ বিভাগের চিকিৎসকদের দায়িত্বহীনতার কারনে প্রায় দেড় হাজার হাস মারা গেছে। আমি মনে করি এ জন্য চিকিৎসকের শাস্তি হওয়া উচিৎ। কেননা আমাদের জনগনের টাকায় সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন হয়। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মারুফ হোসেন সব সময় এসি রুমে বসে থাকেন। তিনি কাজেকর্মে আন্তরিকক নন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিবে বলে আমি আশা করি।’ উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■ছবি সংযুক্ত
নড়াইলে আমাদের স্কুলের দলনেতা কৌশিক এখন সকলের নেতা মাশরাফিবিন মর্তুজা
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল প্রতিনিধি■: (২১ জুন): ২৭৪: নড়াইলের মাশরাফি ও রাহির স্কুলবেলা মাশরাফির সঙ্গে শরীফ শাহরিয়ার জিকো মাশরাফি বিন মর্তুজাকে আমরা কৌশিক নামেই ডাকতাম। প্রাইমারি থেকে একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি এসএসসি পর্যন্ত। মাশরাফির বাড়ি আর নানাবাড়ি আমাদের বাড়ি থেক বড়জোর তিন মিনিটের পথ। স্কুলে যাওয়া আর খেলা ধুলাসবই একসঙ্গে। লম্বা ছিপ ছিপে গড়ন আর মাথায় কোঁকড়া চুলের ছেলেটা লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী না থাকলেও মেধায় কারো চেয়ে কম ছিল না। ক্লাসে রেজাল্টও খারাপ করত না।
ক্লাস সিক্সে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর দুই বন্ধু পড়লাম দুই সেকশনে, আমি ‘ক’ শাখায় আর কৌশিক ‘খ’ শাখায়। ওই সময়ে দুই শাখা আলাদা টিম করে টিফিনের সময় স্কুলের পাশে ঈদগাহ মাঠে টেনিস বল দিয়ে মেতে থাকতাম ক্রিকেট খেলায়। দুই দলের দলনেতা ছিলাম আমরা দুজন। সে সময় চাঁদা তুলে কালো কাঠের শিল্ড তৈরি করে পুরস্কার দেওয়া হতো বিজয়ী দলের হাতে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই স্যারদের হাতে মার খাওয়া শুরু। ওই সময় আমাদের স্কুলের দুইজন লুত্ফর স্যার ছিলেন। ছোট লুত্ফর স্যার অঙ্ক ক্লাস নিতেন। স্যার ক্লাসে পাঁচটি অঙ্ক দিয়ে বলতেন, ৫০ বার করে তাঁকে দেখাতে হবে। অনেকে ফাঁকি দিয়ে এক-দুই পাতা করে নিয়ে স্যারকে দেখিয়ে আনত। অনেক সময়ই স্যার সম্প‚র্ণ না দেখে প্রথম পৃষ্ঠায় সাইন করে দিতেন, মাঝেমধ্যে দু-একজনের খাতা সম্প‚র্ণ দেখতেন। একবার কৗশিক ধরা খেয়ে গেল। স্যার দেখলেন, ও এক অঙ্ক মাত্র দুইবার করেছে। স্যার ওকে বেশ মারলেন বেত দিয়ে।
আমার বাড়িতে লোকজন থাকত না, তাই টিফিনে আমরা কয়েক বন্ধু আমাদের বাড়িতে চলে আসতাম। আমাদের ঘরের সঙ্গেই একটি বড় পেয়ারাগাছ ছিল, কৌশিক সবার আগে তরতর করে গাছে উঠে যেত। আমরা নিচের ডালে থাকলেও কৌশিক একেবারে ওপরের আর কোনার দিকে চিকন ডালে গিয়ে পেয়ারা পেড়ে খেত। আমাদেরও দিত। টিফিনের সময় পার হয়ে গেলেও গাছ থেকে না নেমেই বলেছে, তোরা স্কুলে যা, আমি নদীতে যাচ্ছি গোসল করতে।
তখন আমরা ক্লাস এইটে পড়ি। ফাইনাল পরীক্ষা কয়েক দিন বাদেই। আমাদেরই বন্ধু পলাশ আর রুমন এসে জানাল, কাল গোবরা স্কুল মাঠে টেপ টেনিস প্রতিযোগিতা। গোবরার হয়ে আমাদের খেপ খেলতে হবে। পরদিন খেলা, আবার স্কুলেও যেতে হবে। কী করা যায়—এটা ঠিক করতে বিকেলে খেলা শেষে মিটিং হলো। সিদ্ধান্ত হলো, সকালে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে হবে, পরে স্কুল পালিয়ে খেলতে যাব। যথারীতি পরদিন কৌশিক স্কুলে এলো। স্কুলের এক পাশে আমার বাড়ি আর কৌশিকের বাড়ি অন্য পথে। স্কুলে ঢোকার আগে দুই বন্ধুর দেখা। স্কুলের সামনের রাস্তার পাশে বটগাছতলায় আজমির ভাইয়ের দোকান। কৌশিক, আমি, রুমন, পলাশ, সাজু, রাজুসহ অন্যরা স্কুলের ব্যাগ আজমির ভাইয়ের দোকানে রেখে ভ্যানে উঠে রওনা দিলাম গোবরায়। খেলা শেষে স্কুলে আসতে বিকেল প্রায় ৫টা বেজে গেছে। এদিকে কৌশিকের খোঁজে ওর মা আর মামা স্কুলের গেটে হাজির। আমাদের স্কুলে না পেয়ে আজমির ভাইয়ের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আমরা খেলতে গেছি। ভ্যানে স্কুলের গেটে পৌঁছার আগেই দেখি মাশরাফির মা বলাকা খালা লাঠি নিয়ে দৌড়ে আসছেন। মাশরাফি এটা দেখে চলন্ত ভ্যান থেকে নেমে দৌড়।
একদিন আমরা ক্লাসের বাইরে স্কুলের ভেতরের মাঠে শহীদ মিনারের পাশে হৈ-হুলোড় করছি সবাই মিলে। লুত্ফর স্যার আমাদের ওই অবস্থায় দাবড়ে নিয়ে যান নতুন ভবনের তিন তলায়, তারপর রুমের দরজা আটকে ইচ্ছামতো মারলেন হাতের ডাস্টার দিয়ে। সেদিন কৌশিকসহ আমরা প্রায় সবাই স্যারের মার খেয়েছিলাম।
স্কুলে আসার পর থেকেই আমরা শুধু খেলা নিয়ে বেশি ভাবতাম। এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসের ফাঁকে কিংবা ক্লাসে স্যার আসতে দেরি করলেই শুরু হতো ক্রিকেট নিয়ে আলাপ। কৌশিকের কাছে ব্যাগের মধ্যে টেনিস বল থাকত। ক্লাসের ভেতরেই ভাঙা বেঞ্চের পায়া দিয়ে ব্যাট বানিয়ে খেলা শুরু হয়ে যেত।
আমাদের স্কুলের মাঠের সঙ্গেই লাগানো চিত্রাবাণী সিনেমা হল। নতুন সিনেমা এলে স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে চলে যেত ছেলেরা। তখন আমরা নাইনে পড়ি, আমাদের ক্লাসটিচার ছিলেন বিপুল পাঠক স্যার। স্কুলে প্রথম দুটি ক্লাস করেই কৌশিক চলে যায় সিনেমা দেখতে, সঙ্গে বন্ধু রাজু, প্রলয়সহ চার-পাঁচজন। পরদিন প্রথম ক্লাসে স্যারের কাছে কারা যেন নালিশ করেছিল। স্যার কৌশিককে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন—কাল কি স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলে? মিথ্যা জবাব না দিয়ে সে সত্য বলে মাথা নাড়ল, আর স্যারও মারলেন দলনেতা কৌশিককে।
ক্লাস নাইনে ওঠার পর ও মানবিক বিভাগে চলে যায়, আমি বিজ্ঞান বিভাগে। আমাদের ক্লাস ভিন্ন হলেও কমন সাবজেক্টগুলোয় একসঙ্গে বসতাম। স্কুলে প্রতিদিনই নিয়ম করে আসত, এসেই আলাপ জুড়ে দিত কোথায় কোন খেলা হচ্ছে। ফুটবল আর ক্রিকেট, দুটির প্রতিই ওর টান। কৌশিকের চমত্কার বন্ধুসুলভ আচরণ আমাকে সব সময়ই টানত। স্কুলের মাঝের বেঞ্চে বসত কৌশিক, মাঝেমধ্যে আমিই প্রথম বেঞ্চ থেকে ওর কাছে গিয়ে বসতাম। দুই ক্লাসের গ্যাপে আমাদের কয়েকজনকে ডেকে কৌশিক বিভিন্ন এলাকার খেলা ও খেলোয়াড়দের গল্প শোনাত আর শোনাত ওকে ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম কে কী কিনে দিল—এইসব। ও তখন ক্রিকেটে পুরোপুরি ঝুঁকে পড়েছে।
আমরা তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। দোতলায় আমাদের ক্লাসরুমটা একেবারে স্কুলের মাঠের কোনায়। মাশরাফি বসত মাঠের দিকের বেঞ্চে। ক্লাসে ইংরেজি পড়াতে এসেছেন বিপুল স্যার। স্যার অত্যন্ত গম্ভীর ও কড়া। তাঁর পড়া মুখস্থ না করে স্কুলে গেলে মার খেতে হতো। স্যার ক্লাসে ইংরেজি পড়াচ্ছেন আর মাশরাফি মাঠে ক্রিকেট খেলা দেখছে। তখন আমাদের মাঠে নিয়মিত বড়দের ম্যাচ হতো। মাশরাফি এক মনে খেলা দেখছে, আর উত্তেজনায় ছটফট করছে। স্যার ক্লাসে অমনোযোগী মাশরাফিকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘এই মাশরাফি বল তো, আমি কী পড়ালাম।’ ও তড়িঘড়ি করে বলল, ‘স্যার স্যার ছক্কা’—এই জবাবে ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠল। পরে স্যারের ধমকে আমরা আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম।
আমার মনে আছে, আমরা প্রথম ক্লাস করে রোল কল হয়ে যাওয়ার পর বাথরুমের কথা বলে বের হতাম। তারপর বাথরুমের পাশের দেয়াল টপকে স্কুল পালাতাম। ছুটে চলে যেতাম কৌশিকের নানাবাড়ির পাশের বাগানে। সেখানে একটি গাছকে স্টাম্প বানিয়ে প্রতিদিন ক্রিকেট খেলতাম, আবার টিফিন পিরিয়ডে ক্লাসে ঢুকতাম, না হলে স্কুলের টিফিন খাওয়া যাবে না।
স্কুলের বার্ষিক ভোজ কিংবা ঈদে মিলাদুন্নবী যেকোনো অনুষ্ঠানে আমাদের মধ্যে সে-ই সব কাজে এগিয়ে থাকত। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় আমরা যখন স্কুলের নানা বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছি, আমাদের নেতা ছিল কৌশিক। একবার স্কুলের বার্ষিক ভোজে খবর পাওয়া গেল, স্যাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে দই দেবেন না। এ কথা শোনার পর কৌশিককে বলা হলো এটা কেমন খাওয়া হবে। পরে সে আমাদের বলল, ‘চল স্যারের কাছে যাই।’ প্রধান শিক্ষক আলী আহম্মদ স্যারের কাছে দাবি উত্থাপন করা হলো। স্যার অনেক চেঁচামেচির পর দই খাওয়াতে রাজি হলেন। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■ছবি সংযু
বর্ষার আগমণে মাছ ধরার ফাঁদ নতুন চাঁই নড়াইলের বিভিন হাট বাজারে!
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■: (২০,জুন) ২৭৪: নড়াইলের রূপগঞ্জের হাট বাজারের এক কোণে বসে আপন মনে চাঁই বুনছেন। প্রতিদিন এক জায়গায় তিনি থাকেন না। নড়াইল জেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে ঘুরে ঘুরে তাৎক্ষণিক অর্ডার নিয়ে মানুষের ইচ্ছামতো মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে খ্যাত চাঁই তৈরি করে দিচ্ছেন তিনি। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, চাঁইয়ের ধরন ভেদে মূল্যও হরেক রকম হয়ে থাকে। তার কাছে সর্বনিন্ম ২৫০ টাকার চাঁই থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা মূল্যের চাঁইও পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বর্ষার পানি আইতাছে, জোয়ারের পানিতে নতুন মাছ ধরার জন্য জেলেরা চাঁই বানানোর অর্ডার দিচ্ছেন। কেউ ছোট আবার কেউ বড় চাঁই বানানোর অর্ডার দিচ্ছেন। তবে মাঝারি সাইজের চাঁইয়ের চাহিদাই বেশি। ভারত থেকে আসা বাবু সুবাস বিসাস বলেন, আমি নড়াইলের রূপগঞ্জের হাট বাজার থেকে বছরে একবার হোলও মাছ ধরার এ ফাঁদ চাঁই কিনে নিয়ে যাই বাড়ীতে, নড়াইলের বাগডংগা গ্রামের আকতার মোল্যা বলেন, বছরের এ সময়টাতে চাঁই দিয়ে মাছ ধরার মজাই আলাদা। জমির আইল কেটে চাঁই বসিয়ে দিলেই নতুন পানির সাথে ভেসে আসা মাছগুলো চাঁইয়ে আটকা পড়ে যায়। এছাড়া নদীর তীরে বাঁশের খুঁটির সাথে চাঁই বেঁধে রাখলে সকালে বাইম, বড় বড় ইছা, কৈ, শিংসহ বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যায়। চাঁইয়ের মাধ্যমে নতুন পানির মাছ খাওয়ার মজা অনেক। গ্রামের খাল বিলে মাছ ধরার পুরনো উপকরণের একটি হচ্ছে চাঁই। বর্ষার আগমণে নানা প্রজাতির দেশি জাতের ছোট মাছ ও পোনার বিচরণ বাড়ছে। চিংড়ি ও দেশি মিঠা পানির ছোট মাছ ও পোনা ধরার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশের তৈরি বিশেষ ফাঁদ। মাছ ধরার এ ফাঁদের পরিচিতি ‘চাঁই’ নামে। এই চাঁই বুনে নড়াইলের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ সচ্ছল জীবন যাপন করছেন। গ্রীষ্মের শুরু থেকে এ অঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় শুরু হয় চাঁই দিয়ে মাছ ধরা। বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ দিয়ে নদী-খালে, বিলে ৪-৫ ফিট ফাঁকে ফাঁকে বসানো হয় একটি করে চাঁই। পানিতে চাঁই বসানো হয় ম‚লত চিংড়ি মাছ শিকারের জন্য। কিন্তু ধরা পড়ে পুটি, বেলে, টেংরাসহ সকল প্রকারের ছোট মাছ। চাঁইগুলো প্রতি সপ্তাহে বিক্রি হয় জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। জেলার চাহিদা প‚রণ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় এসব চাঁই। নড়াইল জেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে বাণিজ্যিকভাবে চাঁই তৈরি হচ্ছে। চাঁই তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে বাঁশ। এই বাঁশগুলো নড়াইল জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। একটি বাঁশে হয় ৬টি চাঁই। প্রতি ১০০টি চাঁই বানাতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। শ্রমিকরা প্যাকেজ আকারে চাঁই বানানোর কাজ করে। মাপ মতো বাঁশ কাটা, শলা তোলা, শলা চাঁছা, সুতা দিয়ে খোল বাঁধা, চটা বাঁধা, মুখ বাঁধা চুক্তি ভিত্তিতে করে থাকেন। এতে প্রতি শ্রমিক গড়ে দৈনিক আয় করেন ৩০০ টাকা। গ্রীষ্মের শুরু থেকে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় চাঁই দিয়ে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়। যা চলতে থাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত। জেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে মাছ ধরার এই উপকরণটির বাজারজাত ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■ছবি সংযুক্ত
জমিদার বাবু দের অপুর্ব নিদর্শণ আজও দাঁড়িয়ে আছে সংস্কার রক্ষাণাবেক্ষনের অভাবে প্রাচীন মন্দিরগুলো আজ জরাজীর্ণ
উজ্জ্বল রায়, সাতক্ষীরা থেকে ফিরে■:(২০,জুন) ২৭৪: জমিদার বাবু দের অপুর্ব নিদর্শণ হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন মন্দিরগুলো সংস্কার রক্ষাণাবেক্ষনের অভাবে জরাজীর্ণ হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন মন্দিরগুলো সংস্কারের অভাবে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রকৃতির অপ‚র্ব পুরাকীর্তি ‘শ্যাম সুন্দর নবরতœ মন্দির’ (মঠবাড়ি মন্দির) এখন জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায়। প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো ৬০ ফুট উঁচু টেরাকোটা ফলক খচিত পিরামিড আকৃতির এই মঠ মন্দির প্রাচীন স্থাপত্যের অপ‚র্ব নিদর্শণ হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মঠবাড়ি মন্দিরটি সংস্কার ও সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবী। তাহলেই মঠবাড়ি মন্দিরটি এ জেলার আরও একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। মন্দিরটি সংস্কার করতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। স‚ত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের জানুয়ারীতে প্রত্মতত্ত¡ বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ও পুরাতত্ত¡ বিষয়ক লেখক মো. মোশাররফ হোসেন ও বিশিষ্ট লেখক জ্যোতির্ময় মলিকসহ খুলনা জাদুঘরের ৭ সদস্যের একটি টিম ‘শ্যাম সুন্দর নবরতœ মন্দির’ (মঠবাড়ি মন্দির) পরিদর্শন করেন এবং মন্দির সংশ্লিষ্টদের সাথে কথাও বলেন। এলাকাবাসীর দাবী, প্রত্মতত্ত¡ বিভাগ যদি মন্দির গুচ্ছের সংস্কার ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয় তাহলে প্রকৃতির অপ‚র্ব পুরাকীর্তি ‘শ্যাম সুন্দর নবরতœ মন্দির’ (মঠবাড়ি মন্দির) আবার প্রাণ ফিরে পাবে। কিন্তু বিগত ৯ বছরেও কলারোয়ার মঠবাড়ি মন্দিরটি আজও সংস্কার বা সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শ্যাম সুন্দর মন্দির: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত একটি প্রত্বত
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: