ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

মালিক-হাফিজের ব্যাটিং দৃঢ়তায় সিরিজ জিতলো পাকিস্তান

Admin 1 | প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ২২:০১

Admin 1
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ২২:০১

শোয়েব মালিকের অনবদ্য সেঞ্চুরি ও মোহাম্মদ হাফিজের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো পাকিস্তান। মালিকের অপরাজিত ১০১ ও হাফিজের ৮১ রানের সুবাদে গতরাতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো সরফরাজ আহমেদের দল। পাশাপাশি এই নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা ৯টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখালো পাকিস্তান।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে নাটকীয়ভাবে ৪ উইকেটে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে পরের ওয়ানডে ৭৪ রানে জিতে সিরিজে সমতা আনে পাকিস্তান। তাই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি রুপ নেয় অলিখিত ফাইনাল ম্যাচে। সেই লড়াইয়ে নেমে প্রথম দুই ম্যাচের মত এবারও টস ভাগ্যে জয় পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। তবে এবার আর বোলিং করার সিদ্বান্ত নয়, প্রথমে ব্যাট হাতে তুলে নেন ক্যারিবীয় দলপতি। কিন্তু আহামরি শুরু করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার এভিন লুইস ও চাঁদউইক ওয়ালটন। ৩১ রানের উদ্বোধণী জুটি গড়েন তারা। লুইসকে ১৬ রানে থামিয়ে পাকিস্তানকে প্রথম সাফল্য এনে দেন বাঁ-হাতি পেসার জুনায়েদ খান। অবশ্য দ্বিতীয় সাফল্য পেতেও খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি পাকিস্তানকে। এবার আরেক ওপেনার ওয়ালটনকে ১৯ রানেই থামিয়ে দেন আগের ম্যাচে ৫ উইকেট শিকারী পেসার হাসান আলী।
দুই ওপেনারকে হারানোর দুঃখ ভোলার পরিকল্পনা করছিলেন কাইরন পাওয়েল ও শাই হোপ। কিন্তু সেটি ভেস্তে দেন বাঁ-হাতি লেগ স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম। অধিনায়ক-উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদের সহায়তা নিয়ে ৩৪ বলে ২৩ রান করা পাওয়েলকে শিকার করেন ওয়াসিম।
পাওয়েলের সাথে সফল না হলেও, জেসন মোহাম্মদকে নিয়ে সাফল্য পান হোপ। দেখেশুনেই পাকিস্তানের বোলারদের সামলিয়ে উইকেটে সেট হওয়ার পর রান তোলার কাজটা দক্ষতার সাথেই করেছেন মোহাম্মদ ও হোপ। তাই ৬৮ রানে ৩ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়ে যায় লড়াকু সংগ্রহের পথ।
হোপ-মোহাম্মদ দুজনেই হাফ সেঞ্চুরি পুর্ন করেন। দলীয় ১৬৯ রানে মোহাম্মদদ জুনাইয়ের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হলে চতুর্থ উইকেটে দু’জনের ১৩১ বলে ১০১ রান জুটির সমাপ্তি ঘটে। এতে মোহাম্মদের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসটি থেমে যায় ৫৯ রানেই। তার ৬৪ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।
মোহাম্মদের বিদায়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহটা মজবুত করার দায়িত্ব পরে হোপ ও টেল-এন্ডার ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন হোপকে। তাই নিজেও খেই হারিয়ে ৭১ রানেই থেমে যান হোপ। ১১২ বল মোকাবেলা করে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে নিজের ধৈর্য্যপূর্ণ ইনিংসটি সাজান হোপ।
২১১ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে হোপ যখন বিদায় নেন, তখন ২৬ বল বাকী ছিলো। বাকী বলগুলো থেকে মাত্র ২২ রান যোগ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ২৩৩ রানে নিয়ে যান নীচের সারির দুই ব্যাটসম্যান অধিনায়ক হোল্ডার ও আসলে নার্স। হোল্ডার ১২ রানে আউট হলেও, ১০ রানে অপরাজিত থাকেন নার্স। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, জুনায়েদ ও শাহদাব খান ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৩৪ রানে লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল শুন্য হাতে ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানের ওপেনার কামরান আকমলকে। অন্য প্রান্ত দিয়ে আরেক ওপেনার ৩ রান করা আহমেদ শেহজাদের বিদায় ঘটান হোল্ডার।
১৬ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানোর পর ঘুড়ে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছিলো পাকিস্তান। কিন্তু আবারো পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন গ্যাব্রিয়েল। এবার তিনি আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ও ইনফর্ম বাবর আজমকে আটকে দেন ১৬ রানেই। এতে ৩ উইকেটে ৩৬ রানে পরিণত হয় পাকিস্তান।
এ অবস্থা থেকে মোহাম্মদ হাফিজের আক্রমনাত্মক ব্যাটিং-এ দুর্দান্তভাবে লড়াইয়ে ফেরে পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমন চালান হাফিজ। অন্যপ্রান্ত দিয়ে তাকে সঙ্গ দেন শোয়েব মালিক। তাই দু’জনের ৪৩০ ম্যাচের অভিজ্ঞতার সামনে নসাৎ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের তেজ।
দলের রান বাড়ানোর সাথে সাথে নিজের স্কোরটাও তিন অংকে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখছিলেন হাফিজ। কিন্তু হাফিজের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেন নার্স। ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮৬ বলে ৮১ রানেই থেমে যান তিনি। মালিকের সাথে চতুর্থ উইকেটে ১১৩ রান যোগ করেন হাফিজ। এরমধ্যে হাফিজেরই ছিলো ৬৬ রান।
হাফিজ ফিরে গেলেও ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ার পণ করেন মালিক। সেটি নিশ্চিত করার জন্য পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক সরফরাজের সাথে মালিকের অনবদ্য ৮৭ রানের জুটিতে জয়ের স্বাদ পায় পাকিস্তান। ৪১ বল হাতে রেখে দলকে জয় এনে দেয়া মালিক দেখেছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরির। ২৯তম ম্যাচ ও ২০১৫ সালের মে মাসের পর তিন অংকে পা দিয়ে ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ১১১ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন মালিকই। তবে ম্যাচ শেষে হাফিজের প্রশংসা করেছেন মালিক, ‘আমি খুব খুশী। সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে বড় দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। দায়িত্ব নিয়ে ম্যাচ শেষ করার দরকার ছিলো। সেটি করতে পেরে ভালো লাগছে। তবে চাপের মধ্যে দারুন খেলেছেন হাফিজ। আমাকে চাপমুক্ত রেখেছেন তিনি। সেঞ্চুরি তার প্রাপ্য ছিলো।’
চার ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে জিতেছিলো পাকিস্তান। তাই টি-২০ ও ওয়ানডে সিরিজ জয় নিয়ে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট লড়াই শুরু করবে পাকিস্তান। আগামী ২১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৩৩/৯, ৫০ ওভার (হোপ ৭১, মোহাম্মদ ৫৯, আমির ২/৪১)।
পাকিস্তান : ২৩৬/৪, ৪৩.১ ওভার (মালিক ১০১*, হাফিজ ৮১, গ্যাব্রিয়েল ২/৬০)।
ফল : পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো পাকিস্তান।
ম্যাচ সেরা : শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)।
সিরিজ সেরা : শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: