ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

দিবালা-শক্তিতে বার্সেলোনাকে উড়িয়ে দিল জুভেন্টাস

Admin 1 | প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ২২:০৫

Admin 1
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ২২:০৫

তুরিনে ম্যাচের দৃশ্যপটটা পুরোপুরি নিজের দখলে নিয়ে নিলেন পাওলো দিবালা। ফুটবল দুনিয়ায় যাকে ‘নতুন মেসি’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর্জেন্টাইন এই তরুণ তারকার দুই গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগটা ৩-০ গোলে জিতে নিয়েছে জুভেন্টাস।

এখনো বার্সার বিদায়ঘণ্টা বাজেনি। তবে ফিরতি পর্বে ন্যু ক্যাম্পে পাহাড় ডিঙিয়েই ইউরোপ-সেরার লড়াইয়ের শেষ চারে খেলতে হবে লুইস এনরিকে আর লিওনেল মেসির দলকে। ম্যাচটা কেবল জিতলেই চলবে না। ব্যবধানটা রাখতে হবে ৪ গোলের। পাহাড় ডিঙিয়েই পিএসজির বিপক্ষে শেষ ষোলোর বাধা পেরিয়েছিল বার্সা। প্রথম লেগে ৪-০ গোলে হেরেও পরের লেগটা জিতেছিল অভাবনীয় ভাবেই। কিন্তু প্রতিদিন কি সে ধরনের কিছু ঘটানো সম্ভব?

দিবালার দুই গোলের পাশাপাশি জর্জো কিয়েলিনির গোল বার্সার কপাল পুড়িয়েছে। ম্যাচের ৭ মিনিটেই দিবালা গোল করে জুভেন্টাসকে দুর্দান্ত এক শুরু এনে দেওয়ার পর ২২ মিনিটে আবারও দিবালার আঘাত। প্রথমার্ধ ২-০ ব্যবধানে শেষ করার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেই (৫৫ মিনিটে) কিয়েলিনির গোল ম্যাচটাকে নিয়ে যায় বার্সেলোনার কাছ থেকে অনেকটাই দূরে। পরে দুর্ভেদ্য রক্ষণ সাজিয়ে মেসি-সুয়ারেজ-নেইমারদের নিয়ে গড়া দুর্দান্ত আক্রমণভাগ সামলে দিন শেষে বিজয়ীর হাসি জুভেন্টাসেরই।

সার্জিও বুসকেটসকে ছাড়া মাঠে নামা বার্সা নিজেদের ঠিকমতো গুছিয়ে ওঠার আগেই গোল করে বসেন দিবালা। ম্যাচের তখন সবে ৬ মিনিট গড়িয়েছে জুভেন্টাসের হুয়ান কুদ্রাদো ডান প্রান্ত থেকে বল নিয়ে এক পা-দুই পা করে ঢুকে পড়েন বার্সেলোনার বক্সে। ঢুকেই বল বাড়ান দিবালাকে। ডান পা দিয়ে বল ধরে নিজের শরীরটাকে ঘুরিয়ে চকিত এক শটে তিনি হতভম্ব করে দেন বার্সেলোনার গোলকিপার আন্দ্রে টের স্টেগানকে।

এক গোলে পিছিয়ে পড়ে আক্রমণে ওঠে বার্সা। জিয়ান লুইজি বুফন তাঁর অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চটা ব্যবহার করেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার একটি প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে। ম্যাচের ২২ মিনিটে আবারও দিবালা-জাদু। এবার মারিও মানজুকিচের বাম প্রান্ত থেকে একটু পেছনের দিকে দেওয়া ক্রসটি ধরেই গোলপোস্টের বাঁ কোনা দিয়ে জালে বল পাঠান আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে মেসির সতীর্থ দিবালা।

ম্যাচের শুরুর ৩০ মিনিট স্বপ্নের মতো ফুটবলই খেলেছে জুভেন্টাস। ৫০-৫০ বলগুলোর বেশির ভাগই জিতেছে তারা। বার্সার রক্ষণে দুর্বল সৈনিক হয়ে ছিলেন জেরমে ম্যাথিউ। দিবালা ছাড়াও আরেক আর্জেন্টাইন গঞ্জালো হিগুয়েইনও বারবার ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন বার্সার রক্ষণকে। লুইস এনরিকের ৩-৪-৩ ফরমেশনটা জুভেন্টাসের ফরোয়ার্ডদের রুখতে যে যথেষ্ট ছিল না, সেটি প্রমাণ হয়ে যায় বার্সার দুই গোলে পিছিয়ে পড়াতেই।

অন্যদিকে, মাসিমিলানিও আলেগ্রির রক্ষণকে দারুণ আঁটসাঁট রেখেছিলেন লিওনার্দো বনুচ্চি ও জর্জো কিয়েলিনি। লিওনেল মেসি ভালো খেলতে পারেননি। তবে ২১ মিনিটের সময় তিনিই দারুণ একটা সুযোগ তৈরি করেছিলেন। ইনিয়েস্তা তাঁর বাড়ানো থ্রোটি কাজে লাগাতে পারেননি গোলকিপার বুফনের জন্য, সেটি বলা হয়েছে আগেই। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই মেসি একটি গোল করে বসেছিলেন। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ লগ্নে হিগুয়েইনের একটি শট বার্সা গোলকিপার টের স্টেগানের সামনে পড়লে ম্যাথিউ কোনোক্রমে তা ক্লিয়ার করেন। এ সময় লুইস সুয়ারেজের দুটি হেড লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নেইমারের একটি প্রচেষ্টা দুর্দান্ত ডাইভে নস্যাৎ করেন বনুচ্চি। ফিরতি বলে মেসি শট নিয়েছিলেন বটে, কিন্তু সেটা পিজানিকের পায়ে লেগে প্রতিহত হয়। ৫৪ মিনিটে হিগুয়েইন বলটা দিবালাকে বাড়াতেই পারতেন। অফসাইড ট্র্যাপ এড়িয়ে বল নিয়ে বেরিয়ে তিনি বলটি মেরে দেন বার্সা গোলকিপার টের স্টেগানের শরীরে।
৫৫ মিনিটে দুর্দান্ত এক হেডে জুভেন্টাসকে ৩-০ গোলে এগিয়ে দেন কিয়েলিনি। এটি চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর দ্বিতীয় গোল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০০৯ সালের পর ইউরোপের এই ক্লাব প্রতিযোগিতায় গোল পেলেন এই ইতালীয় রক্ষণ সেনা। গোলটির জন্য বার্সা সমর্থকেরা দায়ী করতে পারেন তাদের দীর্ঘদিনের রক্ষণ সেনা হাভিয়ের মাচেরানোকে। পাজানিকের কর্নারটিতে কিয়েলিনি মাথা ছোঁয়ান মাচেরানোকে টপকে, খুব সহজেই।

তিন গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়া বার্সাকে ৬৮ মিনিটে আবারও আশা দেখিয়েছিলেন মেসি। তাঁর পাস থেকে আরও ভালো কিছু করা উচিত ছিল সুয়ারেজের। একটি অ্যাওয়ে গোলের আশায় বার্সা যখন হন্যে, ঠিক তখনই আবারও জুভেন্টাসকে বাঁচান কিয়েলিনি। নেইমারের প্রচেষ্টাটি নস্যাৎ করেন তিনি।

গত শনিবার মালাগার কাছে লা লিগার ম্যাচে ২-০ গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে মাঠে নেমেছিল বার্সা। মালাগার মাঠে দুর্বল পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করল বার্সা তুরিনে এসেও। লা লিগার মতোই চ্যাম্পিয়নস লিগও তাতে অনিশ্চিত বার্সার। লিগের মতোই ইউরোপ-সেরার লড়াইয়ে অন্ধকার দেখা শুরু করেছে তারা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: