

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণ নেতা সুষমা স্বরাজ মারা গেছেন।
তাকে দিল্লির এআইআইএমএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় সুষমা স্বরাজের এই মৃত্যুর ঘটনায় শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
ওই টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, "ভারতীয় রাজনীতির একটি দুর্দান্ত অধ্যায়ের শেষ হল। ভারত তার এক অসাধারণ নেতার মৃত্যুতে শোক করছে, যিনি মানুষের সেবা এবং দরিদ্রদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন।"
"সুষমা স্বরাজ অনন্য ছিলেন, তিনি কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন। সুষমা জি ছিলেন একজন দুর্দান্ত বক্তা এবং দুর্দান্ত সংসদ সদস্য। তিনি সব পক্ষের কাছ থেকে সম্মান পেয়েছেন। তিনি কখনও বিজেপির আদর্শ ও আগ্রহ নিয়ে আপোস করেননি। বিজেপির উন্নয়নে তিনি বড় অবদান রেখেছেন।"

মধ্য প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও টুইট করে শোক প্রকাশ করেন।

এক টুইট বার্তায় সুষমা স্বরাজের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
গত বছর সুষমা স্বরাজ ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
এই ঘোষণার পরে, সুষমার স্বামী এবং প্রাক্তন রাজ্যপাল স্বরাজ কাউশাল বলেছিলেন, "মিলখা সিংও কিছু সময়ের পরে দৌড় বন্ধ করেছিলেন। আর আপনি তো গত ৪১ বছর ধরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।"
সুষমা ২৫ বছর বয়সে রাজনীতিতে আসেন। তার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন লাল কৃষ্ণ আদভানী।

কংগ্রেস নেতা গোলাম নবী আজাদ, সুষমা স্বরাজকে স্মরণ করে বলেন, "আমি সর্বদা জিজ্ঞাসা করতাম যে একজন বোনের কেমন হওয়া উচিত আর তিনি পাল্টা প্রশ্ন করতেন যে একজন ভাইয়ের কেমন হওয়া উচিত। আমরা একটি বোন হারিয়েছি। তিনি দুর্দান্ত বক্তা ছিলেন, তিনি সর্বদা স্মরণে থাকবেন। ''
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, "তিনি আমার বড় বোনের মতো ছিলেন, তিনি দলে, সরকারে, ঘরে আমাকে ছোট ভাই হিসাবে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। সুষমা জি পার্টিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। ''
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গাদকরী বলেছেন যে, "তিনি বিশ্বজুড়ে ভারতের মর্যাদা বাড়ানোর কাজটি করেছিলেন। তার ঘাটতি কখনও পূরণ করা যাবে না।"
বিজেপির নির্বাহী সভাপতি জে পি নদ্দা বলেছেন, "শ্রদ্ধেয় সুষমা জি আমাদের মধ্যে নেই, তিনি আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন যেন আমরা রাজনীতিতে অবদান রাখতে পারি।''
সুষমা স্বরাজের মরদেহ বুধবার দুপুর বারোটা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত শেষবারের মতো দেখার জন্য দলীয় কার্যালয়ে রাখা হবে।
এরপর লোধি রোডের শ্মশানঘরে জাতীয় সম্মানের সাথে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে বলে জানান জেপি নদ্দা।
এদিকে এ ঘটনায় বিজেপি নেতা শাহনাওয়াজ হুসেন বলেছেন, "সুষমা স্বরাজের মৃত্যু দলের জন্য, দেশের জন্য এবং পাশাপাশি আমার জন্যও অনেক বড় ক্ষতি। আমি তার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, ভাবতেও পারিনি।"
সুষমা স্বরাজের গল্প ...

সুষমা স্বরাজকে একজন বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী বক্তা, কার্যকর সংসদ সদস্য এবং দক্ষ প্রশাসক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
একটা সময় ছিল যখন প্রমোদ মহাজন এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর পরে বিজেপির সবচেয়ে জনপ্রিয় বক্তা হিসেবে সুষমা স্বরাজকেই ধরা হতো।
গত চার দশকে তিনি ১১ বার নির্বাচন করেছেন এবং তিনবার বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। সুষমা সাতবার সংসদ সদস্যও হয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী থেকে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে লাল কৃষ্ণ আদভানীর প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন সুষমা স্বরাজ।
এই প্রচারে তিনি শেষ অবধি আদভানীকে সমর্থন করেছিলেন। তবে ২০১৪ সালে মোদীর জয়ের পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার।
মোদীর বিশেষজ্ঞ ও সমালোচকরা বিশ্বাস করেছিলেন যে, সুষমা ভবিষ্যতে এই অপরাধের জন্য শাস্তি পাবেন।
ইন্দিরা গান্ধীর পরে সুষমা স্বরাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত দ্বিতীয় নারী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে সুষমা স্বরাজ টুইটারে বেশ সক্রিয় ছিলেন। মৃত্যুর মাত্র তিন ঘণ্টা আগেও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পদক্ষেপ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেন তিনি।
বিবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: