ঢাকা | মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলীয় পানীয় জল সমস্যার সমাধান বৃষ্টির পানি সংগ্রহ

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪১

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪১

 আগে তুলসী গাইনকে (৪০) তার পরিবারের জন্য খাবার পানি আনতে এক থেকে দুই কিলোমিটার হাঁটতে হতো কিন্তু এখন তিনি তার বাড়ির কাছে স্থাপিত একটি পুকুর-ভিত্তিক জল পরিশোধনকেন্দ্র থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে পারেন। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের চারপাশে সবখানেই পানি কিন্তু সবই লবণাক্ত। আগে আমাদের মিষ্টি পানির অভাব ছিল। খাবার পানি আনতে আমাদের অনেক দূর যেতে হতো।’ 
দাকোপ উপজেলার পশ্চিম বাজুয়া গ্রামের বাসিন্দা তুলসী গাইন বলেন, তিনি অন্যান্য উপকূলীয় মহিলাদের সঙ্গে  জেন্ডার-সংবেদনশীল উপকূলীয় অভিযোজন (জেন্ডার-রেস্পন্সিভ কোস্টাল এডাপটেশন-সিজিএ) প্রকল্পের অধীনে স্থাপিত পুকুর-ভিত্তিক রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেন। 
তিনি বলেন, প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার কওে মোট ২০০টি পরিবার পশ্চিম বাজুয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত প্ল্যাট  থেকে পানি সংগ্রহ করে। 


প্ল্যান্টের ক্যাশিয়ার তুলসি গাইন বলেন, প্রতিটি পরিবার তাদের প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে প্রতিদিন ১০ লিটার পানি সংগ্রহ করতে পারে এবং তাদের প্রতি লিটার পানির জন্য ২৫ পয়সা দিতে হয়। 
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ইউএনডিপি বাংলাদেশ জিসিএ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় খুলনা ও সাতক্ষীরার পাঁচটি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নে মোট ২২৮টি কমিউনিটি ভিত্তিক রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট এবং ৪১টি পুকুর ভিত্তিক প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
সিজিএ প্রকল্পের আঞ্চলিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক অশোক কুমার অধিকারী বলেন, উপকূলীয় পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ ও মন্দিরে ২,০০০ থেকে ৫০,০০০ লিটার ধারণ ক্ষমতার পানির ট্যাঙ্ক বিশিষ্ট কমিউনিটি ভিত্তিক রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। 
‘আমরা এই মূলত সিস্টেমটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করেছি... পশ্চিম বাজুয়া স্কুলে একটি পুকুর-ভিত্তিক আল্ট্রা ফিল্টারেশন সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে এবং প্ল্যান্টটি ২০০টি পরিবারে পানীয় জল সরবরাহ করে,’ তিনি বলেন।
জিসিএ প্রকল্পটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদেরকে ‘পরিবর্তন এজেন্ট' হিসেবে জীবিকা ও পানীয় জলের সমাধানের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং কমিউনিটি ভিত্তিক রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট পরিচালনায় কাজ করতে সহায়তা করছে। 
নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ পানীয় জলের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে, বিশেষ করে মহিলা এবং  মেয়েদেরকে তাদের শ্রম এবং অর্থ বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে। প্রকল্পটি পরিবার এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী মধ্যে লিঙ্গ সমতা আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। 
প্রকল্পটি ইতিমধ্যে ৩০,৯৩৪ পরিবারের জন্য বছরব্যাপী নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য জলবায়ুু-সহনশীল পানীয় জলের সমাধানে জেন্ডারসমতা নিশ্চিত করেছে। 
এটি খানা-ভিত্তিক বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা, কমিউনিটি ভিত্তিক বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠান-ভিত্তিক বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছে। প্রকল্পটি বৃষ্টির পানি সংগ্রহে খুলনা ও সাতক্ষীরার পাঁচটি উপজেলায় পুকুর ভিত্তিক আল্ট্রা ফিল্ট্রেশন সিস্টেম চালু করেছে। 


পানীয় জলের নিরাপত্তার জন্য প্রকল্পটি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং জলবায়ুু-ঝুঁকি, ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সরকারি কর্মকর্তা এবং স্টেকহোল্ডারদের অবহিত করছে । 
‘আমরা পানীয় জলের প্রয়োজন এমন ৪৩,০০০ পরিবারের সঙ্গে কাজ করছি। আপনি যে পানি দেখছেন তার  সবই লবণাক্ত যদি না সেগুলো বৃষ্টির পানি হয়। ভূগর্ভস্থ পানিও লবণাক্ত। এ কারণে এ অঞ্চলের মানুষ পানীয় ও গৃহস্থালির কাজে এসবই লবণাক্ত পানি ব্যবহার করতে পারে না,’ অধিকারী বলেন। 
তিনি বলেন, প্রকল্পটি ১৩,০০০ পরিবারের জন্য পানির ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করেছে যাতে বর্ষাকালে প্রতিটি ট্যাঙ্কে তারা ২,০০০ লিটার বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে পারে এবং শুষ্ক মৌসুমে তা পান করতে পারে।

রফিকুল ইসলাম

বাসস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: