ঢাকা | শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মোটরসাইকেল চোর ধরতে গিয়ে মিলল ইঞ্জি. গিয়াস হত্যাকারীর সন্ধান

odhikar patra | প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:১৫

odhikar patra
প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:১৫

অধিকারপত্র ডেক্স :

একটি মোটরসাইকেল চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে দুই বছর আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনকে হত্যায় জড়িত ঘাতকের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ।  হত্যায় জড়িত রফিকুল ইসলামকে গত ৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি প্রাইভেটকার ও পাঁচটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ।

আজ রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও ইলেকট্রিশিয়ান গিয়াস উদ্দিন তার মিরপুরের বাসা থেকে নিজের কালো রঙের বাজাজ ডিসকভার মোটরসাইকেলযোগে অফিসে যান। পরে অফিস থেকে বিকেল ৩টার দিকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি। রাত ১১টায় উত্তরা নস্ট্রাম হাসপাতাল থেকে একটি মোবাইল কলে ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনের সন্তানরা জানতে পারেন অচেতন অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনকে সেখানে রেখে গেছে কতিপয় পথচারী। গিয়াস উদ্দিনকে পরে ক্রিসেন্ট হসপিটাল এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ৮ ডিসেম্বর রাতে মৃত্যুবরণ করেন। 

গিয়াস উদ্দিন পথে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকাকালে তার মোটরসাইকেল বা মোবাইল সেট কোনটিই পাওয়া যায়নি। ডাক্তারদের প্রতিবেদনে উঠে আসে তার মৃত্যুর কারণ ছিল অজ্ঞাত স্ট্রিট পয়জনিং। ওই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

সম্প্রতি গাড়ি চুরি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে অন্যান্য মোটরসাইকেলের সঙ্গে গিয়াস উদ্দিনের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হয়। মালিকের খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায় গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর খবর। এরপর ওই মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

রফিকুল ইসলামকে হত্যা ও গাড়ির চুরির ঘটনায় দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের আগে তার অন্যতম সহযোগী রানা শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। রানা শেখ আদালত এবং ডিবি পুলিশকে তখন জানিয়েছিল কীভাবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনকে হত্যা করে তার মোটরসাইকেল এবং মোবাইলকে ছিনিয়ে নিয়েছিল রফিকুল ইসলাম। এরপর থেকেই আমাদের টিম রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে আসছিল।

গিয়াস উদ্দিনকে অজ্ঞান করার পর তার কাছ থেকে মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় রফিকুল ইসলাম। মোটরসাইকেলটি রানা শেখের কাছে নিয়ে যায় রফিক। সেখান থেকেই গিয়াস উদ্দিনের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও কয়েক হাত ঘুরে বিক্রির পর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে ডিবি।

মশিউর রহমান বলেন, কুখ্যাত সিএনজি চোর মুসলিমের শিষ্য রফিকুল ইসলাম ডাবের পানি, শরবত, চা ও টাইগার নামক পানীয়ের মধ্যে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সেগুলো খাইয়ে সিএনজি ড্রাইভারকে অচেতন করে সিএনজি চুরি করার মধ্য দিয়ে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। 

চুরির ৪২ মামলার আসামি রফিক

রফিকের নামে মোটরসাইকেল ও গাড়ি চুরির ৪২টি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পর্যায়ের আদালত থেকে মুক্তি পেয়ে সে সংশোধিত হয়নি বরং ভিন্ন কৌশলে এবং বিশেষ ধরনের মাস্টার কী ব্যবহার করে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চুরি করে।

দুই ভাইয়ের চোর চক্র, ৮ বছরে দুই শতাধিক চুরি

অন্যদিকে ডিএমপির ভাটারা ও গুলশান থানার দুটি মোটরসাইকেল চুরির মামলায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে বাদল মাতব্বর ও রিপন মাতব্বর নামে আপন দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির গুলশান বিভাগ। 

তাদের দেওয়া তথ্য নিয়ে গতকাল শনিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ৫টি চোরাই মোটরসাইকেল ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে ৬টি চোরাই মোটরসাইকেল ও একটি সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।

মাস্টার কী'তে কয়েক সেকেন্ডে চুরি

ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার রিফাত রহমান শামীম জানান, রিপন মাতব্বর ও বাদল মাতব্বর আপন দুই ভাই। তাদের সাথে আরও কয়েকজন রয়েছে। কেউ মোটরসাইকেল পার্কিং করে রেখে গেলে বাদল মাতব্বর মোটরসাইকেল মালিকের গতিবিধি লক্ষ্য রাখে। আর তার বড় ভাই রিপন মাতব্বরের নিকটে থাকা আলীবাবা নামে খ্যাত ‘মাস্টার কী’ দিয়ে কয়েক সেকেন্ডে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দুই ভাই মিলে গত ৮ বছরে রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, টিএসসি, নগর ভবন, গুলিস্তান, ধানমন্ডি লেক, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে। পুলিশের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে রিপন মাতব্বরের নামে তিনটি মাদকসহ ২০টি চুরি মামলা ও তার ভাই বাদলের নামে তিনটি চুরি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

চুরি করা এসব মোটরসাইকেল কম টাকায় ক্রয় করে যারা ব্যবহার করে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান এই গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: