ঢাকা | সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চেয়ারে বসেই ফের বরখাস্ত বিএনপির দুই মেয়র

Admin 1 | প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০১৭ ১১:১৫

Admin 1
প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০১৭ ১১:১৫

বুলবুলের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ায় এবং আরিফুলের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে রোববার দুটি আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

 

প্রথমবার সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার প্রায় দুই বছর পর আদালতের আদেশ পক্ষে পেয়ে রোববার বেলা ২টার দিকে মেয়রের দপ্তরের তালা ভেঙে দায়িত্বে যোগ দেন রাজশাহী নগর বিএনপি সভাপতি বুলবুল। তার ঘণ্টা তিনেক আগে বেলা ১১টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক।

বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, বুলবুলের বিরুদ্ধে একটি মামলার অভিযোগপত্র রাজশাহী মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গৃহীত হয়েছে। আর সিলেটের মেয়র আরিফুরের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি ফৌজদারী মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র গত ২২ মার্চ সুনামগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হয়েছে।

“ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (সিটি কপোরেশন) আইন অনুযায়ী তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।”

রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় বুলবুলের বিরুদ্ধে নাশকতার ওই মামলা দায়ের হয়েছিল ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ অভিযোগপত্র দেওয়ার পর আদালত তা আমলে নেয়। 

আর সুনামগঞ্জে ২০০৪ সালের ২১ জুন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় করা এক মামলায় গতবছর কারাবন্দি আরিফুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ওই মামলায় পুলিশ সম্পূরক অভিযোগপত্র দিলে তাতে আরিফুলের নাম যোগ করা হয়।

বরখাস্তের আদেশ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আরিফুল বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধির ওপর এমন আচরণ মোটেও ভালো না। আশা করি, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন, তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন। আমার ওপর বারবার অবিচার করা হচ্ছে, সিলেটের জনগণ সিলেটের মানুষ এর বিচার করবে।”

বুলবুলের বরখাস্তের চিঠি রাজশাহী সিটি করপোরেশনে পৌঁছায় তিনি কার্যালয়ে থাকা অবস্থাতেই।  পরে তিনি বলেন, “ওই চিঠির কোনো ভিত্তি নেই। উচ্চ আদালত আমাকে দায়িত্ব গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি এখন প্রতিদিন অফিস করব।”

 আরিফুলের তিন ঘণ্টা

বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন ২০১৩ সালে ১৫ জুন। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের একটি আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সিলেটের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন আরিফুল। তার আবেদনে গত ১২ মার্চ বরখাস্তের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে হাই কোর্ট। আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।

আদালতের আদেশ নিজের পক্ষে আসার পর আরিফুল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে পৌঁছলে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

দায়িত্ব বুঝে নিয়ে আরিফুল বলেন, “দায়িত্ব পালনে আমি সকলের সহযোগিতা চাই। আমি জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম, তা পূরণে কাজ করতে চাই। বিনাদোষে আমাকে ২৭ মাস জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল।”

মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা এম এ হক, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন এ সময়।

এরপর বেলা ২টায় আরিফুলকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ সিলেট সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে পৌঁছায় বলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব জানান।

 

আরিফুল হক চৌধুরীর মতই ২০১৩ সালের নির্বাচনে রাজশাহীর মেয়র নির্বাচিত হন মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময়ে নাশকতার চার মামলায় অভিযোগপত্রে নাম এলে ২০১৫ সালের ৭ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

গতবছর ১০ মার্চ উচ্চ আদালত তার বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর গত মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

বিএনপি নেতা বুলবুল দায়িত্ব বুঝে নিতে রোববার সকালে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে গিয়ে নিজের কক্ষে তালা ঝুলতে দেখেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরও ঢুকতে না পেরে তিনি প্রধান নির্বাহীর কক্ষে গিয়ে বসেন।

এ সময় খানিকটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বুলবুলের সমর্থকরা একটি কক্ষ ভাংচুর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে বেলা ২টার দিকে পুলিশের সহযোগিতায় সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন তালা ভেঙে মেয়রকে তার দপ্তরে প্রবেশের সুযোগ করে দেন বলে বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহাদত হোসেন খান জানান।

বেলা ১১টার দিকে নগর ভবনে মেয়রের সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও তালা জটিলতায় তা আর হয়নি। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব চালিয়ে আসা নিযাম-উল-আযীমকেও ওই সময় নগর ভবনে দেখা যায়নি।

নিজের চেয়ারে বসে বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি যেহেতু ভোটে নির্বাচিত এবং আদালতের রায়ে দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন, সেহেতু লিখিতভাবে কোনো আনুষ্ঠানিকতার দরকার নেই। তিনি এমনিতেই মেয়র।

কিস্তু তিনি কার্যালয়ে থাকা অবস্থানেই বেলা ৩টার দিকে বরখাস্তের আদেশ ফ্যাক্সের মাধ্যমে নগর ভবনে পৌঁছায় বলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন জানান।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: