ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রাজপথে ‘অনুমতি’ বিতর্ক

odhikar patra | প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:২৫

odhikar patra
প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:২৫

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির আন্দোলন প্রশ্নে চাপের মুখে পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির মধ্যসারি ও তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্য সিনিয়র নেতাদের ‘সুবিধাবাদী’ মানসিকতার কারণে বেগম জিয়ার মতো জনপ্রিয় নেত্রীকে পৌঁনে দুই বছর ধরে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। দলীয় নেতাদের চাপের মুখেই ২৪ নভেম্বর সমাবেশে বিএনপির নেতারা বলেছেন, সমাবেশের জন্য আর প্রশাসনের অনুমতির অপেক্ষা করা হবে না। মিটিং-মিছিল করা গণতান্ত্রিক অধিকার।

বিএনপির নেতাদের এই বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া রাজপথে সভা-সমাবেশ করার সক্ষমতা বিএনপির নেই। প্রথম প্রশ্ন বিএনপির নেতারা আসলেই কি বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামছেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন সত্যিই কি প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বিএনপির সভা-সমাবেশ করার সক্ষমতা নেই? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, বøগ, টুইটারে এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। এই বিতর্কে নানা জন নানান মতামত দিচ্ছেন। বেশির মানুষই সরকারের অনুমতির উপর ‘নির্ভরশীলতা’ বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন। কেউ কেউ অবশ্য সরকারের ‘নিষ্ঠুর জুলুম’কে এ জন্য দায়ী করছেন। ১৩ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির ক্রমান্বয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের এক দলীয় বিতর্কিত নির্বাচনের পরের বছর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার লাগাতার অবরোধ হরতালে টানা ৯০ দিন দেশ কার্যত অচল ছিল। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে সরকার রাজপথে মিটিং ও সমাবেশের জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেয়ার নিয়ম চালু করে।

 

এরপর থেকে বিএনপি কার্যত সভা-সমাবেশের ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর অনুমতির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। গত সাড়ে ৫ বছরে বিএনপি কমপক্ষে অর্ধশত সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় পরবর্তীতে তা বাতিল করতে হয়েছে। কয়েকটি সমাবেশ করতে দেয়া হয়েছে মিটিং শুরুর তিন থেকে ৬ ঘণ্টা আগে। সে সব অনুমতিতেও ১০ থেকে ৩০টি শর্ত দেয়া হয়।

এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় বিএনপির খুব কমই সভা সমাবেশ করার সুযোগ পান। অবশ্য এ জন্য বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকার্মীরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দায়ী করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা বলেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ এবং কোনো শর্ত মেনে না নেয়ার পরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নির্বাচনকালীন সময়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের প্রচারণায় নামতে না দেয়া এমনকি নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করার পর নির্বাচনে দিন ভোট বর্জন না করে ‘শেষ পর্যন্ত দেখার’ ঘোষণা দেয়া সবগুলো ছিল বিএনপির রাজনৈতিক ব্যর্থতা।

তারা প্রশ্নের সুরে বলেন, ড. কামাল হোসেন দেশের রাজনীতি দেখেন বঙ্গবন্ধুর চশমায়। বঙ্গুবন্ধুর চশমায় কি জিয়ার আদর্শের দলের নেতৃত্ব চলে? অবশ্য পরবর্তীতে ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও ২০ দলীয় জোটের শরীক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ জ্বালাময়ি বক্তৃতা দিয়েছেন।

 

বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে ‘অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার আমাদের ভোট ও কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই সমাবেশের কয়েক ঘণ্টা আগে বলা হয় আপনারা সমাবেশ করতে পারবেন! কিন্তু এরপর আমরা আর কোনো অনুমতি নেবো না। আমাদের সমাবেশ যখন প্রয়োজন তখন আমরা করব। আমরা রাজপথে নামব। এটা আমাদের অধিকার। কারো অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন বোধ করব না।

বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্যের জবাবে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করার সাহস, শক্তি বা সক্ষমতা কোনোটিই বিএনপির নেই। অনুমতি না নিয়ে বিএনপির সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা হাস্যকর। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন আমরাও অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করতে পারিনি। আমাদের সময় এমনও হয়েছে, আগের দিন রাতে আমরা সভার অনুমতি পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে ৫০০ কর্মী নিয়ে একটি মিছিল-মিটিং করতে পারেনি। তারা কীভাবে অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করবে? বিষয়টি হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলে খালেদা জিয়া এতদিন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যেতেন। দেশের জনগণ যা কিছু পেয়েছে, আন্দোলন করেই পেয়েছে, আদালতের রায়ে পায়নি। দেশ স্বাধীন করা হয়েছে, সেটাও আন্দোলনের মাধ্যমে, যুদ্ধের মাধ্যমে হয়েছে, আদালতের রায়ে হয়নি। নেত্রীকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলন করেই করতে হবে। আদালতের রায়ে হবে না। এখন থেকে সভা-সমাবেশ করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। সভা-সমাবেশ আমাদের সাংগঠনিক অধিকার। আমরা সভা-সমাবেশ করব, অন্যায়ের প্রতিবাদ করব।

বিএনপির অধিকাংশ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্রের মতের সঙ্গে একমত। এ কারণে হয়তো বিএনপি সুবিধাবাদী নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে ‘আমরা ঈমানদার না বেঈমান আন্দোলনে প্রমাণ হবে’। ‘বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে’ বিএনপির সিনিয়র নেতা, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক এমপি, বর্তমান এমপিদের প্রমাণ দেয়া তারা বেঈমান না ঈমানদার।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা’ এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘অনুমতি ছাড়া সভা করার সক্ষমতা বিএনপির নেই’ মন্তব্যে নানান কথাবার্তা বলছেন। কার কথা সঠিক তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে দেশের মানুষ। (তথ্য সংগৃহীত )



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: