ঢাকা | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

স্ত্রী সংসর্গে গোপনে জন্মনিরোধক সরানো ধর্ষণ!

Admin 1 | প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৮:৫৫

Admin 1
প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৮:৫৫

স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সংসর্গের সময় স্ত্রীকে না জানিয়ে মাঝপথে হুট করে জন্মনিরোধক (কনডম) সরিয়ে ফেলা যৌন নির্যাতনের শামিল—যা ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে। 


গত সোমবার নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘কলাম্বিয়া জার্নাল অব জেন্ডার অ্যান্ড ল’-এর একটি আইনবিষয়ক গবেষণায় এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওমেন’স ল সেন্টারের লিগ্যাল ফেলো আলেজান্দ্রা ব্রোডস্কি।

আলেজান্দ্রা ব্রোডস্কি গবেষণায় বলেন, শারীরিক সংসর্গের সময় স্ত্রীকে না জানিয়ে মাঝপথে হুট করে কনডম সরিয়ে ফেলা যৌন নির্যাতনের শামিল। এটা ধর্ষণের পর্যায়েও পড়ে। তিনি বলেন, শারীরিক সংসর্গের সময় এই ঘটনাটি সঙ্গী-সঙ্গিনীদের মাঝে নিয়মিত ঘটে। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার সঙ্গিনী ভয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন না। এটা আইনের দৃষ্টিতেও যৌন নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। তা ছাড়া এ ঘটনায় স্ত্রী বা সঙ্গিনীর যৌন রোগের সংক্রমণ ও অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

হাফিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওমেন’স ল সেন্টারের এই লিগ্যাল ফেলো বলেন, এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্যগুলোর একটি হচ্ছে, এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা, যার মাধ্যমে মানুষ এসব সমস্যা ও অভিজ্ঞতার ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে। এ ছাড়া ‘মন্দ যৌনতা’ ও ‘যৌন নির্যাতনের’ মতো বিষয়গুলো প্রতিহত করতে পারে।


প্রতিবেদনে বলা হয়, আলেজান্দ্রা ব্রোডস্কিকে এ গবেষণায় সহযোগিতা করেছেন পিএইচডি শিক্ষার্থী রেবেকা। তিনি মূলত ধর্ষণসংক্রান্ত হটলাইনে কাজ করতেন। তিনি বলেন, কাজ করার সময় অসংখ্য নারীর ফোন তিনি পেয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, শারীরিক সংসর্গের সময় তাঁদের না জানিয়ে মাঝপথে হুট করে স্বামী বা সঙ্গী কনডম গোপনে সরিয়ে ফেলতেন। এমনকি রেবেকার নিজেরও এ ধরনের যৌন নির্যাতনের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।

গবেষণা সহযোগী রেবেকা বলেন, ‘সবার অভিজ্ঞতাই একই ধরনের। এটা ঠিক ধর্ষণ কি না, তা আমি নিশ্চিত নই। তবে ওই নারীরা এর মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কিন্তু সঙ্গীকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেন না। তাঁরা বুঝতে পারছেন না, তাঁদের ওই সময় কী করা উচিত।’

আলেজান্দ্রা ব্রোডস্কি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পুরুষেরা যৌন সংসর্গ করার সময় মাঝপথে কনডম সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন ও নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেখানে অনেকেই যৌন নির্যাতনের মতো এমন কাজ করেও গর্ব বোধ করেন।


আলেজান্দ্রা ব্রোডস্কি আরও বলেন, এ ধরনের আচরণের কারণে, না চাইলেও নারীদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া যৌন রোগের সংক্রমণ হয়, যাতে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন নারীরা। এ কারণেই এটা সবমিলে একধরনের ভয়ানক যৌন নির্যাতন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার এক নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্রোডস্কি। ওই নারী জানিয়েছেন, শারীরিক সংসর্গের সময় স্বামী যখন মাঝপথে গোপনে কনডম গোপনে সরিয়ে ফেলেন, তখন মনে হয় ‘কেউ আমাকে ধর্ষণ করছে’।

গবেষণার শেষে ব্রোডস্কি বলেছেন, এ ধরনের যৌন নির্যাতন বর্তমানে যে আইন প্রচলিত আছে, তার আয়ত্তে আসে না। তাই এ ব্যাপারে নতুন আইন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, অসংখ্য নারী এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে প্রতিহত বা প্রতিরোধ করবেন, তা তাঁরা জানেন না।

এ রকম আচরণের কারণে গত জানুয়ারিতে এক ব্যক্তিকে ধর্ষণের দায়ে সাজা দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের একটি আদালত। এ সময় আদালত বলেছেন, নারী যদি বুঝতে পারেন যে তাঁর সঙ্গী গোপনে কনডম খুলে ফেলেছেন, তাহলে তিনি চাইলে ওই সময় আর যৌন সংসর্গ না-ও করতে পারেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: