-2020-05-15-02-18-10.jpeg)
শবে কদর> (আরবি ভাষায়: لیلة القدر) আরবিতে লাইলাতুল কদর। এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এ রাতে ইসলামের মহানবী, মুহাম্মদের অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত। কুরানের বর্ননা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর উপাসনা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর মাহে রমজানে এই মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর মুসলিমদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে বলে তারা বিশ্বাস করে।
মাহে রমজানে শবে কদরের রাত ইসলামী শরীয়ত মতে ফজিলতের দিকে দিয়ে অনেক বড়। এ রাতেই সুরা কদরের মাধ্যমে ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছে।
এই রাতকে মহান আল্লাহ তা`আলা নিজেই হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন। এ রাতকে যে কাজে লাগাতে পারেনি আল্লাহর প্রিয় হাবিব (সা.) তাকে বড় হতভাগা বলেছেন।
উম্মতগণ চাইলে এ রাতকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেন। এ রাতের প্রত্যেকটি আমল আল্লাহর দরবারে গৃহিত হয়। কেবল কয়েক শ্রেণির মানুষ ছাড়া বাকী সবার দোয়া কবুল হয়। মাত্র একরাতের আমল দিয়ে নিজেকে জান্নাতি বানানোর সুযোগ করে দিয়েছে শবে কদর।
শবে কদরে চার শ্রেণির মানুষকে ক্ষমা করা হবে না, তাদের কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না যতক্ষণ না তারা এসব অপকর্ম থেকে সংশোধন হবে। এই চার শ্রেণির মানুষ হলো, এক- মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, দুই- মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, তিন- আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, চার- হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী ও সম্পর্কছিন্নকারী। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৩৬ পৃষ্ঠা)।
শবে কদর এমন একটি মহিমান্বিত রাত যে রাত সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, হযরত জিব্রাইল (আ.) এর নেতৃত্বে ফেরেশতারা পৃথিবীতে চলে আসেন। প্রত্যেকের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন, যারা দাঁড়িয়ে কিংবা বসে এবাদত করে থাকেন। (জিয়াউল কোরআন, ৫ম খণ্ড)।
শবে কদরের দোয়া
وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَرَأيْتَ إِنْ عَلِمْتُ أَيُّ لَيلَةٍ لَيْلَةُ القَدْرِ مَا أَقُوْلُ فِيهَا ؟ قَالَ: «قُولِي: اَللهم إنَّكَ عَفُوٌ تُحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنّي». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
বাংলা অনুবাদ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন, যদি আমি (ভাগ্যক্রমে) শবে কদর জেনে নিই, তাহলে তাতে কোন (দোয়া) পড়ব? তিনি বললেন, এই দোয়া, “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নী।” অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা ভালবাসো। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। [তিরমিযি ৩৫১৩, ইবন মাজাহ ৩৮৫০]
কোরআন শরীফে সূরা ক্বদর
বাংলা উচ্চারণঃ
ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কাদরি, ওয়ামা আদরাকা মা লাইলাতুল কাদরি, লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর, তানাযযালুল মালাইকাতু ওয়াররূহ, ফিহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরিন, সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজর।
বাংলা অর্থঃ
নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।
سورة القدر:
إِنَّآ أَنزَلۡنَـٰهُ فِى لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ
وَمَآ أَدۡرَٮٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ
لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٌ۬ مِّنۡ أَلۡفِ شَہۡرٍ۬
تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيہَا بِإِذۡنِ رَبِّہِم مِّن كُلِّ أَمۡرٍ۬
سَلَـٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ
মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এই রাত সর্ম্পকে হাদিস শরীফে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এমনকি মুসলমানদের প্রধান ধর্মী গ্রন্থ আল কোরআনে সূরা ক্বদর নামে স্বতন্ত্র একটি পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে। এই সুরায় শবে কদরের রাত্রিকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলাম ধর্ম মতে, মুহাম্মদ এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারনে বহু বছর আল্লাহর ইবাদাত করার সুযোগ পেতেন। কোরান ও হাদীসের বর্ননায় জানা যায়, ইসলামের চার জন নবী যথা আইয়ুব, জাকরিয়া , হিযকীল ও ইউশা ইবনে নূন প্রত্যেকেই আশি বছর স্রষ্টার উপাসনা করেন এবং তারা তাদের জীবনে কোন প্রকার পাপ কাজ করেননি। কিন্তু মুহাম্মদ থেকে শুরু করে তার পরবর্তী অনুসারীগণের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে স্রষ্টার আরাধনা করে পূর্ববর্তীতের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভপর নয় বলে তাদের মাঝে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়। তাদের এই আক্ষেপের প্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা দুর করার জন্য সুরা ক্বদর নাজিল করা হয় বলে হাদিসের বর্ননায় জানা যায়।
শবে কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত
পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘শবে বরাত’ ও শবে বরাতের হাদিসগুলোর বর্ণনা নিয়ে হাদিস বিশেষজ্ঞ ও ফকিহদের মধ্যে যে সংশয় রয়েছে। লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে তার কোনোই অবকাশ নেই। পবিত্র কুরআন, নির্ভরযোগ্য হাদিস ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর লাইলাতুল কদরের জন্য গৃহীত কর্মতৎপরতা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ সম্মানিত রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেতেও উত্তম ও কল্যাণময়’ (সূরা আল কদর : ১-৩)। এই রাত কোন মাসে ? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমজান এমন মাস যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: