ঢাকা | মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

আজ থেকে সারাদেশের ন্যায় মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদীতে  আগামী ২২ দিন ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ।

ahsanul islam | প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০৯:১৮

ahsanul islam
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০৯:১৮

মোঃ আহসানুল ইসলাম আমিন,মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ

মা ইলিশ রক্ষায় সারাদেশের ন্যায় মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদীতে  প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারের উপর  আজ ১৪ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।

প্রজনের এই মৌসুম নির্ধারিত এই সময়সীমার মধ্যে ইলিশ মাছ ধরা,পরিবহন, বাজারজাত ও মজুদ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সরকার।

এই অংশ হিসেবে সারাদেশের ন্যায় মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকছে আগামী ২২ দিন।

এ নিয়ে পদ্মা নদী সংলগ্ন উপজেলা গুলোতে ইলিশ শিকার বন্ধে চলছে প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি।

সভা সমাবেশ, মাইকিং, অভিযান ও মোবাইল কোর্টসহ জেলেদের প্রনোদনার জন্য হচ্ছে আলোচনা,তবে অর্থ সংকটে ভেস্তে যেতে পারে এসব অভিযান।

বিগত দুই বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ইলিশ ধরা বন্ধের এই সময়টাতে ইলিশ ধরতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে  জেলেরা।মাছ ধরার ট্রলার, নৌকা ও জাল চুন-কালি ও তেল দিয়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তারা।

মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরতে এখন জেলেদের মাঝে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ইলিশ শিকার করতে তৈরী করেছেন নতুন নতুন ট্রলার, নৌকা আর জাল।এক ধরনের ব্যস্ত সময় পাড় করেছে পদ্মাপাড়ের জেলে পাড়ার জেলেরা।

সরেজমিন দেখা গেছে,মা ইলিশ শিকারের সময়টা যেন পদ্মাপাড়ের জেলেদের জন্য এক আর্শিবাদ। সরকার ঘোষিত ইলিশ শিকার নিষেধাজ্ঞার এই সময় জেলেদের শুরু হয় উৎসব।কোন বাঁধা যেন এদেরকে আটকাতে পারেনা।

বিগত দুই বছরে এ রকম উৎসব থেকে এবার তারা আরও জোরালোভাবে পদ্মায় ইলিশ শিকারের  প্রস্ততি নিচ্ছে।

গত বছর ইলিশ শিকার বন্ধের মৌসুমে লৌহজং সহ এর আশপাশের উপজেলায় পদ্মা নদীতে ছিলো ইলিশ শিকারের মহা উৎসব। নদীতে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে।

নদীর পাড়েই বসেছিল অস্থায়ী মাছের হাট। কতিপয় অসাধু জেলে ইলিশ ধরেছে নির্বিচারে।কিছু অসাধু ব্যক্তির সহযোগিতায় জেলেরা অর্থের বিনিময়ে অসাধু কর্মকর্তা কর্মচরীদের ম্যানেজ করে অভিযানের খবর আগেই জেনে যেতো। ফলে অভিযানের সময় ইলিশ শিকার বন্ধ রাখতো জেলেরা।

নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত নদী থেকে চলে গেলে আবারও শুরু হতো ইলিশ শিকারের উৎসব।

অভিযোগ রয়েছে নৌ-পুলিশ, থানা পুলিশ ও কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে ,এসব সংস্থার বিশেষ টোকেনে প্রতিদিন নৌকা প্রতি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে নদীতে চলেছে অনেকটা খোলামেলা ভাবেই চলেছে ইলিশ নিধন।এমন কি মুন্সীগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা নিজে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে কোস্টগার্ডের সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

এছাড়া নৌ-পুলিশের অভিযানে জেলেদের ধাওয়া খেয়ে গুলি করার ঘটনাও ঘটে মুন্সীগঞ্জের পদ্মারচরে।

বিগত বছরগুলোতে জেলেরা ছিল বেপরোয়া,পেশাদারী জেলেদের বাইরেও নদীতে ইলিশ ধরতে নেমেছে অনেকেই। ছোট ছোট স্পিডবোর্ট দিয়েও স্কুল কলেজের ছেলেরা ইলিশ ধরেছে লৌহজংয়ের পদ্মায়। প্রশাসনের অভিযানে জেলেদের কলেজ পড়–য়া সন্তান ও আটক হয়েছে। তবে তার ভবিষ্যৎতের কথা বিবেচনায় রেখে তার জেল দেয়নি।

বিগত বছরগুলোতে নদীর পাড়ে অস্থায়ী মৎস্য আড়ৎ থেকে কোটি কোটি টাকার ইলিশ বেচা কেনা হয়েছে। তবে এখানে ইলিশ সস্তা হওয়ায় পাইকারদের সাথে সাথে সাধারন আমজনতাও ইলিশ কিনতে ছুটে গেছে নদীর ধারে সেই অস্থায়ী মৎস্য আড়তে।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির জানান,এ বছর মা ইলিশ নিধন বন্ধে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না জেলেদের।

মা ইলিশ রক্ষায় সর্বাত্ত্বক চেষ্টা চালানো হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।অভিযানে ধরা পরলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক  কারাদন্ড দেওয়া হবে।

এছাড়া উপজেলার সকল বরফ কলগুলো বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলেদের নৌকাগুলো প্রশাসনের জিম্বায় নেওয়া উদ্যোগ গ্রহন তরা হচ্ছে। জনসাধারনকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জের একাধিক মৎস্য কর্মকর্তা জানান, মৎস্য অভিযান পরিচালনার জন্য যে পরিমান টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয় তা খুবই কম।পদ্মা ও মেঘনা নদীতে একটি অভিযান পরিচালনা করতে ১৫ হাজার টাকা দরকার হয়। তারপর মাইকিং, ব্যানারসহ প্রচার প্রচারনা তো রয়েছেই। যথাযথ বরাদ্ধ না পেলে প্রতিদিন অভিযান চালানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে বলেও মনে করেন মৎস্য কর্মকর্তারা ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: