
মোঃ আহসানুল ইসলাম আমিন,মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
( ছবি সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের বেদে পল্লী থেকে তোলা )
“ জলে ভাসা পদ্ম আমি শুধু পেলাম ছলনা ”। কালজয়ী এই বাংলা গানের মতন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের তালতলা বাজার সরকারি ডাক বাংলোর সংলগ্ন বেদে পল্লীর বেদেদের জীবন, জল আর ডাঙাই যাদের নিত্যসঙ্গী তারা হল বেদে , নাগরিক অধিকার আছে নেই নাগরিক সুবিধা।
( ছবিঃ সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের বেদে পল্লীর বেদেদের সাথে প্রতিবেদক আলাপকালে তোলা )
বেদে সম্প্রদায় বাংলাদেশর একটি যাযাবর জনগোষ্ঠী। নৌকায় যাদের বসবাস আগে তারা নৌকায় করে বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ভাবে অবস্থান করেলেও ভিন্ন চিত্র । সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের বেদে পল্লীর।
( ছবি সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের বেদে পল্লী থেকে তোলা )
জানা য়ায়, প্রায় যুগের পর যুগ ধরে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বিভন্ন ইউনিয়নে রয়েছে তাদের বসবাস। গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুড়ি ফিতা ফেরি করে বিক্রি আর নদীতে মাছ ধরে কোনো রকম ভাবে যতসামান্য উপার্জন দিয়ে চলছে বেদে পল্লীর বেদেদের জীবন। বেদে সম্প্রদায়ের জন্ম, বিয়ে এবং সকলের শেষ ঠিকানা যেখানে ওদেরও শেষ ঠিকানা সেখানে, মূলত স্থায়ী আবাসনের অভাবে বেদে সন্তানদের পড়ালেখার তেমন কোন সুযোগ নেই। তাই বেদে বহরের সদস্যরা স্থায়ী আবাসনের দাবী জানিয়েছেন সরকারের কাছে। স্থায়ী আবাসন হলে দীর্ঘ দিনের ভাসমান জীবন থেকে বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক ও স্থায়ী জীবন-যাপনে যুক্ত হতো তারা। তাদের সন্তানরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মত মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হতো।
( ছবি সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের বেদে পল্লী থেকে তোলা )
সরেজমিনে বেশ কয়েক দিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার সিরাজদিখান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৮টি ইউনিয়নেই রয়েছে বেদেদের বসবাস। উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের তালতলা বাজার ডাক বাংলোর পার্শ্ববর্তী ইছামতি নদীর তীর ঘেঁষে বেদে পল্লী বা বাইদ্যা পট্টি অবস্থিত। প্রায় ৫০/৫৫ টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠা এই পল্লীতে বসবাস করে ৪শতাধিক বেদে । জানা যায়, তারা বংশ পরিক্রমায় এই এলাকায় প্রায় যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। এই বেদে পল্লীর বেদেরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট প্রদান করে আসছে। আর তাদের ভোটাধিকার দেওয়া হলেও দেওয়া হয়নি কোন নারিক সুবিধ।
বেদ পল্লীর সরদার আশরাফুল জানান, আমাদের এই পল্লীতে প্রায় ৪ শতাধিক মানুষের বসবাস। আমরা মালখানগর ইউনিয়নের ভোটার। আমাদের মধ্যে প্রায় ২৫০ জন এই এলাকার নাগরিক, তবে আমাদের ভাগ্যে মিলেনা কোন নাগরিক সুবিধা। নদীতে মাছ ধরে আর চুড়ি ফিতা ফেরী করে কোনো মতে চলছে আমাদের জীবন। টিভি তে দেখলাম মুজিব বর্ষ উপলক্ষে শেখ হাসিনা কতো মানুষরে ঘরবাড়ী দিলো। আমাদের কপালে সেই ঘরও জুটল না। চেয়ারম্যান মেম্বর আসে ভোটের জন্যে ভোট শেষে আর কেউ খোঁজ নেয়না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, নদীর কতো সরকারি খালি যায়গা পরে আছে । আমাদের আবাসনের জন্যে যদি একটি যায়গা দেয় আমরা নৌকার ভাসমান জীবন থেকে ডাঙ্গায় বসবাস করতে পারব।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, আমরা বেদেরে ব্যাপারে আন্তরিক। বেদেরা যদি ভোটাধিকার পেয়ে থাকে সেই বেদেদের ব্যাপারে আমরা পরবর্তি পর্যায়ে ব্যাবস্থা গ্রহন করব । এই উপজেলাতে ৩০৪জন ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। সকলেই এখনো ঘর পায়নি। আমরা প্রথম পর্যায়ে ২৫জনকে ভূমিহীন পরিবারের মাঝে এই ঘর দিতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রির অভিপ্রায় অনুযায়ি আমরা পর্যায়ক্রমে সকলকে এই ঘর দেয়ার ব্যাবস্থা গ্রহন করব।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: