
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় এক মাদ্রাসা-ছাত্রের উপর মুঠোফোন চুরির অভিযোগ আনা হয় এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে সেই মাদ্রাসা-ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আজ বুধবার বিকেলে।
ওই মাদ্রাসা-ছাত্রের নাম মামুন হাসান (২২)। তিনি মনিরামপুর উপজেলার খোজালিপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। খোজালিপুর গ্রামের মশিয়ার গাজী এবং ছকিনা বেগম এর সন্তান ছিলেন তিনি।তিনি মনিরামপুর আলিয়া মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
মামুন হাসানের মা অভিযোগ করেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৪ ঘণ্টা হাত-পা বেঁধে মামুনকে মারধর করা হয়। পরে তাঁকে একটি মসজিদের পাশে ফেলে রাখা হয়।অতঃপর আজ সকালে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ আনা হয়।
মামুন হাসানের মা ছকিনা বেগম ঘটনা বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, গতকাল রাতে বাড়িতে রাতের খাবার খাওয়ার পর মামুন আনুমানিক রাত ১১টার দিকে পাশে তাঁর খালা (রেহেনা বেগমের) দোকানে যান। তখন তাঁর বন্ধু আরমান তাঁকে ডেকে পাশে হরিহর নদের পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে দলবলসহ লোকজন এসে মামুনকে নদের পানিতে ফেলে মারধর করা শুরু করে। এরপর গ্রামের এক বাড়িতে নিয়ে হাত-পা বেঁধে তাঁকে আবার মারধর করা হয়।সেই বাড়িটি গ্রামের আয়নাল নামের এক জনের ছিল। রাত তিনটা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা তাঁকে বিরতিহীনভাবে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে দ্রুত গিয়ে ছেলেকে মরণাপন্ন অবস্থায় দেখতে পান তিনি। তাঁকে জানানো হয়, ছেলে মুঠোফোন চুরি করেছেন তাই এমন শাস্তি তিনি পেয়েছেন।অতঃপর তাঁরা পুলিশের সাহায্য নিয়ে আজ সকালে আয়নালদের বাড়ির পাশের মসজিদ সংলগ্ন স্থান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তারপর বেলা তিনটার দিকে সেখানে মামুন মারা যান।
মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক উলফাত আরার ভাষ্যমতে, আজ বুধবার ঠিক সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে মামুন হাসানকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন লক্ষ করা গেছে। আনুমানিকবেলা তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রফিকুল ইসলাম, মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন,মামুন হাসানকে মুঠোফোন চোর সন্দেহে মারধর করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকে অভিযান চলমান আছে। তিনি আরো বলেন, নিহত মামুনের লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। ময়নাতদন্তের উদ্দেশ্যে লাশ কাল বৃহস্পতিবার যশোর (২৫০ শয্যাবিশিষ্ট) জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং অপরাধীদের যথাযথ আইনের আওতায় শীঘ্রই আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: