
দীর্ঘ ৭২ বছর ধরে ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান-রহস্যের কূলকিনারা হয়নি। এ নিয়ে রয়েছে জোর বিতর্ক। দেশবাসী বা ভারত সরকার নেতাজির অন্তর্ধান বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এই অবস্থায় সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনে একজন নাগরিক এ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইহাকু উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই জবাব নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। মন্ত্রণালয়ের এ বক্তব্য মেনে নেয়নি নেতাজির পরিবারের একাংশ।
১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানের তাইহাকু বিমানবন্দর থেকে নেতাজি উড়োজাহাজে চড়েন। এরপর থেকে নেতাজির আর কোনো সন্ধান মেলেনি। যদিও সেই উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ে। তাই মনে করা হচ্ছিল, ওই দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছিল। এই বক্তব্যকে এখনো মেনে নেয়নি নেতাজির ভক্তরা। তাঁর বংশধর বা নেতাজির গড়া দল ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরাও তা মেনে নেননি। ফলে নেতাজির অন্তর্ধান-রহস্য রহস্যেই থেকে যায়। মাঝে একবার উত্তর প্রদেশের এক সাধু গুমনামি বাবা বা ভগবানজিকে নেতাজির মতো দেখতে লাগায় তাঁকে নেতাজি হিসেবে দাবি করেছিল অনেকে। কিন্তু তাতে স্বীকৃতি দেয়নি নেতাজির পরিবার বা তাঁর দল ফরোয়ার্ড ব্লক। গুমনামি বাবা এখন বেঁচে নেই।
নেতাজির অন্তর্ধান-রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ভারত সরকার ১৯৫৬ সালে শাহনেওয়াজ কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্য ছিলেন তিনজন। এই কমিটিও নেতাজির অন্তর্ধান-রহস্যের কিনারা করতে পারেনি। এরপর ১৯৭০ সালে গঠিত হয় সাবেক বিচারপতি জিডি খোসলার নেতৃত্বে খোসলা কমিশন। এই কমিশন শাহনেওয়াজ কমিটির রিপোর্টের সঙ্গে একমত পোষণ করায় তিমিরেই থেকে যায় এ রহস্য। ফের ১৯৯৯ সালে সাবেক বিচারপতি মনোজ কুমার মুখার্জির নেতৃত্বে গঠিত হয় মুখার্জি কমিশন। সেই কমিশনও এ রহস্যের কিনারা করতে পারেনি।
এ বছরের এপ্রিল মাসে সায়ক সেন নামের এক ব্যক্তি তথ্য অধিকার আইনে জানতে চান গুমনামি বাবা বা ভগবানজি সম্পর্কে। তাঁর প্রশ্ন ছিল নেতাজির অন্তর্ধান নিয়ে। সেই প্রশ্নের জবাবে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইহাকু উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই দাবিকে মেনে নিতে পারছেন না নেতাজির পৌত্র রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি চন্দ্রকুমার বসু। তিনি বলেছেন, বিষয়টির এখনো ফয়সালা হয়নি। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্য তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। বিষয়টি তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নজরে আনবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আগে আমার পরিচয় আমি বসু পরিবারের সন্তান, তারপরে বিজেপি। আমাদের প্রথম কর্তব্য হবে নেতাজির অন্তর্ধান-রহস্যের সমাধান করা।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন তিনি।
তবে তাঁর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন নেতাজির ভাইয়ের ছেলের স্ত্রী ও সাবেক সাংসদ কৃষ্ণা বসু। কলকাতার একটি সংবাদপত্রকে তিনি বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত সঠিক। এটা সত্যি। আমরাও এটা বিশ্বাস করি। স্বয়ং নেতাজির কন্যা অনিতাও উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নেতাজি মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তাই এটা নিয়ে অন্যথা ভাববার বিষয় নেই।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: