ঢাকা | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ ফজলুল হক মনি: বাংলাদেশের যুব রাজনীতির পথিকৃৎ

মাহবুবুর রহমান পলাশ | প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৮

মাহবুবুর রহমান পলাশ
প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৮

বাংলাদেশে যুব রাজনীতির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি। বাংলাদেশের যুব রাজনীতির পথিকৃৎ এ মানুষটিকে বয়সের কারণে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্যে হয়নি। কিন্তু যুব রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে যুব রাজনীতির পুরোধা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতার সম্পর্কে দিন দিন জানার আগ্রহ তৈরি হয়।
১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় ঐতিহাসিক শেখ পরিবারে জন্ম নেন শেখ ফজলুল হক মনি। তার বাবা মরহুম শেখ নূরুল হক বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও মা মেজো বোন আছিয়া খাতুন।
১৯৫৬ সালে ঢাকার নবকুমার থেকে ম্যাটিক, ১৯৫৮ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়)ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬০সালে বরিশালের বি.এম কলেজ থেকে বি.এ এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা ভার্সিটি থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ এবং পরবর্তী সময়ে এলএলবি পাস করেন। ছাত্র অবস্থায় শেখ মনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬০-৬৩ সালে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬২সালে কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে আটক হন এবং ৬ মাস বিনা বিচারে আটক থাকার পর মুক্তি পান। গণবিরোধী শিক্ষানীতি ও সরকারের দমন-পীড়ন এর প্রতিবাদে ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে তদানীন্তন গর্ভনর মোনায়েম খানের হাত থেকে ডিগ্রি সার্টিফিকেট না নিয়ে আন্দালনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শেখ মনির এম এ ডিগ্রি কেরে নেয়া হয়।কিছুদিন পর তিনি গ্রেফতার হন।
১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাকে দেশ রক্ষা আইনে আটক রাখা হয়। এসময় তার বিরুদ্ধে বেশকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু প্রণিত স্বাধিকার সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনে ঢাকা নারায়নগঞ্জের শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত করেন। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে ছিলেন। ঐতিহাসিক ৭ই জুনের হরতাল সফল করতে অসামান্য ভূমিকা রাখেন।
এ হরতাল সফল না হলে বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম পিছিয়ে যেতো। এ কারণে পাকিস্তানের সরকার তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে এবং জুলাইয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তিনি মুক্ত হন ৬৯ গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের অন্যতম পরিকল্পনাকারি ছিলেন তিনি।

 

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনি। চতুর্মুখী প্রতিভাবান এক যুবনেতা। বীর মুক্তিযোদ্ধা এ নেতা একাধারে একজন সাংবাদিক, লেখক ও বাঙালি সংস্কৃতির একনিষ্ঠ ধারক। আমরা শেখ মনিকে জানি যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালে যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি এ দেশে যুব রাজনীতির সূচনা করেন। যুবলীগের প্রথম চেয়ারম্যানও শেখ ফজলুল হক মনি।
বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে গুগল ঘেটে চমৎকার নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন এই যুবনেতার সম্পর্কে জেনে আশ্চর্য ও অভিভূত হই। যে একজন মানুষ এত গুণাবলীর অধিকারী হয় কী করে? মনে মনে খুজতে থাকি তার সম-সাময়িক রাজনীতিক কে কে আছেন। আমার ভাগ্য ভালো পেয়ে যাই সর্বজন শ্রদ্ধেয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান স্যার কে।
একদিন স্যারের কাছে শেখ মনি ভাইয়ের কথা জানতে চাইলে উত্তরে জানতে পারি স্যার ছিলেন মনি ভাইয়ের একান্ত সহচর। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং পরে প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও মুজিব বাহিনীর অন্যতম সদস্য। স্যার বললেন, মনি ভাই ছিলেন এক কথায় জিনিয়াস, বঙ্গবন্ধু মনি ভাইয়ের মেধা মনন সাহসিকতা দেখেই তার আপন ভাগ্নেকে তার সঙ্গে রাজনীতিতে এনেছিলেন।
বিজ্ঞ আইনজীবি রেজাউর স্যার বলেন, ঘাতকরা পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর আগে কেন মনি ভাইকে হত্যা করেছিল তা জানো? প্রতিউত্তরে আমি মাথা ঝুকিয়ে না সূচক বাক্য উচ্চারণ করলে স্যার বলেন চিন্তা করে দেখ উত্তর পাবে।
অ্যাড. রেজাউর রহমান স্যার ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম ভাই ছিল (পরশ-নিখিল) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউটের প্রথম অনুষ্ঠানের অতিথি রেজাউর স্যার তার বক্তব্য মনি ভাইকে নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, স্মারকগ্রন্থটি তিনটি ভাগে হলে নতুন প্রজন্ম মনি ভাইয়ের সম্পর্কে আরো জানতে পারবে।
আমি বাংলাদেশের যুব রাজনীতির পথিকৃৎকে নিয়ে লেখার সাহস করছি আমার মানসিক শক্তি দিয়ে কিন্তু যত গভীরে যাচ্ছি ভয়ও পাচ্ছি আবার এমন একজন গুণীজন সম্পর্কে লিখতে উত্তেজনাও অনুভব করছি! আজ ৪ ডিসেম্বর যুব রাজনীতির আইকন এ নেতার জন্মদিন। যুব রাজনীতির সঙ্গে লাখো যুবক যুক্ত থাকলেও শেখ মনির সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি না। মুক্তিযুদ্ধে গঠিত মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন, বিমান বাহিনী গঠনের মূল চিন্তাধারা ছিল যে মানুষটির তিনি হলেন শেখ মনি।
তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক, লেখক ও বাঙালি সংস্কৃতির একনিষ্ঠ ধারক। ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক বাংলার বাণী পত্রিকা দৈনিকে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৩ সালের ২৩ আগস্ট তিনি সাপ্তাহিক সিনেমা পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৭৪ সালের ৭ জুন তার সম্পাদনায় ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস প্রকাশিত হয়। তার রচিত গল্পের সংকলন বৃত্ত ১৯৬৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়, সম্প্রতি সংকলনটি আবারও প্রকাশিত হয়েছে ‘গীতারায়’ নামে। এ সংকলনের ‘অবাঞ্ছিত’ গল্পটি নিয়ে টেলিফিল্মও হয়েছে। শিশু-কিশোরদের সংগঠন শাপলা কুঁড়ির আসরের তিনি প্রতিষ্ঠাতা।

লেখক: মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পলাশ 

সহ সভাপতি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: