
হাদীস ৪১ :
পরিচ্ছদঃ ৩৮/ পরিচ্ছদ নেই
৪৯। ইবরাহীম ইবনু হামাযা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, হিরাকল তাঁকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি উত্তর দিয়েছিলে, তারা সংখ্যায় বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপার এরূপই থাকে যতক্ষণ না তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেউ তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছ, ‘না। ’ প্রকৃত ঈমান এরূপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না।
হাদীস ৪২ :
পরিচ্ছদঃ ৩৯/ দ্বীন রক্ষাকারীর ফজিলত
৫০। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানেনা। যে ব্যাক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, উদহারন সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহ্র সংরক্ষিত চারণভুমির আশে পাশে চরায়, অচিরেই সেগুলো সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহ্রই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হল তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল কলব।
হাদীস ৪৩:
পরিচ্ছদঃ ৪০/ গণীমতের এক পঞ্চমাংশ প্রদান ঈমানের অন্তর্ভুক্ত
৫১। আলী ইবনুল জা’দ (রহঃ) আবূ জামরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সঙ্গে বসতাম্ তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন। একবার তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে থেকে যাও, আমি তোমাকে আমার সম্পদ থেকে কিছু অংশ দেব। আমি দু’ মাস তাঁর সঙ্গে অবস্থান করলাম। তারপর একদিন তিনি বললেন, আবদুল কায়েসের একটি প্রতিনিধি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কোন্ কওমের? অথবা কোন্ প্রতিনিধিদলের? তারা বলল, রাবী‘আ গোত্রের। ’ তিনি বললেনঃ মারহাবা সে গোত্র বা সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত না হয়েই এসেছে। তারা বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষিদ্ধ মাসসমূহ ছাড়া অন্য কোন সময় আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না। (কারন) আমাদের এবং আপনার মাঝখানে মুযার গোত্রীয় কাফিরদের বাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট হুকুম দিন, যাতে আমরা যাদের পিছনে রেখে এসেছি তাদের জানিয়ে দিতে পারি এবং যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তারা পানীয় সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করল। তখন তিনি তাদের চারটি জিনিসের নির্দেশ এবং চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তাদের এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আদেশ দিয়ে বললেনঃ ‘এক আল্লাহ প্রতি ঈমান আনা কিভাবে হয় তা কি তোমরা জানো?’ তাঁরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। ’ তিনি বললেনঃ ‘তা হল এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের সিয়াম পালন করা; আর তোমরা গণীমতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। তিনি তাদেরকে চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তা হলঃ সবুজ কলসী, শুকনো লাউয়ের খোল, খেজুর গাছের গুঁড়ি থেকে তৈরীকৃত পাত্র এবং আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র১। রাবী বলেন, বর্ণনাকারী ( এর স্থলে) কখনও উল্লেখ করেছেন (উভয় শব্দের অর্থ একই)। তিনি আরো বলেন, তোমরা এগুলো ভালো করে আয়ত্ত করে নাও এবং অন্যদেরও এগুলি জানিয়ে দিও।
হাদীস ৪৪ :
পরিচ্ছদঃ ৪১/ আমল নিয়ত ও সওয়াব আশা অনুযায়ী
৫২। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলাম (রহঃ) ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত এবং প্রত্যেক মানুষের প্রাপ্য তার নিয়ত অনুযায়ী। অতএব যার হিজরত হবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল -এর উদ্দেশ্যে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল -এর উদ্দেশ্যে হয়েছে বলেই গণ্য হবে। আর যার হিজরত হয় দুনিয়া হাসিলের জন্য বা কোন নারীকে বিয়ে করার জন্য, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।
হাদীস ৪৫ :
পরিচ্ছদঃ ৪১/ আমল নিয়ত ও সওয়াব আশা অনুযায়ী
৫৩। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ তার পরিবারের জন্য সওয়াবের নিয়তে যখন খরচ করে তখন তা হয় তার সদকা স্বরূপ।
হাদীস ৪৬:
পরিচ্ছদঃ ৪১/ আমল নিয়ত ও সওয়াব আশা অনুযায়ী
৫৪। হাকাম ইবনু নাফি’ (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যা-ই খরচ কর না কেন, তোমাকে তার সওয়াব অবশ্যই দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও। ’
হাদীস ৪৭:
পরিচ্ছদঃ ৪২/ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানীঃ দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করা, আল্লাহর রেজমন্দির জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলিম নেত্রীবৃন্দের জন্য এবং সকল মুসলিমের জন্য।
৫৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়’আত গ্রহণ করেছি সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করার, যাকাত দেওয়ার এবং সকল মুসলিমের কল্যাণ কামনা করার।
হাদীস ৪৮ :
পরিচ্ছদঃ ৪২/ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানীঃ দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করা, আল্লাহর রেজমন্দির জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলিম নেত্রীবৃন্দের জন্য এবং সকল মুসলিমের জন্য।
৫৬। আবূ নু‘মান (রহঃ) যিয়াদ ইবনু ‘ইলাকা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ)১ যেদিন ইন্তেকাল করেন সেদিন আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছ থেকে শুনেছি, তিনি (মিম্বরে) দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করে বললেন, তোমরা ভয় কর এক আল্লাহকে যাঁর কোন শরীক নাই, এবং নতুন কোন আমীর না আসা পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখ, অনতিবিলম্বে তোমাদের আমীর আসবেন। এরপর জারীর (রাঃ) বললেন, তোমাদের আমীরের জন্য মাগফিরাত কামনা কর, কেননা তিনি ক্ষমা করা ভালবাসতেন। তারপর বললেন, একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, আমি আপনার কাছে ইসলামের বায়’আয় গ্রহণ করতে চাই। তিনি (অন্যান্য বিষয়ের সাথে) আমার উপর শর্ত আরোপ করলেনঃ আর সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করবে। তারপর আমি তাঁর কাছে এ শর্তের উপর বায়’আত গ্রহণ করলাম। এ মসজিদের রবের কসম! আমি তোমাদের কল্যাণকামী। এরপর তিনি আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করলেন এবং (মিম্বর থেকে) নেমে গেলেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: