ঢাকা | শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতেও ডিজিটাল পদ্ধতির অনন্য অবদান

amaderodhikarpatra@gmail.com | প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:২৫

amaderodhikarpatra@gmail.com
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:২৫

 
sharethis sharing button


ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ : নবজাতকের আগমনী বার্তায় একদিকে যেমন ছিলো আনন্দ, তেমনি ছিলো উদ্বেগও। ফারজানা আক্তার (২৮) ও তার দিনমজুর স্বামী ছয় সদস্যের সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন। তার ওপর নতুন অতিথির আগমনে আগামীদিনের অজানা আশংকাও অনুভব করছিলেন। এই উদ্বেগের মধ্যেই যেন দরিদ্র পরিবারের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এলো মাতৃত্বকালীন ভাতা কর্মসূচি। সারাদেশের অনেক দরিদ্র মায়ের মতোই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী (এসএসএন) কর্মসূচির আওতায় মাতৃত্বকালীন ভাতা পেয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত হন তারা।  
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে বসবাসকারী ফারজানা বলেন, 
“গর্ভাবস্থায় এবং সন্তানের জন্মের পরে আমার এবং বাচ্চার জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করা খুব কঠিন ছিল। তাই, আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু, যখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসাবে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে পাওয়া শুরু হলো তখন আমি খানিকটা স্বস্তি পেলাম। ”
ফারজানা অনলাইন ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়া চালু করার উদ্যোগের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এখন ভাতা পাওয়া সহজ ও স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। অনলাইনে ভাতা বিতরণ করায় আমি সময়মত টাকা পাই এবং  বাচ্চাদের প্রয়োজনমত টাকা খরচ করতে পারি। আমার শ্বশুর, শাশুড়ী, ছয় বছরের ছেলে এবং নয় মাসের মেয়ে নিয়ে আমার পরিবার। আমার স্বামীর আয়ও ভালো, কিন্তু, ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই আমি খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম।  তিনি বলেন, “মাতৃত্বকালীন ভাতার পরিমাণ কম, কিন্তু আমার ছোট সন্তানের অতিরিক্ত খরচ বহন করার জন্য এটি খুবই সহায়ক।”
একই উপজেলার ফাতেমা বেগমও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা পাচ্ছেন, যা তার পাঁচ মাসের মেয়ের খরচ বহন করতে সহায়ক। তিনি বলেন, আমি আমার সদ্যজাত শিশুর জন্য উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমার দিনমজুর স্বামীর পক্ষে আমার ছোট্ট বাচ্চার ঠিকমতো খাবার যোগান দেয়া খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু, সরকারি সহায়তা আমাদের সেই কষ্ট অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অপারেটরদের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ ব্যবস্থা চালু করায়  প্রক্রিয়াটি সহজ এবং আরামদায়ক হয়েছে। ফারজানা আক্তার এবং ফাতেমা বেগম এর মতোই বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাধীন লাখ লাখ সুবিধাভোগী এই সুবিধা ভোগ করছে। যা একটি বৃহত্তর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবন নির্ভরতা কমাতে অবদান রাখছে।
এসব সহায়তার মধ্যে রয়েছে বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আয়ের নিরাপত্তা বিধান, কর্মক্ষম বয়সের পুরুষ ও মহিলাদের জন্য অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অল্পবয়সী মা ও শিশুর সুস্থ বিকাশে সহায়তা করা।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গরীব এবং হত দরিদ্রদের কাছে নগদ অর্থ স্থানান্তর ছাড়াও, সরকার বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং ভূমিকম্পের মতো জরুরী পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ত্রাণ এবং নগদ টাকা স্থানান্তর কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্যোগ কবলিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করে থাকে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৫,৮৮৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে- বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন লোকেদের জন্য ভাতা বা সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ভাতা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রদের জন্য এমএফএস অপারেটর এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতা। 
ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্প্রসারণ ও নিবিড় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এটুআই যৌথভাবে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (ডিএফএস) ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছে। এটুআই দারিদ্র্য সমর্থক ডিজিটাল আর্থিক পণ্য এবং পরিষেবা তৈরিকে উৎসাহিত করে। এ লক্ষ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারীদের  যৌথ সমন্বয়ে এসব পরিষেবা তৈরি, বিকাশ এবং পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, কৌশল এবং নকশা নীতি সরবরাহ করে থাকে।
ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি চালু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মূল স্তম্ভ। এরই ধারাবাহিকতায়, সরকার এখন মোবাইল আর্থিক পরিষেবার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের সামাজিক সুরক্ষা ভাতা প্রদান করছে। স্টেকহোল্ডার এবং সুবিধাভোগীরা জানান, এমএফএস-এর মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বিতরণ সুবিধাভোগীদের ঝামেলা কমানোর পাশাপাশি সামগ্রিক বিতরণ প্রক্রিয়ায় সর্বোত্তম স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে। 
সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রায় ১,০৭,৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট বাজেটের ১৭.৮৩ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.১১ শতাংশ।
এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুুন কবির বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, গত এক দশকে সরকার গৃহীত সেরা উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি হল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। সুশাসন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, কর্মসংস্থান এবং  সমন্বিত সহায়তায় দেশকে ডিজিটালভাবে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করাই এর মূল লক্ষ্য।  তিনি বলেন, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং সরকার দারিদ্র্য নিরসনে সাহসী, শক্তিশালী, জনকেন্দ্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি সাহায্যে ডিজিটাইজেশন এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাতা বিতরণ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্জনে সরাসরি সহায়তা করছে।
এটুআই-এর ডিজিটাল অ্যাক্সেস ও ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. তহুরুল হাসান বলেন, ভাতা বিতরণের জন্য অতীতে মধ্যস্বত্বভোগীদের অস্তিত্ব ছিল। তবে, এমএফএস-এর মাধ্যমে ভাতা বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন তাদের প্রভাবকে অনেকাংশে হ্রাস করেছে। হাসান বলেন, কিছু লোক আছে যারা চমৎকার এই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীদের প্রতারণা করার চেষ্টা করে। তবে ভাতা বিতরণে এমএফএস-এর কভারেজ সম্প্রসারণ এবং ডিজিটাল পেমেন্টে সুবিধাভোগীদের সচেতনতা জালিয়াতি রোধ করবে।

একেএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী

বাসস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: