ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের অবাধে মত প্রকাশের অধিকার দেয়া হয়েছে।

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১২ মে ২০২২ ১৫:৪৯

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২২ ১৫:৪৯

 

 
স্কুল পড়ুয়া  সুমন  বেশ ভাল গান গায়।  ছোট্ট সুমনের মনটা আজ খুব খারাপ।  কেননা স্কুলে আজ বার্ষিক সাংস্কৃতিক  অনুষ্ঠান হচ্ছে, কিন্তু  সে যেতে পারেনি। ক্লাশ টিচার তো বটেই প্রধান শিক্ষক  স্বয়ং তাকে উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন।  খুব সুন্দর গান গাইতে পারে বলে অনুষ্ঠানের তার বেশ কয়েকটি গান গাওয়ার কথা ছিল।  কিন্তু তার মা-বাবা চান না সে গান করুক।  তাদের এক কথা.. ছেলে পড়ালেখা করে বড় হয়ে ভালো চাকরি করবে।  অনেক অর্থ  উপার্জন করবে।  ছোট থেকেই গান বাজনা করে বখে যাবে তা সা-বাবা কোনো ভাবেই মেনে নেবেন না।  তাদের বৃদ্ধ বয়সে ছেলেই তো সংসারের দায়িত্ব নেবে।  তাদের খাওয়াবে-পরাবে।  ছোট্ট সুমনের মতের কোনো দাম আছে নাকি!

কিন্তু সুমনেরও যে ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে সেটি কোনভাবেই  বাবা-মাকে বোঝাতে পারে না। স্কুলের  শিক্ষক  যে বলেন, ‘সুমন তুমি খুব  সুন্দর গান করো। নিশ্চয়ই বড় হয়ে তুমি বিরাট গায়ক হবে। দেশ বিদেশের মানুষ তোমাকে চিনবে।  ভবিষ্যত নিয়ে তোমাকে ভাবতেই হবে না।’
 কিন্তু বাবা মাকে অনেক বলার পরও কোন লাভ হয়নি।  উল্টো মার খেতে হয়েছে। এসবের কারণে পড়াশোনাতেও মন বসাতে পারে না সুমন। তার কিছু  ভালো লাগে না!
আসলে কেবলমাত্র সুমন একা নয়, এই কষ্ট আসলে আমাদের সমাজের অনেক শিশুর মধ্যেই রয়েছে। পড়াশোনার বাইরেও যে বিশেষ গুণাবলীর দ্বারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় তা অনেক মা-বাবাই মেনে নিতে চান না। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে সমাজ বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সামাজিক বিকাশে ও সমাজের অমূল পরিবর্তন এবং উন্নতিতে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সকলের মতামতসহ পূর্ণ অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন।
সমাজের সকলের মতো শিশুদেরও সমাজে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, রয়েছে অধিকার। শিশুর অংশগ্রহণের অধিকার বলতে সাধারণভাবে বুঝায় তাদের নিজেদের জীবন এবং সমাজ জীবনে একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করার অধিকার। 
শিশুদের অংশগ্রহণের বিশেষ কয়েকটি অধিকারের মধ্যে রয়েছে অন্যের সাথে অবাধে মেলামেশার অধিকার, তথ্য ও ধারণা শেয়ার করা , গ্রহণ করা ও তা  প্রকাশের অধিকার এবং মতামতের অধিকার।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ধারা- ১২’তে শিশুদের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত সব বিষয়ের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অবাধে মত প্রকাশের অধিকার দেয়া হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের সাথে সাথে আমাদের দেশও এই অধিকার বাস্তবে রূপদানে উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাস্তব পরিস্থিতি কিছুদিন আগেও তেমন অনুকূলে ছিল না। 
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায় সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘অধিকাংশ স্বল্প শিক্ষিত কিংবা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত পরিবারগুলোয় প্রায় ক্ষেত্রেই শিশুদের অপরিণত হিসাবে মনে করে.. তাদের মতামতকে খুবই কম গুরুত্ব দেয়া হয় অথবা আদৌ দেয়না।  শিশুরা তাদের মা-বাবা বা অভিভাবকের হেফাজতে থাকে এবং তারাই তার পক্ষে অধিকাংশ সিদ্ধান্তু গ্রহণ করেন। যা একেবারেই ঠিক নয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার ধরন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসস্থান বা কি ধরনের জীবন ব্যবস্থা অনুসরন করা হবে সচরাচর তা নির্ধারণ করেন মা-বাবা বা অভিভাবক।  অবশ্য শিক্ষিত শহুরে মধ্যবিত্ত্ব শ্রেণী বা উচ্চ শ্রেণীর পরিবারে এর কিছুটা ব্যাতিক্রম লক্ষ্য করা যায়।’
তবে  ভাল দিক হচ্ছে- সরকারের বিশেষ উদ্যোগের ফলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই অনুকূলে এসেছে।  তবে শিশুদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে  প্রথম ও প্রধান যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন তা-হলো সমাজের সকলের মাঝে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। 
পরিবারের ভেতর অভিভাবকেরা যদি তার শিশু সন্তানটির মতামত বিবেচনায় নেয় এবং শিশুটি যদি বুঝতে পারে সংসারে তারও মতামতের একটি স্থান আছে, গুরুত্ব আছে তবে সেই শিশুটি পরবর্তিতে হয় বিচক্ষণ। তার চারিত্রিক গঠন ও মেধা বিকাশের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
দেখা যায় পরবর্তীতে সে একজন দায়িত্ববান মানুষ হিসাবে সমাজে আত্বপ্রকাশ করে। শিশুর মত প্রকাশের স্বাধীনতা শুধু মাত্র শিশুর মেধার বিকাশ বা তার অধিকারের স্বার্থেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজ, সংসার সর্বোপরি দেশও এর ফলে ভবিষ্যতে লাভ করে মেধাবী, দায়িত্বশীল এবং উদার মনোভাবাপন্ন একটি উন্নত জাতি।
কিন্তু শিশুটির মত প্রকাশের অধিকার ক্ষুন্ন হলে এক সময় দেখা যায় যে, সে তার অনাগ্রহের ফলে একজন স্বল্প শিক্ষিত, অদক্ষ ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সমাজে আত্বপ্রকাশ করে বা আদৌ সে এগুলোর কোনোটাই হয় না।  যদি দক্ষ হিসেবে সে সমাজে স্থান করে নেয়ও কিন্তু সমাজ হয়তো হারায় প্রতিভাবান একজন সঙ্গীত শিল্পী যা সে শৈশবে হতে চেয়েছিল। এক্ষেত্রে কিন্তু তার আগ্রহ ও দক্ষতাও ছিল ষোলআনা।
কাজেই শিশুদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার খর্ব না করে বরং তাদের মতামত প্রকাশে উৎসাহ দান এবং মতামতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অভিভাবকসহ সমাজের সকলের আন্তরিক হওয়া একান্ত দরকার।

 

 

বাসস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: