
মঙ্গলবার রাতের টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে কর্মমুখী মানুষদের ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে নগরজুড়ে তীব্র যান জটের পাশাপাশি পরিবহন সংকটও দেখা গেছে।
সকালে রাজধানীর মতিঝিল, বঙ্গবাজার, পল্টন, নাজিমউদ্দিন রোড ও পুরনো ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এসব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া মীরপুর, শ্যামলী, কালশী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নতুন বাজার, খিলক্ষেত, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁও, জুরাইন, পূর্বজুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বৃষ্টির কারণে খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে দুর্বিসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সকালে পরিবহন সংকট দেখা দেওয়ায় অফিসগামী মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা বড় ধরনের সমস্যা হলেও তা নিরসনে এখনও পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদের কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমরা শান্তিনগরেরর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে সফলতা পেয়েছি। নাজিমউদ্দিন রোডের জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আগস্টের মধ্যেই এর কাজ শুরু হবে। এরপর আর কোনও জলাবদ্ধতা থাকবে না। শান্তিনগরে এবছর ৮৫ ভাগ জলাবদ্ধতা কমে গেছে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্যান্য এলাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ডিএনসিসির মেয়র সাঈদ খোকন জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে তার সংস্থা থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১০ কিলোমিটার নর্দমা পরিষ্কার এবং ২৩৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৪০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ জন্য ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক জেট অ্যান্ড সাকার মেশিনও কেনা হয়েছে।
ডিএসসিসির পূর্ব জুরাইন ও ডিএনডি বাঁধ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্পের মাধ্যমে পানি অপসারণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তবে যেসব এলাকায় পাম্প ও ড্রেন বসবে বেদখল হওয়া সেসব এলাকায় প্রথমে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। এরপর পাম্পের মাধ্যমে পানি সেচ দিয়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলা হবে। ফলে এলাকার জলাবদ্ধতা কমবে বলে মনে করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। যদিও অন্যান্য বছরের মতো এবছরও এই এলাকাবাসীকে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
সম্প্রতি ডিএনসিসির বাজেট বক্তৃতায় ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল উদ্ধার অভিযানে নামছি। এরইমধ্যে ঢাকা ওয়াসা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছি। কিছু কিছু খালের মধ্যে বহুতল ভবন পর্যন্ত উঠে গেছে। এ পর্যন্ত অন্তত চার শতাধিক ভবন ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’
মূলত জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। ১৯৮৯ সালে সংস্থাটিকে পানি নিষ্কাশনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি একাজে যুক্ত হয় ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ আরও কয়েকটি সংস্থা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব পালন করলেও ঢাকা ওয়াসা তার মূল দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে এখন কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। ওয়াসার এই ব্যর্থতার দায় যাচ্ছে সিটি করপোরেশনের ওপরে। এ জন্য দুই সিটি করপোরেশন ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা তাদের অধীনে নিতে চায়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: