ঢাকা | Saturday, 18th October 2025, ১৮th October ২০২৫
.

২ লাখ টাকা বিনিয়োগে মুনাফা ১৩ কোটি!

shahidul Islam | প্রকাশিত: ২৩ July ২০১৭ ০৯:১৪

shahidul Islam
প্রকাশিত: ২৩ July ২০১৭ ০৯:১৪

অধিকারপত্র প্রতিবেদক : মোবাইল ফোনে কনটেন্ট প্রোভাইডার ভারতীয় সার্ভিস কোম্পানি 'হাঙ্গামা' বাংলাদেশে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আড়াই বছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেশে পাঠিয়েছে।

এই অস্বাভাবিক মুনাফা সম্পর্কিত তথ্যটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) জানানোর পর কমিশন পুরো বিষয়টি অনুসন্ধান করছে।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে কনটেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের ব্যবসার পরিমাণ কত, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। আবার গ্রাহকদের ভ্যালু অ্যাডেড সেবা দেওয়ার জন্য কোনো নীতিমালাও চূড়ান্ত করতে পারেনি বিটিআরসি। এ অবস্থায় ভারতীয় কোম্পানির এ দেশ থেকে অবিশ্বাস্য হারে মুনাফা বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি বিটিআরসিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো চিঠি সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিশনের সচিব সারওয়ার আলম জানান, চিঠি পাওয়ার পর হাঙ্গামার পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস ব্যবসায় এত বিপুল লাভের কোনো রেকর্ড এ পর্যন্ত কোথাও দেখা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে নিবিড় তদন্ত হওয়া উচিত এবং আসলেই 'হাঙ্গামা' কী ধরনের সেবা দিয়েছে, তাদের পার্টনার মোবাইল ফোন অপারেটর কত লাভ করেছে_ সবকিছুই বের হয়ে আসা জরুরি।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, হাঙ্গামা মূলত মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে যৌথভাবে ছবি, মিউজিক স্ট্রিমিং ডাউনলোড, ভিডিও স্ট্রিমিং প্রভৃতি ভ্যালু অ্যাডেড সেবা দেয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফায় ভারতীয় কোম্পানি হাঙ্গামার ব্যাপারে চিঠি দিয়ে বিটিআরসির কাছে এদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চায়।


চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ভারতীয় হাঙ্গামা কোম্পানির প্রারম্ভিক বিনিয়োগ ছিল দুই লাখ টাকা। এরপর আর বিনিয়োগ নেই। প্রথম দুই বছরের মধ্যেই ২০১৪ সালে 'হাঙ্গামা' কোম্পানিটি ছয় কোটি সাত লাখ ৩৩ হাজার ১২৫ টাকা লভ্যাংশ বাবদ ভারতে পাঠায়। ২০১৫ সালে লভ্যাংশ পাঠায় ছয় কোটি ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ টাকা।

সব মিলিয়ে দুই লাখ টাকার বিনিয়োগ থেকে দুই বছরের মধ্যে কোম্পানির মোট লভ্যাংশ পাঠানোর পরিমাণ ১২ কোটি ৮২ লাখ ১৪ হাজার ৩৭৫ টাকা, অর্থাৎ কোম্পানির প্রাথমিক মূলধনের প্রায় ৩২০ গুণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের তথ্য দিয়ে বিটিআরসিকে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশে হাঙ্গামার মাত্র একজন কর্মী পাওয়া গেছে। স্থায়ী কোনো স্থাপনা পাওয়া যায়নি। গুলশানে এক কক্ষের একটি অফিস রয়েছে, যেখানে নিয়মিত কোনো কার্যক্রম নেই।
বিটিআরসিকে দেওয়া চিঠিতে হাঙ্গামাকে 'শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন অখ্যাত একটি কোম্পানি' হিসেবে উল্লেখ করে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রাথমিক মূলধনের প্রায় ৩২০ গুণ লভ্যাংশ ভারতে পাঠানোর বিষয়টি 'অস্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকা ' বলেও অভিহিত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ- প্রফিট, ডিভিডেন্ড, রেমিট্যান্স শাখা) মো. আলী আকবর ফরাজী স্বাক্ষরিত চিঠিতে হাঙ্গামা যে ধরনের ব্যবসায়িক সেবা কার্যক্রম চালিয়েছে, সে ধরনের সেবাদানের জন্য কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি-না, এ জন্য শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন অখ্যাত একটি কোম্পানিকে আদৌ অনুমোদন দেওয়ার যৌক্তিকতা আছে কি-না এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের এত উচ্চমূল্যে এসব সেবা (ওয়াপ, আইভিআর, মিউজিক স্ট্রিমিং) দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রয়োজন আছে কি-না ইত্যাদি বিষয়ে অভিমত চাওয়া হয়।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, মোবাইল গ্রাহকদের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস দেওয়ার কোনো ধরনের নীতিমালার অনুপস্থিতিতে কনটেন্ট প্রোভাইডার এবং মোবাইল অপারেটররা নিজেদের খুশিমতোই এ সেবার মূল্য নির্ধারণ করে ব্যবসা চালাচ্ছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: