ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
নদীও গিলে খেয়েছে ঢাকা

জলাবদ্ধতা নিরসনে ফিরিয়ে দাও সেই খাল

shahidul Islam | প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০১৭ ১০:২৪

shahidul Islam
প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০১৭ ১০:২৪

অধিকারপত্র প্রতিবেদক : এক রাতে বদলে দেওয়া হয়েছে খালটির চেহারা। গত ঈদুল আজহার আগে রাতের অন্ধকারে বালু-মাটি দিয়ে ৩০ ফুট খালের ফুটখানেক রেখে বাকিটুকু ভরাট করে ফেলা হয়। এটি কল্যাণপুর খালের একটি শাখা, যেটি ক-খাল নামে পরিচিত। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মাহবুব মোর্শেদ সরণির (আগারগাঁও-শ্যামলী লিংক রোড) বাংলাদেশ বেতারের পাশ দিয়ে যাওয়া কামাল সরণি ঘেঁষেই খালটির অবস্থান। এলাকাবাসী এ রাস্তাটিকে ৬০ ফুট সড়ক হিসেবে চেনেন। কিছু দূর এগিয়ে বাঁয়ে বাঁক নিয়ে খালটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। সেখানে এক পাশে তৈরি হচ্ছে ১৭ তলাবিশিষ্ট মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতি শপিং কমপ্লেক্স। অবশ্য আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বর্তমানে শপিং কমপ্লেক্সের কাজ বন্ধ রয়েছে।

এটি ঢাকার খালগুলোর ভরাট-দখলের একটি চিত্র মাত্র। নগরীর খালের ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কল্যাণপুর প্রধান খালের সঙ্গে আরও ছয়টি খাল সংযুক্ত ছিল। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও বেপরোয়া ভূমি দখল তা বিলুপ্ত করেছে। এছাড়া কাটাসুর, রামচন্দ্র্রপুর, বাইশটেকি, ইব্রাহিমপুর, বাউনিয়া, আব্দুল্লাহপুর, দিয়াবাড়ী, পরীবাগ, রাজাবাজার, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, গোপীবাগ, সেগুনবাগিচা, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও-বাসাবো, ধলপুর, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও-নন্দীপাড়া, সুতিখাল, বাড্ডা শাহজাহানপুর ইত্যাদির অধিকাংশ খাল বিলীন হয়ে গেছে এবং কোনোটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। গুলশান, মহাখালী ও ধানমণ্ডির খালগুলোকে লেকে পরিণত করা হয়েছে। মেরাদিয়া ও গজারিয়া খাল পরিণত হয়েছে জীর্ণ নালায়। খিলগাঁও-বাসাবোর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ঝিলে চৈত্র-বৈশাখ মাসেও পাঁচ-ছয় হাত পানি থাকত। বর্তমানে সেখানে নোংরা বর্জ্য নিষ্কাশনের সংযোগ দেওয়ায় পানি দূষিত হয়ে গেছে। সচিবালয়, প্রেস ক্লাব, ফকিরেরপুল, পুরানা পল্টন, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী, কাকরাইল, বিজয়নগর, আরামবাগ, কমলাপুর প্রভৃতি এলাকার পানি সেগুনবাগিচা খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হতো। কালের পরিক্রমায় সেগুনবাগিচা

খালের অস্তিত্ব শুধু বিলুপ্তই হয়নি; সেখানে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল দালান-কোঠা।
শুধু খাল নয়;এ নগরী গিলে খেয়েছে দোলাই ও নড়াইয়ের মতো নদীও। রাজধানী ঢাকায় দোলাই নামে যে একটি নদী ছিল,তার অজস্র ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে। যদিও নাগরিক ভাষ্যে এটি একদা খাল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল এবং হাল আমলে দোলাই নদী ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে রাজপথ। পুরান ঢাকায় এখনও ধোলাইখাল নামে একটি এলাকা আছে, যে এলাকাটি মোটর পার্টসের দোকানের জন্য বিখ্যাত। আছে লোহারপুল ও কাঠেরপুল। পুল দুটি ছিল দোলাইয়ের ওপর। ধোলাইখাল, লোহারপুল, কাঠেরপুল, দোলাইরপাড় ইত্যাদি নাম মনে করিয়ে দেয় মৃত এক নদীর স্মৃতি।

নদীও গিলে খেয়েছে ঢাকা :ঢাকায় খালের সংখ্যা কত? বলা হয়ে থাকে, ৪৭টি খালের ২৬টি কোনো রকমে অস্তিত্বের জানান দিয়ে যাচ্ছে এখনও। একদিনে খালগুলোর এ অবস্থা হয়নি। বর্তমানে ৪৭টি খালের কথা বলা হলেও একদা খালের সংখ্যা শতাধিক ছিল বলে জানা যায়। যেগুলো নগরীর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: