
অধিকারপত্র প্রতিবেদক : ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার তুফান সরকার বগুড়া শহরে দীর্ঘদিন থেকেই আলোচিত হুট করে কোটিপতি হওয়ার কারণে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথমদিকেও তেমন আলোচনায় ছিল না তুফান। তবে মাদক ব্যবসায় তার পরিবার জড়িত কয়েক দশক ধরেই। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে ২০১৫ সালে শহর শ্রমিক লীগে যোগ দেয় সে। এরপর সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রশাসনের নাকের ডগায় মাত্র দুই বছরেই কোটিপতি হয়ে যায় তুফান ও তার পরিবার। গড়ে তোলে ‘তুফান বাহিনী’। এলাকাবাসী ও রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সে এমনই কোনঠাসা করে রেখেছে যে ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনও কথাও বলে না। প্রশাসনও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না।
বগুড়ায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও মাসহ তার মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় শুক্রবার (২৮ জুলাই) গ্রেফতার হওয়ার আগে বগুড়া শহরের মানুষ তুফান সরকারকে চিনতো ‘শহরের ত্রাস’ হিসেবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে দুই বস্তা ফেনসিডিল ও বিপুল পরিমাণ টাকাসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল তুফান। সে ঘটনায় কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে আপন বড়ভাই যুবলীগ নেতা মতিন সরকারের সহায়তায় শ্রমিক লীগে যোগ দেয় সে। যোগ দিয়েই হয়ে যায় দলটির বড় নেতা। কিছুদিনের মধ্যেই শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি হয়ে মাদক ব্যবসাসহ পরিবহন সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করে তুফান। গড়ে তোলে ‘তুফান বাহিনী’। এরপর কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি এবং টানা দেড় বছর ধরে শহরে জুয়ার আসর পরিচালনা করলেও অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা হয়নি। তবে কয়েকটি মামলা বিচারাধীন আছে। প্রশাসন ও দলীয় পর্যায়েও তুফানের বিরুদ্ধে ওঠেনি তেমন কোনও অভিযোগ। ফলে এলাকায় ত্রাস হিসেবে দিন দিন তার পরিচিতি বাড়তেই থাকে, পাশাপাশি ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে তাদের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ।
বগুড়ায় ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের মামলায় চার আসামি গ্রেফতার
রবিবার তুফান সরকারের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে চাইলে তার প্রতিবেশীরা সরাসরি তার বিরুদ্ধে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, এর আগেও মামলা খেয়ে সে জেলে গিয়েও বের হয়েছে। এবারও যদি বের হয় তাহলে প্রতিশোধ নিতে যা খুশি তাই করতে পারে। তাছাড়া তার বাহিনীর লোকেরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই ভয় আছে।
তবে তুফান ও তার পরিবার সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন তারা। এলাকাবাসীর বর্ণনা অনুযায়ী, তুফানের বাবার নাম মজিবর রহমান। তার ৭ ছেলের মধ্যে তুফান সরকার সবার ছোট। মজিবর রহমান আগে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বগুড়া শহরের রাস্তায় চামড়া কেনাবেচা শুরু করেন মজিবর রহমান। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তার পরিবারের সদস্যরা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সেই শুরু। এরপর প্রতিটি সরকারকে ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে গেছে পরিবারটি। বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর চামড়া গুদাম এলাকায় তাদের বাসা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: