প্রশ্ন: কলকাতায় অনেক দিন বাদে আপনার শো হচ্ছে।
সুনিধি: হ্যাঁ। অনেক দিন বাদেই এলাম। কলকাতায় আসতে সব সময় ভাল লাগে। এখানকার দর্শক প্রচণ্ড সঙ্গীত অনুরাগী। সব ধরনের গান শোনেন তাঁরা। যার ফলে এখানে গান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। কলকাতার দর্শকের কারণেই বার বার ফিরে আসি।
প্রশ্ন: কলকাতার দর্শকদের থেকে বিশেষ কোনও প্রত্যাশা রাখেন?
সুনিধি: আমি দর্শকদের কাছে কোনও প্রত্যাশা রাখি না। তাঁরা যে আমাকে শুনতে এসেছেন, তাতেই আমি কৃতজ্ঞ। আমি শুধু পারফরম্যান্সে নিজের ১০০ শতাংশ দিতে চাই।
প্রশ্ন: প্রায় ২৫ বছরের কেরিয়ার আপনার। এই দীর্ঘ সময় ধরে প্রাসঙ্গিক থাকা কিংবা সেই একই জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কতটা কঠিন?
সুনিধি: উত্তরটা একটু অন্য ভাবে দিতে চাই। আমার মতে, প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকতে চাওয়াটা বিভ্রান্তিকর। আমি কোথা থেকে শুরু করেছি, সেটা কখনও ভুলিনি। এই ভাবনা বেয়ে আমি আমার ছোটবেলায় চলে যাই। বলতে পারেন, এই ভাবনা আমাকে সতেজ রাখে। আমি মনে করি, প্রতিটা শো আমার প্রথম শো। প্রতি বার মঞ্চে ওঠার আগে ভাবি, আজকে দারুণ মজা করব।
প্রশ্ন: এ বার তো সঙ্গে ছেলেকেও নিয়ে এসেছেন। ওকে কলকাতার কোথায় কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবেন?
সুনিধি: এই নিয়ে আমার ছেলে কলকাতায় পাঁচ বার এল। কলকাতায় আসতে হবে শুনলেই ও ভীষণ চনমনে হয়ে ওঠে। তবে কলকাতাকে কখনও ‘ক্যালকাটা’ কখনও ‘কলকাত্তা’ বলে। ভেবেছি এ বার ওকে নিয়ে আলিপুর চিড়িয়াখানায় যাব।
প্রশ্ন: মা হওয়ার পর জীবন কতটা পাল্টেছে?
সুনিধি: আসলে মা হওয়ার পর জীবনটা সন্তানকেন্দ্রিক হয়ে যায়। তবে জীবন অনেকটাই নিয়মে এসেছে। যেটা আগে ছিল না।
প্রশ্ন: মা হওয়ার পর মেয়েদের একাধিক শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আপনার ক্ষেত্রে জার্নিটা কেমন ছিল?
সুনিধি: আসলে আমি চাই না যে, মঞ্চে আমার দম ফুরিয়ে যাক। আর আমি যে ভাবে পারর্ফম করি, তাতে দমের প্রয়োজন। তাই ছেলে একটু বড় হতেই অনুশীলন শুরু করলাম। মনে হল, আমাকে এ বার আমার নিজের জায়গায় ফিরতে হবে। তবে মাতৃত্ব জীবনের সব থেকে সুন্দর অনুভূতি। প্রত্যেকের এই অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাওয়া উচিত। আর শরীরে যে পরিবর্তন ঘটে, সেটাকে নিজের মতো করে গড়ে নেওয়ার সঠিক সময় এটাই। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরের সময়টা ইচ্ছে মতো নিজের শরীরকে গড়ে নেওয়ার জন্য সেরা সময়। আমি সে ক্ষেত্রে নিজের জন্যেই মস্ত উদাহরণ
প্রশ্ন: মুম্বইয়ে অভিনয় জগতের স্ট্রাগলের কথা কম-বেশি সকলের জানা। সঙ্গীত জগতের স্ট্রাগলটা কেমন?
সুনিধি: আসলে যে কোনও ক্ষেত্রেই কষ্ট রয়েছে। সাধারণ চাকরি থেকে শুরু করে সঙ্গীত, অভিনয়— সব জায়গাতেই কষ্ট রয়েছে। কষ্ট না থাকলে জীবনটা একঘেয়ে হয়ে যায়। সাফল্য পাওয়ার পর মানুষ তাঁর কষ্টের দিনগুলোকেই উদ্যাপন করবেন।
প্রশ্ন: জীবনে কঠিন সময়ে নিজেকে উজ্জীবিত করেন কী ভাবে?
সুনিধি: নিজের উপর খারাপ সময়ের প্রভাব পড়তেই দিই না। ঠিক তেমনই আবার ভাল সময়ে খুব বেশি উচ্ছ্বসিত হই না। আমি আসলে মুহূর্তকে নিয়ে বাঁচি।
প্রশ্ন: একটা সময় সুনিধি আর শ্রেয়া ঘোষালকে নিয়ে সারাক্ষণ তুলনা চলত। আপনাদের পারস্পরিক রেষারেষির খবর অহরহ শোনা যেত। আপনাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন?
সুনিধি: (হেসে) আসলে আমরা দু’জনেই পরস্পরের গায়কীর ভক্ত। আমরা যে 'বন্ধু', তা বলছি না। আমরা সহকর্মী। গানের জন্য দেখাসাক্ষাৎ হয়। সেই সম্পর্কটাই ভীষণ সুন্দর মনে হয়। বন্ধুর সঙ্গে তো আমরা কাজ করি না। ওর সঙ্গে ভাল সময় কাটে। আমরা বাইরে দেখা করার পরিকল্পনা করি। কিন্তু কখনই হয়ে ওঠে না। মানুষের অধিকার রয়েছে তুলনা করার, তাঁরা মজা পান এ সব করে। আর আমরা কাজ করে মজা পাই।
কলকাতা আনন্দবাজার থেকে সংগ্রীহিত
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: