ঢাকা | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট

ফেরি বন্ধ ১৩টি, ভাড়ার তালিকায় কাগজ সাঁটা

gazi anwar | প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২১:৩২

gazi anwar
প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২১:৩২

 

পদ্মায় নাব্যতা সংকটে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঈদ শেষে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপে এ রুটের অবস্থা ভয়াবহ। ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় শত শত যানবাহন। এই সুযোগে লঞ্চ ও স্পিডবোট মালিকেরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। এমনকি সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা ঢাকতে কাগজ সেঁটে দিয়ে লাল স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে।

কাঁঠালবাড়ি ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, নাব্যতা সংকট ও পদ্মায় ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান থাকায় ২০টি ফেরির মধ্যে চলছে মাত্র ৭টি। এর ফলে ফেরিগুলোকে বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার করতে গিয়ে সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও চালকেরা। কাঁঠালবাড়ি ঘাটে পণ্যবাহী তিন শতাধিক ট্রাক ও যাত্রীবাহী প্রায় ৪০০ বাস পারাপারের অপেক্ষায় আছে। শিমুলিয়া ঘাটেও অনেকটা বাসের লম্বা লাইন।

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন বলেন, নাব্যতা সংকটে এখন মাত্র ৭টি ফেরি চলাচল করছে। এ ছাড়া এই নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ ও শতাধিক স্পিডবোটের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা ঢাকতে কাগজ সেঁটে দিয়ে লাল স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। আজ সকালে কাঁঠালবাড়ির স্পিডবোট ঘাট থেকে ছবিটি তোলা হয়।


মঙ্গলবার সকালে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে দেখা যায়, এই রুটে পরিবহনের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকামুখী যাত্রীদের ভয়াবহ চাপ। কাঁঠালবাড়ির চারটি ঘাট, দুটি লঞ্চ ঘাট ও স্পিডবোট ঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকেই কাঁঠালবাড়িগামী বাসে করে ঘাটে এসে নেমে পড়েন। এরপর ফেরি পার হয়ে অন্য বাসে করে ঢাকায় আসেন। তাই কাঁঠালবাড়ি ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেশি।
এদিকে স্পিডবোট কাউন্টারে ঢুকতেই একটি অংশে টানিয়ে রাখা হয়েছে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা, যা কাগজ সেঁটে লাল স্কচটেপ দিয়ে আটকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ১৬ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্পিডবোটগুলো ২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। আর প্রতিটি লঞ্চেও অতিরিক্ত যাত্রী।

লঞ্চের কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে শিমুলিয়া যেতে ভাড়া আগে ছিল ৩০ টাকা। তবে লঞ্চের মালিকেরা ৩৫ টাকাই নিত। কিন্তু ঈদের চাপ ও ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় সেই ভাড়া এখন পরিবর্তন হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়।

ঢাকাগামী লঞ্চের যাত্রী কামরুল হাসান বলেন, ‘লঞ্চে গাদাগাদি করে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে। বসার জায়গা তো দূরের কথা, পা রাখার জায়গাটুকুও নাই। বহুত কষ্টে দাঁড়িয়েছি। এরপর আবার আগের ভাড়া নেই। ৩০ টাকার পরিবর্তে দিতে হলো ৫০ টাকা। আমাদের বাধ্য হয়েই অধিক ভাড়া গুনতে হচ্ছে।’

জানতে চাইলে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আতাহার ব্যাপারী বলেন, ‘আমার লঞ্চে সকল মালিককে নির্ধারিত ৩০ টাকা ভাড়া নিতে বলে দিয়েছি। ঈদ উপলক্ষে কোনো যাত্রীদের কাছ থেকে অধিক ভাড়া আদায় করার কথা নয়। যাত্রীরা হয়তো সঠিক বলেনি। তবুও আমরা বিষয়টি দেখছি।’

স্পিডবোট ঘাটে কয়েকজন যাত্রী জানান, স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিতে হলে আগে সিরিয়ালে লাইনে দাঁড়াতে হয়। পরে টিকিট কেটে বোটে উঠতে হয়। স্পিডবোটে পূর্বের নির্ধারিত ভাড়া ছিল ১২০ টাকা। তবে বর্তমানে ঈদ ও যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় সেই ভাড়া রাখা হচ্ছে ২০০ টাকা।

স্পিডবোটের যাত্রী আফিয়া ইসলাম বলেন, ‘কিছুই করার নাই। ভাড়া নিয়ে কাকে কী বলব? প্রশাসনের চোখের সামনে এই ভাড়া আদায় করছে স্পিডবোটের মালিকেরা। কিন্তু তারা কিছুই বলছে না। তাই গন্তব্যে যেতে হলে বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হবে।’

লাইন ধরে যাত্রীরা অতিরিক্ত টাকায় কাটছেন টিকিট।


কাঁঠালবাড়ি ঘাটে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্পিডবোট চালক বলেন, ‘আমরা সমিতির নিয়ম অনুসারে চলি। তাদের কথা মতোই যাত্রী তুলি। পদ্মা পাড়ি দিতে ১২০টাকা করেই ভাড়া নেই। তবে ঈদ উপলক্ষে যাত্রীরা এমনি বেশি টাকা দেয়।’

কাঁঠালবাড়ি স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘ঘাটের সবকিছু আমাদের অধীনে নেই। ভাড়া বাড়ানো বা কোনো সিদ্ধান্তই আমাদের মতামতে হয় না। ঘাটের ইজারাদার ও অন্যদের সিদ্ধান্তেই সবকিছু বিবেচনা করা হয়।’

স্পিডবোট ঘাটে ভাড়ার তালিকা ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভাড়ার তালিকা শিবচরের ইউএনও নির্ধারণ করে টানিয়ে রেখেছিলেন। এখন ওই তালিকার কী অবস্থা বা কেন কাগজ সেঁটে লাল স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’

জানতে চাইলে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান আহম্মেদ বলেন, ঈদে যাত্রীদের নিরাপত্তায় সর্বস্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তি, যানজট ও অধিক ভাড়া আদায়ে কোনো অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলোতে ওভারলোড যেন না হয়, সেই জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আর ভাড়ার তালিকা ঢেকে দেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: