
যুক্তরাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক সুদীর্ঘদিনের। চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৃটিশ সরকার, সংসদ সদস্য এবং যুক্তরাজ্যের জনগণ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে যাবার বিষয়ে যুক্তরাজ্য বলিষ্ট ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে, খাবার দিয়ে বিশ^বাসীর কাছে প্রশংশিত হয়েছে যুক্তরাজ্য, বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
বাণিজ্যমন্ত্রী সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকায় সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্যদূত ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি রুশনারা আলীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ আলাপ আলোচনা ও বিশ^সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায়। বাংলাদেশে এখন প্রায় ১৭ কোটি মানুষ বাস করে। এর উপর বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা। বাংলাদেশ দ্রুত রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাচ্ছে। ব্রিটিশ সরকার এ বিষয়ে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করবে বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যের সাথে বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। গেল ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ৩৫৬৯ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করেছে ৩৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশের পক্ষ্যে বাণিজ্য ৩২৩৯ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে লাভজনক বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশ বিনিয়োহারীরা এখানে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন। সরকারের বিনিয়োগ বান্ধবনীতির কারনে অনেক দেশ বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছে। এখন যে কোন দেশ বাংলাদেশে শতভাগ বিনিয়োগ করতে পারে এবং যে কোন সময় লাভসহ মূলধন ফিরিয়ে নিতে পারেন।
সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্যদূত ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি রুশনারা আলী বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতন, হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করায় যুক্তরাজ্য সরকার, পার্লামেন্ট এবং ব্রিটিশ জনগণ নিন্দা জানিয়েছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাবার দিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্রিটেন বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দরিদ্র বিমোচন, মাতৃ-শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে উভয় দেশ অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। ব্রিটিশ রেলওয়ে কোম্পানি বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশবছর আগের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেরে মধ্যে ব্যবধান অনেক। বাংলাদেশ বরাবরই একটি সম্ভাবনাময় দেশ। শিক্ষা, অবকাঠামোসহ সব সেক্টরেই বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাজ্য আন্তরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশ থেকে কার্গো উড়োজাহাজ চলাচল আবার চালু হবে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার কাজ করছে, এখানকার বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্রিটিশ কোম্পানী কাজ করছে। অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ আবার চলাচল শুরু করবে।
এসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু, ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিজ আলিসন ব্ল্যাক, ব্রিটিশ হাই কমিশনের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের ডিরেক্টর মিজ রোজিনা হাসান, ডেপুটি ডিরেক্টর সুরাইয়া জাহানসহ বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ীগণ উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: