
চারদফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে আন্দোলনে যাচ্ছেন বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ হেল্থ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা অনুষ্ঠানে এ কর্মসূচী প্রদান করেন সংগঠনটি।
চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা, মূল বেতনের ৩০% মাঠ/ভ্রমণ ভাতা ও ঝুকি ভাতা, প্রতি ৬ হাজার জনসংখ্যার বিপরিতে ১ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ প্রদানের নিশ্চিত ও ১০% পোষ্য কোটা প্রর্বতন করা।
হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এনায়েত রাব্বির লিটনের সভাপতিত্বে কমিটি ও কর্মসূচী ঘোষণা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল ওয়ারেশ পাশা পলাশ,সাধারন সম্পাদক মো.জাকারিয়া হোসেন,সাংগঠনিক সম্পাদক নূর নবীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীরা শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হ্রাস,যক্ষ্মা,ধনুষ্টংকার,ডায়রিয়া,ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রন,সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রন,অন্ধত্ব দূরীকরনসহ তৃনমূল পর্যায়ে সফল ও দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করে আসছেন। এছাড়া গুটি বসন্ত, পোলিও নির্মূল তথা পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতের বৃহৎ কর্মসুচী এমআর ক্যাম্পেইন সফলভাবে সমাপ্ত করেছেন। তাদের ইপিআই কার্যক্রমের ফলে দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ার ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন এবং বিশ্বে রোল মডেল হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালুতে সরকারী নির্দেশে স্থান নির্বাচন,স্থানীয় জনগণ হতে বিনামূল্যে জমিদানে উদ্ধুদ্ধকরন,নির্মান তদারকিসহ স্বাস্থ্য সহকারীরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে বর্তমান সরকারের সফল ও স্বার্থক উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিককে গ্রামীণ জনগণের দোর গোড়ায় সহজলভ্য সেবার মডেল কর্মসুচীতে পরিনত করেছেন। যার ফলে কম খরচে অধিক সেবা প্রাপ্তির মডেল দেশে বাংলাদেশ পরিনত হয়েছে।
তারা বলেন,তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের সফলতা শুধু দেশে নহে,আন্তজার্তিকভাবেও ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের ফসল হিসাবে প্রধানমন্ত্রী এমডিজি,সাউথ সাউথ পুরষ্কার,গ্যাভী কতৃক শ্রেষ্ঠ টিকাদানকারী দেশের স্বীকৃতি অর্জন, দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ার টিকাদানে শ্রেষ্ঠত্ব এবং পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে জাইকা কতৃক পুরষ্কার প্রাপ্তিতে আন্তজার্তিক স্বীকৃতি পেয়েছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশী বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজগুলো টেকনিক্যালধর্মী হলেও র্দীঘদিন থেকে স্বাস্থ্য সহকারীরা টেকনিক্যাল পদমর্যাদার দাবী করে আসলেও সরকার তা বাস্তবায়ন না করায় পদমর্যাদাসহ চরম বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।
সম্মেলনে আরো জানান, ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে এইচএসসি পাশ স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৬তম গ্রেডে মূল বেতন ছিল ৩০০ টাকা। কৃষি বিভাগের এসএসসি পাশ ব্লক সুপারভাইজার যারা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাক। ১৯৮৫ সালের ৫ আগষ্ট এক সরকারী আদেশে তাদের বেতনস্কেল আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে ১৪তম গ্রেডে উর্ত্তীণ করা হয় ও ২০০১ সালের ২৩ এপ্রিল আবার তাদেরকে ১১তম গ্রেডে আপগ্রেডেশন করা করে টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল সরকারী আদেশে পদবী পরিবর্তন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা করা হয়। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভেটনারী ফিল্ড এসিস্ট্যান্টরা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাকা। ব্লক সুপারভাইজারদের সাথে ১৯৮৫ সালে সরকারী আদেশের মাধ্যমে তাদেরও ১১তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করে এবং টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস সহকারী শিক্ষক যারা ১৭তম গ্রেডে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাদেরও ১৪তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের অধীনস্থ প্রকল্পের আওতাধীন এইচএসসি পাস সিএইচসিপিদেরকে ১৪তম গ্রেডে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মানব শিশু স্বাস্থ্য ও মাতৃ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা তৃণমূলের স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি এখনো।
তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর শেরে বাংলা নগরে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যবিভাগীয় মাঠ কর্মচারী এসোসিয়েশনের এক মহাসমাবেশে পদ-মর্যাদাসহ বেতন বৈষম্য নিরসনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,অর্থ,জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কমিটির অনুকূল সিদ্ধান্ত থাকা সত্বেও আজো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
তাই স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা, মূল বেতনের ৩০% মাঠ ভাতা, ঝুকি ভাতা ও ভ্রমণ ভাতা, প্রতি ৬ হাজার জনসংখ্যার বিপরিতে ১ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ প্রদানের নিশ্চিত ও ১০% পোষ্য কোটা প্রর্বতন করাসহ এই চার দফা দাবি চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন না করা হলে আগামী ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ইপিআইসহ সকল কার্যক্রম বাস্তাবায়নের বন্ধের ঘোষণা প্রদান করেন তারা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: