
নেক বান্দার স্তরে তুমি পৌছাতে পারবেনা যতক্ষন পর্যন্ত তোমার প্রিয় জিনিসকে আল্লাহর পথে ব্যয় না করো। এটাতো আল্লাহ তা’আলা বলে দিয়েছেন কুরআন শরীফের ভিতর দিয়ে। তো আমি যদি আমার মনের পছন্দের জিনিস চাইতেই থাকি, আমার যেটা মন চায়; আমার মন চায় যে বাগান ভরা হবে, ফলে ফল হবে, অনেক ধরনের ঘর-বাড়ি, সম্পদ বিছানা, তো ছাড়ার অংশটা গেল কই? আর আল্লাহ তা’আলা এই কথা বললেনই বা কেন যে আল্লাহকে পেতে পারবেনা যদি না ছাড়? আর যদি দ্বীন আমাদেরকে এত ধনী বানায়, তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মোটামুটি দ্বীনদ্বার ছিলেন! এতো দুরবস্থা কেন? সাহাবারাও তো ‘বে-দ্বীন’ ছিলেন না। যিকিরও করতেন, তিলাওয়াতও করতেন, ঘরে ঢুকার সময় সালামও দিতেন। কিন্তু ফুলে ফলে বাগান ভরলো না তো। তো সাহাবাদের যদি সালামে, দরুদে আর সূরা ইখলাস পড়ে না ধরে তো তোমার আমার ইখলাসে কী ধরবে?
এ কথাগুলো মিথ্যা নয় যে, নেক আমলে আল্লাহ তা’আলা মুছিবত পেরেশানী দূর করেন, কথা ঠিক। কিন্তু দ্বীনকে পেতে হলে নিজের মনের ইচ্ছাকে যে ছাড়তে হবে, ঐ কথা আরও ঠিক। দ্বীনের বিভিন্ন স্তর আছে, এক স্তর হল দ্বীনের উপর চলল, আর তার পেরেশানী দূর হল। আর আরেক স্তর হল, দ্বীনের উপর চলল আর তার পেরেশানী অনেক বেড়ে গেল। দ্বীনের উপর চললে ব্যবসায় লাভ হবে, অভাব দূর হবে, এ কথা মিথ্যা নয়। কিন্তু এই মজলিসে আমরা ঐ লেভেলের আলোচনা করতে চাই না। আল্লাহ তা’আলা মেহেরবানী করে আল্লাহর পথে বের হবার তৌফিক নসীব করেছেন, আর আমরা দ্বীনকে একটু ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করি। নামায পড়লে, যিকির করলে চাকরিতে প্রমোশন হবে, দোকানে লাভ হবে, এ কথা মিথ্যা নয়। কিন্তু আমাদের এখানে আসা ঐ কথাকে জপবার জন্য নয়। ঐ একটি মৌলিক কথা যদি বুঝতে পারি যে ঐ কথাগুলো জপবার জন্য এখানে আসিনি, তাহলে পরবর্তী কথা বোঝা সহজ হবে। আর ঐ কথা বুঝা খুব বেশী কঠিন হবে না, যদি আমি যাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে মানি নীতিগতভাবে-নবীরা, সাহাবারা, পরবর্তীকালে ওলী-আল্লাহরা। আর যাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে শুধু আমি যে মানি তা নয়, দ্বীন যাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে আমার সামনে পেশ করেছে। আল্লাহ তা’আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করেছেন, সাহাবাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করেছেন।
وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ
‘তাঁদের যারা সুন্দরভাবে অনুসরন করেছে’
মুহাজির, আনসার তাঁদের অনুসারীরা, দ্বীনের উত্তরাধীকারীরা, আল্লাহ যাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দিয়েছেন, সেই দৃষ্টান্ত আমাকে যে দ্বীন বুঝাতে চায় সেই দ্বীনও তো বুঝার একটু দরকার আছে।
নামায পড়লে, দরুদ শরীফ পড়লে দোকানে লাভ হয়, টাকা বেড়ে যায়, ফলমূল খাওয়া যায় এ কথাগুলো মিথ্যা নয়। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা যাদেরকে দেখে চলতে বলেছেন, তাঁদেরকে দেখে যদি চলে থাকি তাহলে মোটামোটা অংকের টাকাই শুধু ঘরে দেখা যায় নাকি? একটু বোঝার চেষ্টা করা দরকার। নবীরা কি দ্বীনের উপর চলতেন না? জিকির করতেন না? তিলাওয়াত করতেন না? ঘরে ঢুকার সময় সুন্নত মানতেন না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের ভিতর ঢুকার সময় নিশ্চয় কিছু সুন্নত আমল করতেন। আর নতীজা তো এটা হল যে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে এ কথা বললেন, “এক চাঁদ, আরেক চাঁদ, আর আরেক চাঁদ, আর আমাদের কারও চুলায় আগুন জ্বলেনি” । তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে ঢুকা কি সুন্নতের খেলাফ ছিল? তো আবার বলছি, যে একথা বলেছে যে এই আমল করে ঢুকলে আমার ঘরে গোস্ত-মাছ, ফলমূল ঘরে প্রচুর থাকবে সে মিথ্যা কথা বলেনি। আর যদি ঐ নিয়্যতে কেউ করে, আশা করা যায় সে ফলমূল পাবেও। কিন্তু আমি কি এই দ্বীন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাই, নাকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেই দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন সেই দ্বীনের দিকেও একটু তাকাতে চাই? এই নিয়ত আগে করতে হবে আমি কোন দ্বীন চাই? যদি পেট ভরার দ্বীন হয় তো সেই দ্বীনতো হাসিল হয়ে গেছে মোটামুটি ভাবে। আমরা এখানে কেউই উপবাসের মধ্যে নেই। আর আরও যদি কিছু আমল করি তো আশা করা যায় চাকরী যদি করি তো তার ইনক্রিমেন্ট হবে, আর ব্যবসা যদি হয় তো লাভ আরও কিছু বাড়বে। কিন্তু ঐ যে দ্বীন ইনক্রিমেন্ট হয়, প্রমোশন হয়, লাভ বাড়ে; দরুদ দিয়ে, আমল দিয়ে, জিকির দিয়ে, তিলাওয়াত দিয়ে- ঐটা ঐ দ্বীন নয় যেটার দৃষ্টান্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবারা কেউ।
তো তাঁদের দ্বীন কোনটা সেটা একটু বোঝা দরকার। আর ঐটা বুঝতে তখনি পারব যখন আমার প্রথম কথা হল যে আমার মনে যখন তলব পয়দা হবে যে আমি তাদের পথের পথিক হই। প্রথম কথা-
اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
যে দোয়া প্রত্যেক রাকাতে করছি। কোন সীরাত? ঐ সীরাত, ঐ পথ, যে পথে যারা চলেছেন তাঁদের উপর তুমি সন্তুষ্ট হয়েছো এবং সেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছো। আর তাঁরা কারা? “নবীয়্যীন, সিদ্দীকিন, শুহাদা ওয়াসসালেহীন” তাঁরা হলেন দৃষ্টান্ত। তো সেই দৃষ্টান্তের দিকে যদি আমরা তাকাই আর ঐটাকে আমি আমার মনের তলব বানাই, আগ্রহ বানাই আর সেইভাবে দ্বীনকে বোঝার চেষ্টা করি, তাহলে সেই দ্বীন আমাকে আরেক পথ দেখাবে যে পথ আমি দেখবনা যদি ঐ দিকে না তাকাই। যারা নামায পড়েন, জিকির-তিলাওয়াত করেন, সদকা-খয়রাত করেন, আর আল্লাহ তা’আলা তার মালের মধ্যে বরকতও দেন আর দেওয়ার কথাও। আল্লাহর পথে মাল খরচ করছে মালের বরকত হবে। গরীব মিসকীনদের দিয়েছে তারা দোয়া করছে, তো সেই দোয়ার বরকতে তার মাল আরও বাড়বে। তো আমার সম্পর্কে একজন মামা ছিলেন, বহুত আগে ইন্তেকাল করেছেন। তো উনি চাকরী পেলেন; বহুত আগের কথা ১০০ বছর হবে। উনার এক খালা ছিলেন, প্রত্যেক মাসে ঐ খালাকে কিছু টাকা উনি পাঠাতেন। আর খালা টাকা পেয়ে দোয়া করতেন উনার এই ভাগ্নের জন্য, ‘আল্লাহ একে লাভ দিন’। আমার মায়ের কাছে শুনা এই কথাগুলো, মামাকে আমরা উনার বার্ধক্যের সময় দেখেছি, উনি প্রায় বৃদ্ধ। তো সেই ‘একে লাভ দিন’। তো আমার মা বলতেন ‘ঐ খালার দোয়া বোধহয় লেগে গেছে, বোধহয় একটু বেশীই লেগে গেছে’। তো কেন? ঐ মামা চাকরী করেছেন ৬০-৭০ বছর হবে। উনার প্রধান ক্যারিয়ার রিটায়ার্ডমেন্টের পরে, চাকরী থেকে রিটায়ার্ড করবার পরে। তারপর সরকার নানান ধরনের কমিশন-টমিশন নানান গুলো থাকে। তো কোন কমিশনের মেম্বার, কোন কমিশনের চেয়ারম্যান। তো এগুলো করে প্রায় পঞ্চাশ-ষাট কোটি টাকা হয়েছে।
তো কেউ মনে করবে যে দোয়া হয়েছে-আল্লাহ তা’আলা খুব দিচ্ছে। আর কেউ হয়ত ভাববে একটু অবসর-টবসর হয়ে একটু আল্লাহর নাম নিতেন-সেই সুযোগ আর হচ্ছে না। ৬০-৭০, ৮০ বৎসর হয়ত প্রায় হতে চলল আর এখন পর্যন্ত নানান ধরনের চাকরী-বাকরী করে যাচ্ছে। কথা তো ঠিক। আমি নেক আমল করলাম, সদকা-খয়রাত করলাম। এক হল; সদকা করলাম আর আশা করলাম যে আমার টাকা আরও বাড়বে, আমি আশা করেছি, সদকা করেছি তো আল্লাহ তা’আলা টাকা বাড়িয়েও দিবেন। আরেক হল; আমি আশা করছি আল্লাহকে পাব। দুটো ভিন্ন; এক জিনিস নয়। যে আল্লাহকে পেতে চায় সে আল্লাহর পথের পথিক হবে, আর যে আমল দিয়ে বড় বাড়ি বানাতে চায়, তার কিসমতে থাকলে আল্লাহ বড় বাড়ি বানিয়ে দিবেন। কিন্তু সে আল্লাহকে পেতে চাইনি এবং পাবেও না। আমল তার নষ্ট হয়নি। আমল করেছে, আমলের ফায়দা পেয়েছে।
আমার নিয়্যতকে ঠিক করার দরকার যে আমি কোন পথের পথিক হতে চাই। এক হল ধন-দৌলত হবে; ধন-দৌলতের জন্য নানান পদ্ধতি আছে। দুনিয়াদারদের পদ্ধতি হল ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি করা। ব্যবসা-বাণিজ্য করা, পলিটিকস করার নানান পদ্ধতি আছে, যে পদ্ধতি দিয়ে সে বড় বাড়ি, টাকা পয়সা প্রচুর আশা করে। এর মধ্যে আবার জায়েজ-নাজায়েজ আছে। চুরি-ডাকাতি করেও পারা যায়, আর হালাল ব্যবসা করেও পারা যায়। তো আমরা সাধারনত তাদেরকেই দ্বীনদার বলি যে হালাল পথে ধনী হতে চায়। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের যে সংজ্ঞা নিয়ে এসেছেন ঐটা হালাল পথে ধনী হওয়ার দ্বীন নয়। সাহাবারা দ্বীনদারী করে ধনী হয়ে যাননি, গেছেই শুধু। আর এমন নয় যে ঠিক আছে, কিছুদিন গেল তারপর খুব বিলাসী। না, তাও নয়। যারা আল্লাহর কাছে মকবুল সবচেয়ে বেশী, সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যারা, তাঁরা দুনিয়াতে শেষ পর্যন্ত কিছুই পাননি। এরকম নয় যে, ঠিক আছে কিছুদিন পর্যন্ত কষ্ট হল, তারপর সব একেবারে লাভে-আসলে উসূল হয়েছে! একেবারে বাদশাহের মত বাকি দিনগুলি কাটল! না, তা নয়।
সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা’আলা ধন-দৌলতের যমানায় যখন এই প্রবাহ প্রায় আসছে, আরম্ভও করেছে, আসবার আগে আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা’আলা উঠিয়ে নিয়েছেন। ফাতুহাতের যামানা আরম্ভের আগেই, হবে হবে ভাব। আর সাহাবারা ঐ মেজাজেরই ছিলেন। যারা ফাতুহাতের যামানা পেয়েছেনতাঁরা নিজেদেরকে ভাগ্যমান মনে করেননি। বরং যারাআগে চলে গেছেন তাঁদেরকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মনেকরতেন। সাহাবারা–সাহাবীয়ারা।
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে টাকা পাঠালেন। বন্টন হত বায়তুল মালের, আর একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের। জয়নব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার কাছে পাঠালেন সম্ভবত ১২ হাজার মুদ্রা; বড় অংক। জয়নব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা ভাবলেন যে এটা উনাকে দিয়েছেন সব বিবিদের মধ্যে বন্টন করার জন্য। উনি বললেন এই দায়িত্ব আমাকে না দিয়ে অন্য কাউকে দিলেই তো ভাল হত। যিনি টাকা আনলেন উনি বললেন, না, এটা কোন দায়িত্ব নয়, এটা আপনার জন্যই, সবাইকে বন্টন করবার জন্য নয়। এটা আপনারই। জয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা হাতে নিলেন না, বরং বললেন ওখানে রাখ। নিজে স্পর্শই করলেন না, বরং ঐ ওখানে রেখে রেখে খাদেমাকে দিয়ে সব বন্টন করালেন। ছুঁলেনই না। যিনি এনেছিলেন উনি দেখলেন যে সব শেষ করে দিয়েছেন। আর ঐটাতো পাঠানো হয়েছিল বায়তুল মাল থেকে উনার এক বছরের ভাতা হিসেবে। যদিও একবছরে যে পরিমান প্রয়োজন হয়ে থাকে তার চেয়ে অনেক বেশী ছিল। কিন্তু উনার সারা বছর হিসাব করে যে পাওনা ছিল সেই পাওনা, বলা যেতে পারে পেনশন, বায়তুল মালের বন্টন থেকে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে গিয়ে বলা হল উনি তো সব শেষ করে দিয়েছেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবার একরামান আরও পাঠালেন। আর যেহেতু উনার জন্য কিছু থাকল না আর উনার তো প্রয়োজন আছে, সেই কথা ভেবে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উনার কাছে ২য় বার আবার পাঠালেন। এত নয় বরং তার চেয়ে কিছু কম। উনি এটাও শেষ করে দিলেন আর এবার দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ, এর পরের বার আসার আগে আগে তুমি আমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নাও”। আল্লাহ তা’আলা তাই করলেন।
আমি মনে করি দ্বীনের ফায়দাই হল যে, আমল করলাম; আমার বেতন বাড়বে, টাকা বাড়বে, এসি বাড়িতে থাকবইনশাআল্লাহ! আর তাঁদের কাছে যখন কবুলিয়াত এলআর মালদৌলত আসতে আরম্ভও করল, তখন আল্লাহরকাছ থেকে পানাহ্ চাইলেন। তো এটা কোন দ্বীন আরআমি যে দ্বীনের উপর চলছি ঐটা কোন দ্বীন?
যেটাকে আমি দ্বীন মনে করি ঐটা কী, সমাজ যেটাকে দ্বীন বলে? এখন আমাদের বর্তমানের দ্বীন ও দ্বীনের জ্ঞান তো এরকম; নাম বলবনা, শুধু ঘটনা বলব। এক লোক ছিল বড় ব্যবসায়ী, কাপড়ের দোকান ছিল, ধনী লোক ছিল, মান-সম্মান লোকের কাছে প্রচুর ছিল, আর দ্বীনের কাজও করত, প্রচুর দ্বীনের কাজ করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তার ব্যবসা-ট্যবসা একেবারে নষ্ট হয়ে গেল। এমনকি এক পর্যায়ে এসে কাধে কিছু কাপড়-টাপড় নিয়ে যেরকম অনেক সময় দেখা যায় কাধে গামছা-টামছা ওগুলো কিছু নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ফেরি দিচ্ছে, এই অবস্থা হল। আর যার এত সম্মান ছিল তার অঞ্চলের লোক তাকে ধরে একবার এমন পিটাই দিল! শ্রোতারা বলবে ‘এই লোক যদিও সে দ্বীনের কাজ করেছে, কিন্তু আল্লাহর কাছে সে মরদুদ (বিতারিত) ছিল। আর তুমি ভাল করে দেখ নিশ্চয়ই তার মধ্যে বহুত বড় কোন গুনাহ করেছে, কারও কোন হক নষ্ট করেছে। হয় কোন আল্লাহওয়ালার সাথে বেআদবী করেছে। না হয় মা-বাবার অভিশাপ, কোন বড় ধরনের অভিশাপ এর উপর আছে, নইলে এরকম পরিনতি হতে পারে না। কারন আল্লাহ তো আছেন, আল্লাহ নাই-তা তো নয়। শয়তান পুরো দুনিয়া দখল করেনি, আল্লাহ আছেন’।
তো সেইটাও এক দ্বীন আর আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু, উনিও একটা দ্বীনের উপরই চলেছেন। কিন্তু এই দুই দ্বীন এবং দ্বীনের জ্ঞানের মধ্যে আসমান-জমিন পার্থক্য। যে দ্বীন নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছেন, সেই দ্বীনের মধ্যে শুধু কথা নয়। এই যেকথা বলছি যে, এইসব আমল করে ঘরে ঢুকলে এর মধ্যে তার টাকা-পয়সা, ফুল-ফল বাড়বে- এই কথাগুলো বানানো কথা নয় আর এগুলো বেশির ভাগ হাদীস থেকে নেওয়া কথা। সবগুলো হুবহু না হলেও কথাগুলো মিথ্যা নয়, বানানো নয়। কিন্তু একটা হল এই কথাগুলো যেগুলো সত্য, আর আরেক হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের দৃষ্টান্ত- এটা আরেক স্তর।
সমুদ্রে যে পানি আছে এগুলো কিন্তু স্থির থাকেনা। আমাদের ধারনা এগুলো স্থির থাকে, চলছে। নদীর পানি যেমন প্রবাহ, সমুদ্রের মধ্যেও পানি চলতি। আর এটাকে আল্লাহ তা’আলা বড় জরুরী বানিয়েছেন; নয়ত জীবন মুশকিল হত। প্রবাহমান। প্রবাহ যে আছে সমুদ্রের মধ্যে কারেন্ট বলে, এগুলো একই জায়গায় সব একই দিকে নয়। ঐ একই জায়গায় উপরের পানি একদিকে চলছে আবার নীচের দিকে আরেক দিকে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রবাহ আছে। তো এই দ্বীনেরও একেক স্তরের একেক ধরনের প্রবাহ আছে। ঐ একই দ্বীনের বিভিন্নমুখী প্রবাহ আছে। একটা একদিকে যায় আরেকটা সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে যায়। এখন কে কোন স্তরে আছে তার উপর নির্ভর করে সে কোন দিকে যাবে।
তো আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দ্বীন দিয়েছেন, প্রধানত ঐ দ্বীনের দিকে নিজেকে তালেব বানানো যে-আল্লাহ তা’আলা বলছেন-
اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
ঐ ‘أَنعَمتَ عَلَيهِمْ’ তাঁরা কারা? আর আমি আমার দৃষ্টি তাঁদের দিকে নিবদ্ধ করি। নবীয়্যিন, সিদ্দীকীন, শুহাদা, সলেহীন, তাঁরা যে দ্বীন পেয়েছেন আমার মনের ভিতরে ঐ দ্বীনের আকাংখা জাগানো। প্রথম হল তলব, দ্বীনের প্রথম কথা হল তলব। সেই দ্বীনের তলব যদি থাকে তাহলে আমি দ্বীনকে সেইভাবে বুঝার চেষ্টা করব। যে যে জিনিসের তালিব হয় বাকি সব কথাগুলোকে ঐ তলবের পরিপ্রেক্ষিতে বুঝার চেষ্টা করে। মানুষের মনের ভিতর যে চাহিদা আছে ঐটা দিয়ে পথ-ঘাট সবকিছুকে বোঝে।
ব্যবসায়ী তলব নিয়ে চলছে তো ব্যবসা দেখে। দীনের তলব নিয়ে চলছে তো দ্বীন দেখে। দ্বীন বলতে ও যে দ্বীন মনে করে সেই দ্বীন দেখে। তো আমার যদি তলব থাকে নবীদের দৃষ্টান্ত, সাহাবাদের দৃষ্টান্ত, তাহলে আল্লাহ আমাকে দ্বীনের যে বুঝ দিবেন তা ঐ তলবের পরিপ্রেক্ষিতে দিবেন। আর যদি ঐ দৃষ্টান্ত আমার চোখের সামনে থাকেই না; আমি দৃষ্টান্ত বানালাম আমার মহল্লার কোন একজন হাজী সাহেব- মোটাসোটা ব্যক্তি, ইস্ত্রী করা জামা, মসজিদে আসেন কিন্তু গাড়িতে করে আসেন, ড্রাইভার এসে দরজা খুলে দেয়, ধীরে ধীরে মসজিদে ঢুকেন, ডানে-বায়ে একটু তাকান, মুয়াজ্জ্বিন এসে সালাম করে। উনি বে-দ্বীন নয়। আমার দৃষ্টান্ত যদি হয় ওরকম একজন দ্বীনদার হবো যে টাকা-পয়সা অঢেল, সালামও প্রচুর, শরীরে চর্বিও প্রচুর, সব কিছু আল্লাহ তা’আলা দিয়েছেন, দুনিয়া খুলে দিয়েছেন, উনি বে-দ্বীন না, কাফের না, মুশরিক না, চোর-ডাকাতও নয়, এই সমাজের অনেক বে-দ্বীন লোকের তুলনায় অনেক ভাল। চুরি বা ডাকাতিও করে না, মিথ্যা বলে না, ভেজাল ব্যবসা করেনা, হালাল খান-একজন ভাল দৃষ্টান্ত, কোন খারাপ দৃষ্টান্ত নয়। উনার এই যে কথাগুলো বললাম, এগুলো কোনটা হারাম নয়। দামি গাড়িতে চড়া হারাম নাকি? কোন মুফতী বলবে-হারাম? সমাজের সবাই দুই পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে যায় আর সালাম করেন, এগুলো হারাম নয়। এগুলোর কোনটা হারাম? ইমাম-মুয়াজ্জ্বিন সালাম করে এগুলো কোন হারাম নয়। সবই হালাল।
কিন্তু একেবারে হুবহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাদের সাথে মিলছে না; একটু ভিন্নতা আছে। এখন নির্ভর করে আমি আমার দৃষ্টান্ত কাকে বানাবো।
الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ
এই ‘أَنعَمتَ عَلَيهِمْ’ কি ব্যাংকের একাউন্ট? দামি গাড়ি? বড় বাড়ি? নাকি ‘আন আমতা আলাইহিম’ এর অন্য কোন অর্থও আছে? ঐ ফয়সালার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীনকে বুঝতে হবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: