ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ফ্যাসিবাদের দোসরদের যেন চবি উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ না হয়: চট্টগ্রাম সমন্বয়কবৃন্দ

চবি প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১১:২৫

চবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১১:২৫

চবি সংবাদদাতা : অন্তবর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই আজমের সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের সাথে এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য (ভিসি) ও প্রশাসন খুব দ্রুত নিয়োগ হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

শনিবার (১৭ জুলাই) বিকাল ৪ টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

মতবিনিময় সভায় দাবিগুলো হলো-

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম আরম্ভের লক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে দলনিরপেক্ষ ও শিক্ষা এবং গবেষনাবান্ধব প্রশাসন নিয়োগ করতে হবে। এই মুহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রকারের প্রশাসন না থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে পারছে না। গত ১৫ বছরে আওয়ামী প্রশাসনের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে দলীয় ক্যাডারদের অস্ত্রগারে পরিণত করা হয়েছে। গত ৮ বছরে ছাত্রদের হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। যেকারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার অভাবে ক্যাম্পাসে ফিরে আসা হচ্ছে না। তাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন নিয়োগের ব্যাপারে বিবেচনা করার অনুরোধ রইলো। এক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের দোসর যেন নিয়োগ না পায়।

বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় সকল ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ এবং ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যে সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে হত্যাকাণ্ডে এবং দমন নিপীড়নে জড়িত তাদেরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আওয়ামী দলীয় ক্যাডারদের মধ্যে যারা হামলা ও হত্যাকান্ডে জড়িত তাদেরকে দ্রুত সময়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন এবং শহীদ পরিবারে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণ করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও নিহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করতে হবে।

খুনি হাসিনা সহ পলাতক আওয়ামী সন্ত্রসীদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল পর্যায়ে দুর্নীতিগ্রস্থ ও দলীয় পরিচয় ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্তদের সরিয়ে যোগ্য ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

বৈষম্য দূরীকরণে সুশাসন এবং গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের যুগোপযোগী পরিবর্তন করতে হবে।

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্টার লক্ষ্যে অন্তরবর্তী কালীন সরকারের উপদেষ্টা সহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিশেষ সুবিদা বাদ দিতে হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রনয়ণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ১৫-২০% বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

আওয়ামী সরকারের আমলে বন্ধকৃত রাষ্ট্রীয় কলকারখানা দ্রুত সময়ে চালু করতে হবে।

শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে বাস্তবায়ন করতে হবে।

শিক্ষাখাতে বৈষম্য দূরীকরণে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্যায় ভাবে অতিরিক্ত টিউশন ফি বাতিল করতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং সেশনজট মুক্ত করতে ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রবাসে অবস্থানরত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ন্যায় অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যারা আটক হয়েছে তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন'র কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি জানান, অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর আমরা সংস্কারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সংস্কারের কাজ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টার সাথে মতবিনিময় করেছি। আমাদের প্রধান দাবিটি ছিল, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে অতিদ্রুত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ করে সকল কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তিনি আমাদেরকে অবিলম্বে ভিসি নিয়োগের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।

কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন,
গতকাল চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ও উপদেষ্টার সাথে একটি ইনফর্মাল আলোচনা হয়েছে। এতে আমরা কিছু দাবি উপস্থাপন করেছি। তিনি আমাদের দাবি পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন। সকলকে সাথে নিয়ে আমরা দেশ সংস্কারের জন্য কাজ করে যাবো। দুর্নীতিমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে বদ্ধপরিকর থাকবো।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২০ মার্চ সাবেক উপাচার্য শিরিণ আখতারের পর অধ্যাপক আবু তাহের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর সাত মাসের মাথায় ছাত্র আন্দোলনের তোপে পড়ে গত ১১ আগস্ট তিনি অব্যাহতি নেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: