
আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে নৌপথে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
নৌপথ এবং লঞ্চ টার্মিনালে নৌবাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিয়মিত ও বিশেষ টহলের পাশাপাশি ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে প্রতিটি লঞ্চে অন্তত চারজন করে আনসার মোতায়েন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ, গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর এবং বরিশাল-ভোলা নৌপথ এবং দেশের অন্যান্য নৌপথসমূহে ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং শ্রমিক ও যাত্রীদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রতিরোধে নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, নৌ পুলিশ এবং কোস্টগার্ড নিয়মিত টহল দেবে।
বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নৌপথে নিরাপত্তা জোরদার করতে ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এরআগে, সভায় উপস্থিত নৌপরিবহন মালিকরা নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ঈদুল ফিতরের সময় নৌপথে ঘরমুখো যাত্রীদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে, ১৫ রমজান অথবা ১৬ মার্চ থেকে ঈদের পরের দুই দিন পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চে চারজন করে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে। এ বিষয়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শুল্ক ভাতা লঞ্চ মালিকদের বহন করতে হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই অনুমোদিত মূল্যের চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া এবং লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হকারমুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সদরঘাট টার্মিনালে যাওয়ার রাস্তাটি যানজট এবং হকারদের হাত থেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
ঈদ যাত্রা নিরাপদ, আরামদায়ক এবং আনন্দদায়ক করার জন্য সরকার আরো কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সমন্বয়সাধন প্রতিটি ‘ঘাট’ (টার্মিনাল) এলাকায় নজরদারি দল গঠন এবং প্রতিটি নদী বন্দর, টার্মিনাল এবং ‘ঘাট’ পয়েন্টের জেটি গেট এবং পন্টুনে রোস্টারের ভিত্তিতে দায়িত্ব বন্টন।
ঢাকা নদী বন্দর (সদরঘাট)-এর ওয়াচ টাওয়ার থেকে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন করার জন্য আরো কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর মধ্যে রয়েছে, রাতে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ এবং দিনের বেলায় স্পিডবোট যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরা নিশ্চিত করা এবং ১৫ রমজান থেকে ঈদ পরবর্তী পাঁচ দিন অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাল্কহেড (বালু বহনকারী জাহাজ) চলাচল ও বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা।
ঈদের আগের দিন এবং ঈদ পরবর্তী তিন দিন প্রয়োজনীয় ও পচনশীল পণ্য বহনকারী ট্রাক ব্যতীত সাধারণ ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানের জন্য ফেরি পারাপার বন্ধ থাকবে।
যানজট নিরসনের জন্য সাতটি ফেরি ঘাটে মোট ৪৬টি ফেরি চলাচলের জন্য চালু রাখা হবে এবং সকল নদী বন্দরে যথাযথ যাত্রী সেবা নিশ্চিত করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং হটলাইন চালুর পাশাপাশি জলপথে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা হবে।
ভাসমান নৌ ফায়ার স্টেশনে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স প্রস্তুত রাখা হবে। এছাড়াও, লঞ্চে যাত্রীদের ওঠার সময় বিক্রেতা বা হকারদের কার্যক্রম এবং নদীর মাঝখান থেকে যাত্রী ওঠানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
লঞ্চ বা ফেরিতে কর্মরত কর্মীদের জন্য নির্ধারিত পোশাক এবং পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়েছে। যাত্রীদের জন্য সচেতনতামূলক এবং সতর্কীকরণ বার্তা এবং নৌ বিজ্ঞপ্তি টার্মিনালে প্রচার এবং প্রদর্শন করা হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: