ঢাকা | সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্যানিক অ্যাটাকে ইবি শিক্ষার্থী, যা জানা গেল

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৫ ০৩:১৭

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৫ ০৩:১৭

ইবি প্রতিনিধি:

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী অলিক কুমার সিকদারকে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্যানিক অ্যাটাক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে আইসিটি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। অলিক বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে ইবি মেডিক্যালের ভাষ্য মতে- ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আগে থেকেই প্যানিক এটাকের রোগী ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন।

গত শনিবার (১৭ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেবর্তী ছাত্রাবাসে (হোয়াইট হাউজ মেস) এমন ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীকে ইবি মেডিকেলে নেয়া হয়। এরপর আজ (১৮ মে) পুনরায় তাকে ঝিনাইদহ মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়।

জানা গেছে, ওইদিন সকালে ভুক্তভোগী তার মেসের ‘সিট নিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ আনেন। বর্তমান মেস ম্যানেজার বিষয়টি মীমাংসার জন্য তাকে ডাকা হয়। ওই সময় ভুক্তভোগীর সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ান কয়েকজন শিক্ষার্থী (অধিকাংশ আইসিটি বিভাগের)। পরে ভুক্তভোগী রুমে ফিরে গেলে আবারও প্যানিক এটাক হন। পরবর্তীতে সহপাঠীরা মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ফেরত আনেন। রাতে কিছুটা সুস্থ হলেও পরদিন (১৮ মে) আবারও অবস্থা অবনতি দেখা দেয়। দুপুরের দিকে তাকে ঝিনাইদহ মেডিকেলে নেয়া হয়।

ভুক্তভোগীর রুমমেইট (জয়দেব) জানান, “গতকাল কয়েকজন ভাই অলিক ভাইকে ডেকে নিয়ে যায়। ওখান থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়েন। ওঠে আমার কাছ থেকে পানি খুঁজছিল, পরে পানি দিলাম। ওনি আবার বাথরুমে গেছিল। ভিতরে খারাপ লাগলে মাথায় পানি দিই। পরে প্যানিক অ্যাটাক হওয়ায় কয়েকজনকে ডেকে মেডিকেলে নেয়া হয়। আগে থেকে প্যানিক এটাক রোগী কিনা জানি না। রাতে চিকিৎসা করার পর কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। রাতে কারে যেন কল দিয়ে বলে রাখছিল যে ‘ঝিনাইদহ মেডিকেলে যাবেন।”

এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন বলেন, “সিট নিয়ে কিছুটা তর্কাতর্কি হয়েছিল। ভুক্তভোগী অভিযোগ করছে, তাকে হলে যেতে বাধ্য করেছে আইসিটি বিভাগের একটি সিন্ডিকেট যা আসলে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে বলা। মেডিকেলে গিয়ে সে জানায়, প্রথম বর্ষে র‍্যাগিংয়ের পর থেকেই মাঝে মাঝে প্যানিক অ্যাটাক হতো। বিষয়টি আমরা আগে জানতাম না, ডাক্তারই প্রথম জানায়। ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’ নামের একটি ফেসবুক পেইজে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ঘটনাটি ভাইরাল করা হয়েছে। আমরা ওই পেইজের বিরুদ্ধে মামলা করব। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে।”

ছাত্রাবাসের (মেস) পরিচালক বলেন, “সে (ভুক্তভোগী) সিট নিয়ে বৈষম্য হচ্ছে বলে অভিযোগ করলে তাকে ডেকে সমাধান করার চেষ্টা করছিলাম। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা তর্কাতর্কির সৃষ্টি হয়। তাকে রুমে পাঠিয়ে দিলাম। পরে শুনেছি প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে। মেডিকেলে নেয়া হয়। মেসের সিট নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশে এমনটা প্রচারণা চালাচ্ছে। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুনেছি সে আগে থেকেই প্যানিক অ্যাটাকের রোগী।”

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী বিল্লাল কাজী ফেসবুক স্টাটাসে জানান, “রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হলে না তুলে মেসে তুলে দিয়েছিলাম। এর আগেও ওর নিজ ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ররা ওকে বাজেভাবে র‍্যাগ দিয়েছিলো, আমাকে পরে জানিয়েছে এবং কিছু করতেও নিষেধ করেছিল! এখন আইসিটি বিভাগের ছেলেরা ওকে ধরে কি পরিমাণ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করলে অবস্থা এমন হয়?”

বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ড. মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, “আমি ঝিনাইদহে মেডিকেলে আসছিলাম। কিছুটা সুস্থ। ডাক্তার বলছে রেস্ট নিতে। এখন সে রেস্টে আছে। শুনেছি তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন না করলে এমনি এমনি তো প্যানিক অ্যাটাক হয় না। প্রশাসন বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য আহ্বান করছি।”

ভুক্তভোগীকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার জন্য বারবার কল দেয়ার পরেও বক্তব্য নেওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে পাশে থাকা তার সহপাঠী (সেলিম খান) জানান, “আমার বন্ধুকে ৪-৫ জন মিলে প্রথমে তর্কাতর্কি পরে মারধর করতে আসে। কতটা ট্রমাতে থাকলে প্যানিক অ্যানিক করে! মেডিকেল থেকে এখন এক আত্মীয়ের বাসায় শুয়ে আছে। ডাক্তার বলছে তাই কথা বলতে পারবে না। ক্যাম্পাসে ফিরলে বিস্তারিত বলা হবে।”

এবিষয়ে জানতে চাইলে ইবি মেডিকেলের উপপ্রধান অফিসার ডা. পারভেজ হাসান বলেন, “ওই ছেলেটা এর আগেও ৪/৫ বার আসছিলো। প্যানিক অ্যাটাকের সমস্যাটা আগে থেকেই ছিল। গতরাতে বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম কেউ কিছু করছে কিনা তবে প্রথম দিকে যখন মেডিকেলে আসছিল তখন সে দাবি করছিল যে, প্রথম বর্ষে আসার পর তাকে র‍্যাগ দেয়া হয় এবং এখনও তাকে কেউ কিছু বললে প্যানিকে ভোগে। তাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম।”

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, “বিষয়টা শুনেছি। সার্বিক বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য আমরা প্রক্টরিয়াল বডি আলোচনায় বসবো।”

মো. সামিউল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ,কুষ্টিয়া



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: