odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলাদেশে নির্বাচন সংস্কার নিয়ে বিতর্ক চলমান। FPTP না PR system? সমাধান হতে পারে নিউজিল্যান্ডের MMP নির্বাচন ব্যবস্থা, যা গণতন্ত্রে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।

বাংলাদেশে নির্বাচন সংস্কার বিতর্ক সমাধান মডেল আছে নিউজিল্যান্ডে

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:০৬

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:০৬

বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারের এজেন্ডা সামনে আসার পর থেকে বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে চান আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক PR system, আবার কেউ চান প্রচলিত FPTP পদ্ধতি অপরিবর্তিত থাকুক। ফলে দেশ যেন বিভক্ত দুই মেরুতে। প্রশ্ন হচ্ছে—এর সমাধান কোথায়?

গণতন্ত্রের মান নির্ধারণ হয় জনগণের ভোটের সঠিক প্রতিফলনে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান FPTP পদ্ধতিতে জাতীয় ভোটের অনুপাত সবসময় সংসদে প্রতিফলিত হয় না। এক দল ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে যায়, আবার অন্য দল ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েও হাতে গোনা কয়েকটি আসনেই সীমাবদ্ধ থাকে। এতে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়।

অন্যদিকে অনেকে আশঙ্কা করেন, পূর্ণাঙ্গ PR system চালু হলে সরকার অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। ছোট দলগুলো সংসদে প্রবল প্রভাব ফেলতে শুরু করলে নীতি বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হবে।

এই দুই সমস্যারই সমাধান দেখিয়েছে পৃথিবীর গণতন্ত্রের অন্যতম সূতিকাগার নিউজিল্যান্ড।

নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞতা

১৮৯৩ সালে নিউজিল্যান্ড ছিল বিশ্বের প্রথম দেশ, যেখানে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে। এর মাধ্যমে সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়—তখনকার নিয়ম অনুযায়ী ২১ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিক ভোট দিতে পারতেন। পরবর্তীতে ভোটদানের বয়স কমে ১৯৭৪ সালে দাঁড়ায় ১৮ বছরে।

নিউজিল্যান্ডের সংসদ একক কক্ষবিশিষ্ট হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস, যেখানে সাধারণত ১২০ জন সংসদ সদস্য থাকেন। তবে নির্বাচনী ফলাফলের কারণে আসনসংখ্যা কখনো কখনো বেড়ে যেতে পারে। সেখানে প্রতি তিন বছর অন্তর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

মিক্সড সিস্টেম: FPTP ও PR-এর সেতুবন্ধন

১৯৯৬ সাল থেকে নিউজিল্যান্ড ব্যবহার করছে MMP (Mixed Member Proportional) পদ্ধতি। এটি আসলে PR system-এরই এক মিশ্র রূপ। এখানে ভোটাররা দুটি ভোট দেন—

  1. পার্টি ভোট: সংসদে দলীয় আসন বণ্টন নির্ধারণ করে।
  2. ইলেক্টোরেট ভোট: স্থানীয় এমপি বেছে নেয়।

এভাবে একদিকে স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়, অন্যদিকে জাতীয় ভোটের অনুপাত সংসদে প্রতিফলিত হয়।

বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়

নিউজিল্যান্ডের মডেল দেখিয়েছে—একদিকে ভোটার-নির্বাচিত এমপি থাকছে, আবার অন্যদিকে দলীয় ভোট অনুযায়ী জাতীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হচ্ছে। এতে ছোট দলও সংসদে কণ্ঠস্বর পায়, একই সঙ্গে জনসংযোগ ও জবাবদিহিতা অক্ষুণ্ণ থাকে।

অবশ্য এই ব্যবস্থায় জোট সরকার গঠন প্রায় অনিবার্য হয়ে পড়ে, যার কারণে নীতি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হয়। তবুও অধিকাংশ নাগরিক মনে করেন—এটি FPTP-এর তুলনায় অনেক বেশি ন্যায্য।

অকল্যান্ডে বসবাসরত এক তরুণ বাংলাদেশি ভোটার বলেন, “একটি ভোট দিয়ে আমি আমার এলাকার এমপি বেছে নিই, আরেকটি ভোট দিয়ে দেশব্যাপী আমার মতাদর্শ প্রকাশ করি। এটাই প্রকৃত গণতন্ত্র।”

নিউজিল্যান্ডে পিএইচডি সম্পন্নকারী এক গবেষক মত দেন, “বাংলাদেশে সরাসরি PR system চালু করা কঠিন হতে পারে। তবে নিউজিল্যান্ডের মতো MMP সিস্টেম বাস্তবসম্মত সমাধান হতে পারে। এতে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে, আবার সংসদে স্থানীয় এমপিদেরও উপস্থিতি বজায় থাকবে।”

বিষয়টি আরো পিরস্কার করার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার একটি তুলনামূলক চিত্র দেখানো হলো:

নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে—গণতন্ত্রে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, বরং প্রত্যেক ভোটের মূল্য নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। আর সেই পথে বাংলাদেশের জন্যও নিউজিল্যান্ডের MMP ব্যবস্থা হতে পারে এক অনুকরণীয় মডেল।

-অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান লিটু, উপদেষ্টা সম্পাদক, odhikarpatranews@gmail.com



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: