ঢাকা | Monday, 20th October 2025, ২০th October ২০২৫
মলদোভায় ২৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ, ইউরোপীয় পথে দেশ এগোবে নাকি ফের মস্কোর বলয়ে ফিরবে—সিদ্ধান্ত দেবে জনগণের ভোট।

ভোট বনাম ভ্লাদিমির: মলদোভায় গণতন্ত্রের রণক্ষেত্রে পুতিনের ছায়া

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৩০ September ২০২৫ ২১:১১

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৩০ September ২০২৫ ২১:১১

বিশেষ প্রতিবেদন

তাদের অস্ত্র টাকা, তোমার অস্ত্র ভোট—এই শ্লোগান এখন মলদোভার রাজপথে প্রতিবাদের প্রতীক। ইউরোপের পূর্বপ্রান্তে রোমানিয়া ও ইউক্রেনের মাঝখানে অবস্থিত ছোট্ট দেশটি, যা তিন দশক আগে সোভিয়েতের ছায়া থেকে বেরিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছিল, এখন গণতন্ত্র বনাম ভিনদেশি হস্তক্ষেপের এক জটিল লড়াইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে।

আগামী রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মলদোভায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সংযুক্তির প্রত্যাশা নিয়েও যাত্রা করলেও, রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতি।

নির্বাচনের আগে মলদোভার পুলিশ ও প্রসিকিউটরদের দাবি—রাশিয়া বিপুল অর্থ ঢালছে নির্বাচনী অনিয়ম, ভুয়া প্রচার এবং দাঙ্গার পরিকল্পনায়। ইতোমধ্যেই সার্বিয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বহু যুবককে আটক করা হয়েছে, যাদের শেখানো হয়েছিল সংঘর্ষ সৃষ্টির কৌশল।

সরকারি দল পাস (PAS) স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে: “দেশকে রাশিয়ার হাতে তুলে দিও না।” ইউরোপীয় ইউনিয়নে সংযুক্তির অঙ্গীকারকে কেন্দ্র করে চালানো হচ্ছে প্রচার, যেখানে ইউক্রেনে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরের ছবি ব্যবহার করে ভোটারদের সতর্ক করা হচ্ছে রাশিয়ার বিপদ সম্পর্কে। শুক্রবার রাজধানী চিসিনাউয়ে, ইউরোপীয় পতাকা হাতে PAS-এর সমর্থনে মিছিল করেছেন শত শত মানুষ। তাদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে: “তাদের অস্ত্র টাকা, তোমার অস্ত্র ভোট।”

তবে রাজধানীর বাইরের দৃশ্য ভিন্ন। গ্রামীণ অঞ্চলে জনগণের অগ্রাধিকার নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্যা—ছেঁড়া বই, কম মজুরি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এই হতাশার আবহে অনেকেই নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইগর দোদন, যিনি রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, সরাসরি বলেছেন—জয়ী হলে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোড়া লাগাবেন, গ্যাস আমদানি শুরু করবেন এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করবেন। তার কার্যালয়ের দেয়ালে আজও টাঙানো পুতিনের ছবি। তিনি হুমকি দিয়েছেন, শাসক দল জয় দাবি করলে, তা “কারচুপি” বলে রাস্তায় নামবেন।

মলদোভার পুলিশপ্রধান ভিওরেল সের্নাউৎসেনু একে ইউরোপে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় নির্বাচন হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, রাশিয়া ৩০ কোটির বেশি ডলার বিনিয়োগ করছে, যার অনেকটাই লেনদেন হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে। বিশেষ করে, সহিংসতা তৈরির লক্ষ্যে সার্বিয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শতাধিক ব্যক্তিকে সক্রিয় করার ছক ছিল ভয়াবহ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন শুধু মলদোভার নয়, ইউরোপে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের বড় পরীক্ষা। ফলাফলই ঠিক করবে—দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে, নাকি আবার রুশ বলয়ে ফিরবে।

২৯ সেপ্টেম্বরের ভোট তাই কেবল ব্যালট নয়, এটি হয়ে উঠেছে ন্যায়-অন্যায়ের সীমারেখা। যখন অস্ত্র, অর্থ ও তথ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে আঘাত করা হয়, তখন জবাব আসে সচেতন নাগরিকের ভোটে। শেষ কথা বলে জনগণ—তাদের হাতেই কলম, ব্যালট আর ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।

- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: