
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে মঙ্গলবার রাতে আঘাত হানা ৬.৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৬৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেবু প্রদেশ, যেখানে বুধবার সকালে জরুরি অবস্থা (State of Calamity) ঘোষণা করা হয়। ভূমিকম্পে হাজারো মানুষ রাত কাটিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে, কারণ পুরো এলাকায় একের পর এক আফটারশক বা পরাঘাত অনুভূত হচ্ছিল। বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রাত কাটান। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চারপাশে শিশুদের কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল, সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত। সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে ভিসায়াস দ্বীপপুঞ্জের বোগো শহরে, যা ছিল ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের সবচেয়ে কাছাকাছি। বোগোর রাস্তায় সারি সারি মরদেহের ব্যাগ দেখা গেছে, আহতদের অনেককে খোলা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বোগোর সাতজন নিহত হয়েছেন এমন একটি গ্রামে, যা আগে টাইফুন হাইয়ান (২০১৩ সালে) এর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল। সান রেমিজিও পৌরসভায় এক বাস্কেটবল খেলার সময় ভূমিকম্প আঘাত হানে। অন্তত ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় এবং তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
জাতীয় পুলিশ ও দমকল বাহিনী জানিয়েছে, তারা উদ্ধারকাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে চেষ্টা চলছে। তবে ভাঙা সেতু, ফাটল ধরা সড়ক ও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থার কারণে ত্রাণ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় আবারও ৪.৭ মাত্রার একটি আফটারশক অনুভূত হয়, যা সেবু শহর ও পার্শ্ববর্তী লেইতে দ্বীপেও অনুভূত হয়। সেবুর আর্চবিশপ স্থানীয়দের চার্চে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, কারণ ভবনগুলোর নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায়, একটি প্রাচীন চার্চের টাওয়ার দুলে পড়ে ভেঙে পড়েছে।
ফিলিপাইন প্রশান্ত মহাসাগরের “রিং অব ফায়ার” অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের শিকার হয়। পাশাপাশি দেশটি প্রতি বছর একাধিক টাইফুনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আগেই, মাত্র এক সপ্তাহ আগে, টানা দুটি টাইফুনে ২০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। সম্প্রতি ট্রপিক্যাল স্টর্ম বুয়ালয় ও টাইফুন রাগাসায় শত শত মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং কয়েকজন এখনো নিখোঁজ। কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, সেবুতে মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: