odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Saturday, 25th October 2025, ২৫th October ২০২৫
তথ্য আপডেট শুধু দায়িত্ব নয়, নাগরিকের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি

এনালগ মাথায় ডিজিটাল যুগ: ঢাকা জেলার ওয়েবসাইটে ‘পত্র-পত্রিকা’ আটকে এক যুগ আগে

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৫ October ২০২৫ ১৪:০২

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৫ October ২০২৫ ১৪:০২

বিশেষ কলাম

ডিজিটাল যুগের বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছি, যেখানে মোবাইলের স্ক্রিনেই সবকিছু মুহূর্তে। ব্যাংকের সেবা, স্কুলের রেজিস্ট্রেশন, ট্রাফিকের রেকর্ড—সবই এখন “ক্লিক” দূরত্বে। কিন্তু, হায়! রাজধানীর জেলা প্রশাসনের সরকারি ওয়েবসাইট যেন এখনও টাইম-মেশিনে আটকে আছে।

একটা সময় ছিল, যখন দাদা-দাদি পত্রিকা হাতে নিয়ে বসতেন, খবরের কাগজের কালি চাটিয়ে। এখন তো ডিজিটাল বিশ্বের যুগ—সব তথ্য, সব সেবা, সব নথি হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই প্রগ্রেস কি সবখানেই পৌঁছেছে? না, বন্ধু। ঢাকার জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে ঘুরে দেখলে চোখে পড়ে এক আশ্চর্য কাণ্ড—ডিজিটালাইজেশনের নামে এখনো চলছে এক যুগের পুরনো তথ্যের ‘কালচার ফেস্ট’।

ধরি, এক ভুক্তভোগী—রমেশ—পত্র-পত্রিকা সম্পর্কিত তথ্য পেতে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেন। মন ভরে আশা জ্বালালেন, “ঠিক আছে, সরকার ডিজিটাল, তথ্য তো আপডেটেডই হবে।” কিন্তু হায়! তার চক্ষু মুখে, হাত-মাথা মিলিয়ে বিস্ময়ের ঢেউ এসে পড়লো। “জেলা সম্পর্কিত তথ্য” ট্যাবে ক্লিক করলে “পত্র-পত্রিকা” সাবমেনু, আর সেখানে যে পিডিএফ লিস্ট—শেষ আপডেট ১০/০৬/২০১৪। অর্থাৎ একযুগ আগে। অথচ ওয়েবসাইটের নীচে লেখা আছে: শেষ হাল-নাগাদ: ২০২৫-১০-২৩ ১৬:৫০:২১। তাহলে কোনটি সত্য?

আরও আশ্চর্যজনক—তালিকায় ছয় ধরনের পত্র-পত্রিকা আছে:

  1. দৈনিক (২০১২)
  2. সাপ্তাহিক (২০১২)
  3. মাসিক (২০১২)
  4. পাক্ষিক (২০১২)
  5. দ্বি-মাসিক (২০১২)
  6. ত্রৈমাসিক (২০১২)

সবই ২০১২ সালের! রমেশ ভাবলেন, ওহ, আমি হয়তো টাইম-ট্রাভেল করে ঢাকার জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে ঢুকেছি।” ওয়েবসাইটের এই অবস্থা দেখেই মনে হয়—যে ডিজিটালাইজেশনকে আমরা গর্ব করি, তার অ্যানালগ মাথা এখনও কাজ করছে না।

সত্যি বলতে কি, এটা শুধু তথ্যের দেরি নয়, এক যুগের তথ্যবঞ্চনা। রমেশের মতো ভুক্তভোগীরা তথ্য চাইলে কি করবে? যদি সরকারের ডিজিটাল সেবা যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারে, নাগরিকের কী হবে?

হাস্যকর দিকও আছে। পৃথিবী এগিয়েছে ২০২৫ সালে, রকেট উড়ছে, এআই বিশ্লেষণ করছে, কিন্তু জেলা প্রশাসনের পত্র-পত্রিকা তালিকায় এখনও ২০১২! দৈনিক পত্রিকাও হয়তো চাকরি চাইতে পারবে না, কারণ নামেই দুই যুগ আগের স্ট্যাটাস লেখা।

জেলা প্রশাসন ওয়েবসাইট-এ ব্যাকডেটেড তথ্য: পত্র-পত্রিকার তালিকা 2012 সালের

দায়ী কার? সরাসরি ডিজিটাল সচেতন জেলা প্রশাসন, সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস, যারা দেশের প্রায় ২৫ হাজার সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইট একত্রিত করে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন চালাচ্ছেন। বাতায়ন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে, নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তি ও সরকারি সেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি।

কিন্তু সমস্যা হলো—টাইম-মেশিনে আটকে থাকা তথ্য জমে থাকলে, ডিজিটাল যুগের নাগরিক শুধু হতাশ নয়, হাস্যরসেও ঝাঁকুনি খায়। ওয়েবসাইটের রক্ষণাবেক্ষণকারীরা কি সময়ের সঙ্গে তাল মিলাচ্ছেন? নাকি এক কাপ চা নিয়ে বসে বলছেন, সব ঠিক আছে, তথ্য তো আছে! নাগরিক তথ্য চাইলে হয়তো তারা বলবেন, দাদা, এই তালিকা আর আপডেট করতে হবে না, আমরা ডিজিটাল জাদুকর!

দাদা-দাদির যুগে, খবরের কাগজ হাতে ধরেই চলতো, সেখানে আপডেটের দেরি হয়তো স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এখন? নাগরিক সেবার প্রতিটি ক্লিক ডিজিটাল, প্রতিটি তথ্য মুহূর্তে পৌঁছানো দরকার। এক যুগ আগের তালিকা দিয়ে কি ২০২৫-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব? মনের খাতা বন্ধ হয়ে যায়।

আমাদের দেশ ডিজিটালাইজেশনের পথে হেঁটে যাচ্ছে, কিন্তু সরকারি অফিসে অ্যানালগ মাথা থাকলে নাগরিকের “সেবা পাওয়ার আশা” শুধু কল্পনা হয়ে যায়। রমেশ যেমন হতাশ হলেন, এমন বহু মানুষ হয়তো তথ্য পেতে গিয়ে হতাশার মুখ দেখেছেন।

আমাদের আশা শেষ নয়। ওয়েবসাইটের তথ্য আপডেট করার একটাই পথ—দেখতে হবে অফিসের কর্মীদের প্রেরণা জাগাতে, টাইম মেশিন বন্ধ করতে, এবং নাগরিকের জন্য তথ্যকে বর্তমানের সাথে মিলিয়ে আনতে। না হলে, ডিজিটাল সেবার প্রতিটি ক্লিক শুধু হাসি আর ব্যঙ্গই দেবে।

শেষে বলি—এনালগ মাথায় ডিজিটালাইজেশন চলবে না। ওয়েবসাইটে তথ্য এক যুগ ধরে ফ্রিজে রেখে দিলে নাগরিকের ধৈর্যও ফ্রিজের মতো জমে যাবে। আশা করি, জেলা প্রশাসন এবার দ্রুত তাদের ওয়েবসাইট আপ-টু-ডেট করবেন।একইসাথে এ বিয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে, সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে কোনো দায়সারাগোছের ব্যাক ডেটেড ইনফরমেশন নয়, কেননা এর সাথে দেশের সরকারের ভাবমূর্তি জড়িত।এই ডিজিটাল যুগে এরূপ ব্যাক-ডেটেড থাকলে তথ্য-যোগাযোগ-প্রযুক্তির বৈশ্বিক প্লাটফরমে বাংলাদেশের মান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে, ক্রেডিবিলিটি থাকবে না, ফলে আমরা বাজার হারাতে থাকব। আউটসোসিং বা সফটওয়ার বা আইসিটি সার্ভিসে গ্লোবল পজিশনে পিছনের দিকে যাত্রা অব্যাহত থাকবে, যেন মনে হবে বাংলাদেশে সবাই সরকারি তথ্যের টাইম-মেশিনে আটকে রয়েছে।

এক যুগের পুরনো তালিকা দিয়ে কি ২০২৫-এর নাগরিককে সেবা দেব? না, ধন্যবাদ। আমরা ডিজিটাল যুগে বসে আছি, কিন্তু এনালগ মাথার কারণে যেন এক যুগের টাইম- মেশিনে আটকে আছি।

ডিজিটালাইজেশন কেবল প্রযুক্তি নয়, চেতনা, দায়িত্ব এবং নাগরিকের প্রতি প্রতিশ্রুতি। আশা করি, ঢাকা জেলা প্রশাসন এবার আপডেটবাটন চাপবেননাহলে আমরা এই অনুপস্থিতির হাস্যরসেই সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হব

✍️ অধ্যাপক মাহবুব লিটু, উপদেষ্টা্ সম্পাদক, অধিকারপত্র (odhikarpatranews@gmail.com)

SEO ট্যাগ / কিওয়ার্ড: #ঢাকা জেলা প্রশাসন #সরকারি ওয়েবসাইট আপডেট #ডিজিটালাইজেশন বাংলাদেশ #ব্যাকডেটেড তথ্য #নাগরিক সেবা #বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন #জেলা প্রশাসন ওয়েবসাইট সমস্যা #অনলাইন তথ্য ব্যবস্থা #তথ্যপ্রাপ্তি অধিকার



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: