আন্তর্জাতিক ডেস্ক | অধিকার পত্র
বড়দিন বা ক্রিসমাস বললেই বিশ্বজুড়ে যে জাঁকজমকপূর্ণ পশ্চিমা সংস্কৃতির ছবি ফুটে ওঠে, তার মূলে রয়েছে এক গভীর ফিলিস্তিনি পরিচয়। আল জাজিরার একটি সাম্প্রতিক নিবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে যে, বড়দিনের এই চিরন্তন গল্পটি কোনো দূরবর্তী পশ্চিমা উপকথা নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনের মাটি, ইতিহাস এবং সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ফিলিস্তিন: যিশুর জন্মভূমি
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যিশু খ্রিস্ট বা হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম হয়েছিল ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে এবং তিনি বেড়ে উঠেছিলেন নাসরতে (Nazareth)। বর্তমানের রাজনৈতিক মানচিত্রে এই দুটি এলাকাই অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড। বড়দিনের গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই শহরগুলো আজ ইসরায়েলি চেকপোস্ট, বিচ্ছেদ দেয়াল এবং সামরিক নজরদারিতে বন্দি।
পশ্চিমা মোড়ক বনাম ফিলিস্তিনি বাস্তবতা
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বজুড়ে বড়দিনকে যেভাবে বাণিজ্যিকীকরণ এবং পশ্চিমা রূপ দেওয়া হয়েছে, তাতে যিশুর 'ফিলিস্তিনি' পরিচয়টি আড়ালে পড়ে গেছে। অথচ যিশু নিজেই ছিলেন একজন প্রাচ্যদেশীয় মানুষ, যিনি রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে নিপীড়িত এক জনপদে বাস করতেন। আজ গাজা এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের যন্ত্রণার সাথে যিশুর সময়ের পরিস্থিতির এক অদ্ভুত ঐতিহাসিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
বড়দিনের প্রধান দিকসমূহ:
* ইতিহাসের শেকড়: বড়দিনের প্রতিটি অনুষঙ্গ—বেথলেহেম, যিশুর জন্মস্থান এবং প্রাচ্যের সংস্কৃতি—সবই ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত।
* বর্তমান সংকট: বেথলেহেম আজ ইসরায়েলি বসতি দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা এই পবিত্র শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
* একাত্মতা: নিবন্ধে বলা হয়েছে, যিশুর জন্মের গল্পটি মূলত প্রতিকূলতার মধ্যে আশার গল্প, যা বর্তমানে গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের টিকে থাকার লড়াইয়ের সমার্থক।
নীরব উৎসবের বেদনা
২০২৪ এবং ২০২৫ সালে ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে বড়দিনের উৎসবে কোনো আলোকসজ্জা বা জাঁকজমক ছিল না। গাজায় চলমান গণহত্যা এবং শোকের প্রতি সংহতি জানিয়ে চার্চগুলো কেবল প্রার্থনা ও শোকসভার আয়োজন করেছে। ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরা বলছেন, "যখন আমাদের ভাইয়েরা গাজায় রক্ত ঝরাচ্ছে, তখন আমরা উৎসব করতে পারি না।"
উপসংহার
বড়দিন আসলে একটি ফিলিস্তিনি পরিবারের গল্প, যারা আশ্রয় এবং মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছিল। এই সত্যটি স্বীকার করা কেবল ঐতিহাসিকভাবে সঠিক নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনের বর্তমান মানবিক সংকটের প্রতি বিশ্ববাসীকে সচেতন করার একটি বড় মাধ্যম। বড়দিনকে তার আদি পরিচয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো—ফিলিস্তিনিদের ন্যায়বিচারের দাবিকে সমর্থন করা
সূত্র: আল জাজিরা অনুবাদ ও সম্পাদনা: অধিকার পত্র ডেস্ক

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: