odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Monday, 24th November 2025, ২৪th November ২০২৫
বিমা আইন ২০১০ সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ—নতুন সংকট তৈরি হতে পারে, বলছেন বক্তারা

সংস্কারের জন্য নতুন আইন নয়, প্রয়োজন সঠিক প্রয়োগ: বিমা আইন-২০১০ নিয়ে কড়া সমালোচনা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২২ November ২০২৫ ২১:৩৮

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২২ November ২০২৫ ২১:৩৮

ঢাকা, শনিবার

ঢাকার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বিমা আইন-২০১০ সংশোধনী’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন—বিমা খাতের উন্নয়ন ও সংকট সমাধানের জন্য নতুন আইন সংশোধন নয়, বরং বিদ্যমান বিমা আইন-২০১০ সঠিকভাবে প্রয়োগ করলেই কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সম্ভব

তাদের মতে, বর্তমান আইনে তদন্ত, বিশেষ নিরীক্ষা, প্রশাসক নিয়োগ, তহবিল তছরুপ প্রতিরোধ এবং আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ধারা ইতোমধ্যেই বিদ্যমান। কিন্তু সবচেয়ে বড় সংকট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র সদিচ্ছা ও বাস্তবায়ন ঘাটতি


 “আইন আছে, প্রয়োগ নেই”—বক্তাদের অভিমত

বক্তারা জানান, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে তফসিল–১ বাতিল, কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পূর্ণ ক্ষমতা, শেয়ারহোল্ডারদের সংজ্ঞা পরিবর্তনসহ বেশ কিছু ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। এতে কোম্পানি পরিচালনায় অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তাদের মতে—

  • কোম্পানির সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ায় আদালতে মামলা বাড়বে,
  • সংস্কারের বদলে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে,
  • আইডিআরএ জুলাইয়ের পরিবর্তন পরবর্তীকালে কোনো উল্লেখযোগ্য সংস্কার নিতে পারেনি

 তহবিল তছরুপ, বকেয়া দাবি নিষ্পত্তি—কোথাও অগ্রগতি নেই

বক্তারা অভিযোগ করেন, অনেক লাইফ বিমা কোম্পানিতে তহবিল তছরুপ হলেও আইডিআরএ কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেয়নি।

এছাড়া—

  • গ্রাহকদের বকেয়া দাবি পরিশোধ,
  • অবৈধ কমিশন বন্ধ,
  • দক্ষ জনবল তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কার্যত ব্যর্থ

 “আইডিআরএ নিজেই প্রেষিত কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর”—বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন

বিমা আইন ২০১০ প্রণীত হয় ১৬০টি ধারায়। সংশোধনী প্রস্তাবে এর মধ্যে ৯৯টি ধারা অপরিবর্তিত রেখে বহু উপধারা সংশোধন করা হয়েছে এবং ৬৪টি নতুন বিধান যোগের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বক্তারা প্রশ্ন তোলেন—

“আইডিআরএ প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পরও কেন তারা প্রেষণে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের ওপরই নির্ভরশীল, যাদের অনেকেরই বিমা বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই?”


 মাইক্রোক্রেডিটকে বিমা ব্যবসায় আনার প্রস্তাব সমস্যাজনক

সংশোধনী প্রস্তাবনায় মাইক্রোক্রেডিট প্রতিষ্ঠানকে বিমা ব্যবসায় সুযোগ দেওয়ার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এতে প্রতিযোগিতায় বৈষম্য তৈরি ও বিমা শিল্পে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেন বিশেষজ্ঞরা।


 “যে দেশে বিমা শিল্প উন্নত, সে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ”—মূল প্রবন্ধকার

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা। তিনি বলেন—

  • বিমা শিল্প অনুন্নত হওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব থেকেই সর্বোচ্চ ভূমিকা নিতে হবে,
  • পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ৯০ দিনের দাবি নিষ্পত্তির বিধান অপরিবর্তিত রাখা অযৌক্তিক,
  • উন্নয়নমূলক উদ্যোগ বাদ দিয়ে আইডিআরএ’র ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব বেশি করা হয়েছে,
  • অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে শিল্পে নিবারণমূলক পরিস্থিতি তৈরি হবে।

তিনি আরও জানান—

“২০১০ সালে দেশে লাইফ পলিসি ছিল এক কোটি। এখন তা কমে ৫০ লাখ। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—আইডিআরএ ও নতুন আইনের পর উন্নয়ন কোথায়?”


 সংসদ না থাকায় আইনের ভবিষ্যত অনিশ্চিত

সভায় বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এত বড় সংশোধনী করা হলেও পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সেটি বহাল রাখবে কিনা—তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এতে সংস্কার বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা


শেষ কথা

বিমা শিল্পে সত্যিকারের সংস্কার চাইলে প্রথমে বিদ্যমান আইন কার্যকর নয় কেন—সেটি খতিয়ে দেখা এবং কঠোর প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মত দেন বক্তারা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: