অধিকার পত্র ডটকম | জেরুজালেম পোস্টের বরাতে বিশেষ প্রতিবেদন
জেরুজালেম পোস্টের এক বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর জিম্মি হওয়া থাই শ্রমিকদের মুক্তির বিনিময়ে ইরান থাইল্যান্ডের কাছে একটি গোপন কিন্তু বিস্ফোরক দাবি জানিয়েছিল। এই দাবির মূল লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত হানা।
মূল অভিযোগ ও দাবি:
ইরান থাইল্যান্ডকে প্রস্তাব দেয় যে, তারা হামাসের হাতে বন্দি থাই জিম্মিদের মুক্তি পেতে সাহায্য করবে—কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে। সেই শর্তটি ছিল:
১. ইসরায়েলকে 'অনিরাপদ দেশ' (Unsafe Country) হিসেবে ঘোষণা করা।
২. ইসরায়েলের কৃষিখাতে কর্মরত থাইল্যান্ডের হাজার হাজার শ্রমিককে অবিলম্বে দেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া।
লক্ষ্যবস্তু ইসরায়েলের কৃষিখাত:
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি থাইল্যান্ড এই শর্ত মেনে নিত, তবে ইসরায়েলের জন্য তা এক "বেদনাদায়ক আঘাত" হতো। অক্টোবর ৭ হামলার পরই যখন ইসরায়েলের কৃষিখাত পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে এই পদক্ষেপ সেটিকে কার্যত পঙ্গু করে দিত।
শ্রমিকের সংখ্যা: আনুমানিক ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ থাই শ্রমিক ইসরায়েলের ফার্ম এবং গ্রিনহাউসগুলিতে কাজ করতেন, যাদের একটি বড় অংশ গাজা সীমান্তের কাছের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে কর্মরত ছিলেন।
অর্থনৈতিক প্রভাব: এদের হঠাৎ প্রত্যাহার ইসরায়েলের খাদ্য উৎপাদনে বাধা দিত এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ক্ষতি করত।
কূটনৈতিক তৎপরতা ও ফলাফল:
* হামলার কয়েক সপ্তাহ পর, থাইল্যান্ডের সরকার তাদের ৩৯ জন নিহত এবং ৩১ জন অপহৃত শ্রমিকের জন্য জরুরি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করে
।
* জিম্মি মুক্তির আলোচনা ত্বরান্বিত করতে থাইল্যান্ড নভেম্বর ২০২৩-এ তেহরানে একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে। তারা ইরানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর নেতা মুসা আবু মারজুকের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন বলে জানা যায়।
মুক্তি: প্রথম যুদ্ধবিরতির সময় ২৩ জন থাই জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরের বছর আরও ৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। যদিও হামলায় মোট তিনজন থাই শ্রমিক নিহত হন।
ইরানের দাবি ব্যর্থ: ইরানের এই দাবি থাই শ্রমিকদের ব্যাপকহারে দেশে ফেরাতে ব্যর্থ হয়। যদিও হামলার পর আতঙ্কিত হয়ে কিছু শ্রমিক ফিরে যান, কিন্তু অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা এবং কর্মসংস্থানের কারণে বেশিরভাগ শ্রমিকই ইসরায়েলে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। শেষ পর্যন্ত, ইরান যে লক্ষাধিক শ্রমিক চলে যাওয়ার আশা করেছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি।
* সম্পর্কের স্থিতিশীলতা: মে ২০২৪-এ থাইল্যান্ডের শ্রমমন্ত্রী ইসরায়েল সফরে এসে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর জোর দেন এবং থাই শ্রমিকদের ইসরায়েলে কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে সম্মত হন।
ইরানের এই গোপন তৎপরতা প্রমাণ করে, মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মি সমস্যাকেও কীভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: